E-Paper

‘বহিরাগত’ ভোটার, চর্চায় রতনপুরের জামাইপাড়া

জানা যাচ্ছে, গত দু’দশকে এখানে ভোটার সংখ্যা দ্বিগুণ বেড়েছে। নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী ২০০২ সালে মাত্র ৭৪২ জন ভোটার ছিলেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৭ অগস্ট ২০২৫ ০৯:১৫
—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

ক’দিন আগে খোদ বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী অভিযোগ করেছিলেন, দিঘার রতনপুরে বহিরাগতদের বসবাস বেড়েছে। সেখানে নাকি রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের লোকজনও থাকছেন। তাঁদের সবার নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ যাবে বলেও দাবি করেছিলেন বিরোধী দলনেতা।

সৈকত শহর সংলগ্ন সেই রতনপুরো রোহিঙ্গাদের বসবাস নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্কের মধ্যেই চর্চায় সেখানকার ‘জামাইপাড়া’।

নিউ দিঘা লাগোয়া গ্রাম এই রতনপুর। কনভেনশন সেন্টার থেকে রাষ্ট্রীয় কাজু উদ্যান পর্যন্ত এলাকার পিছনের অংশ জুড়ে রয়েছে গ্রামটি। গ্রামের জামাইপাড়া নিয়ে চর্চা রয়েছে স্থানীয় মহলে। নামেই বোঝা যাচ্ছে, এখানকার পুরুষরা বিবাহ সূত্রে এলাকার বাসিন্দা হয়েছেন। তবে এঁরা সকলেই স্থানীয় জাতিমাটি জুনিয়র স্কুল (পশ্চিম) বুথের ভোটার।

জানা যাচ্ছে, গত দু’দশকে এখানে ভোটার সংখ্যা দ্বিগুণ বেড়েছে। নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী ২০০২ সালে মাত্র ৭৪২ জন ভোটার ছিলেন। আর চলতি বছর জানুয়ারিতে প্রকাশিত তালিকায় ১,৪১৪ জন ভোটারের নাম রয়েছে। এঁদের অনেকেই ‘নতুন মুখ’ বলে বাসিন্দাদের একাংশের দাবি। একটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের পাশেই তৈরি হয়েছে জামাইপাড়া। এখানকার পুরুষরা বৈবাহিক সূত্রে রতনপুরে এলেও তাঁদের আদত বাড়ি কোথায়, কী ভাবেই বা এই এলাকার ভোটার হলেন, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে অনেকেরই।

জামাই পাড়ার লোকজন বিষয়টি নিয়ে সে ভাবে মন্তব্য করতে রাজি হলেন না। কেউ বললেন, খেজুরি থেকে এসেছেন। কারও দাবি, আদতে তাঁরা পূর্ব মেদিনীপুরেরই বাসিন্দা। তবে ২০০২ সালেও ভোটার তালিকায় নাম ছিল না এ রকমও কিছু জন এখানে রয়েছে। আবার বেশ কয়েকজনের এপিক নম্বর বদলেছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সৌদি আরব থেকে এসে এলাকার ভোটার হয়েছেন, এমন নজিরও আছে। অনেকে আবার বেঙ্গালুরু, কেরল থেকে এসেও এখানে ভোটার হয়েছেন।

২০০৮ সাল থেকে রতনপুরের ওই বুথের বুথ লেভেল অফিসার (বিএলও) হিসেবে কাজ করছেন স্থানীয় মাধ্যমিক শিক্ষাকেন্দ্রের শিক্ষক সত্যশঙ্কর আদক। তিনি বলছেন, ‘‘এক সময় এলাকার পুরুষরা ভিন্‌ রাজ্যে বা বিদেশে কাজে গিয়েছিলেন। তাঁদের দেখতে না পেয়ে তখনকার বিএলও ভোটার তালিকা থেকে নাম বাদ দিয়েছিলেন। পরে তাঁরা ফিরে এখানেই উপার্জনের সুযোগ পেয়েছেন। গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে নথিও সংগ্রহ করেছে। তাই নিয়ম মেনে তাঁদের নাম ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।’’ রামনগর ১-এর বিডিও পূজা দেবনাথ বলেন, ‘‘বহিরাগত কেউ এসে ভোটার হয়েছেন, এমন অভিযোগ আমাদের কাছে আসেনি। নিবিড় ভোটার তালিকা সমীক্ষা শুরু না হওয়া পর্যন্ত এ বিষয়ে কিছু বলা সম্ভব নয়।’’

জানা গিয়েছে, জামাই পাড়ার পুরুষরা কেউ টোটো চালান, কেউ অটো, কেউ আবার বর্জ্য সংগ্রহ করেন। তবে এঁদের কেউ অন্য দেশ থেকে এসে এখানে ভোটার হয়েছেন বলে মানতে নারাজ তৃণমূল পরিচালিত পদিমা-১ গ্রাম পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ। পঞ্চায়েত প্রধান অশোক চন্দ বলেন, ‘‘বৈবাহিক সূত্র এবং আত্মীয়তার সূত্রে অনেকে এসে এখানে ভোটার হয়েছেন ঠিকই। কিন্তু রোহিঙ্গা বা অন্য দেশ থেকে এসে ভোটার হওয়ার বিষয়টি একেবারে গুজব।’’ বিজেপি অবশ্য উল্টো অভিযোগই করছে। দলের রাজ্য কমিটির সদস্য তপনকুমার মাইতির দাবি, ‘‘টোটো এবং অটো চালাচ্ছে রোহিঙ্গারা। তাদের অনুমতি দিয়েছেন তৃণমূলের পঞ্চায়েত প্রধান। গোটা দিঘাতেই এখন বহিরাগতদের দাপাদাপি। নিবিড় ভোটার তালিকা সমীক্ষার কাজ শুরু হলেই বোঝা যাবে শুভেন্দু অধিকারী ঠিক বলছেন।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

digha

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy