Advertisement
E-Paper

গুলি চলতেই রাস্তায় বসল আলো

টিমটিম করে জ্বলে আলো। আলো-আঁধারি পথে পুলিশের টহলদারি কখনও কখনও চোখে পড়ে বলে অভিযোগ। খড়্গপুর শহরের এমনই এক আলো-আঁধারি রাস্তায় শুক্রবার রাতে গুলিচালনার ঘটনা ঘটে। তারপরেই টনক নড়ল পুরসভার।

দেবমাল্য বাগচী

শেষ আপডেট: ২০ জুন ২০১৬ ০৬:৫৭
আলো বসেছে। তবে ঘোচেনি আঁধার। মালঞ্চ এলাকায় তোলা ছবি। নিজস্ব চিত্র।

আলো বসেছে। তবে ঘোচেনি আঁধার। মালঞ্চ এলাকায় তোলা ছবি। নিজস্ব চিত্র।

টিমটিম করে জ্বলে আলো। আলো-আঁধারি পথে পুলিশের টহলদারি কখনও কখনও চোখে পড়ে বলে অভিযোগ। খড়্গপুর শহরের এমনই এক আলো-আঁধারি রাস্তায় শুক্রবার রাতে গুলিচালনার ঘটনা ঘটে। তারপরেই টনক নড়ল পুরসভার। তড়িঘড়ি শহরের মালঞ্চর টাটা ব্যাঙ্কের কাছে মিনি মাস্ট আলোকস্তম্ভ বসালেন পুর কর্তৃপক্ষ। কিন্তু শুধু পথবাতি বসিয়ে আদৌ নিরাপত্তা দেওয়া সম্ভব কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন ব্যবসায়ী থেকে শহরের সাধারণ বাসিন্দারা।

গুলিতে জখম সোনার ব্যবসায়ী উত্তম দাস ও কাঠের মিস্ত্রি সুনীল শর্মা কলকাতার হাসপাতালে ভর্তি। রবিবার তাঁদের দেখতে গিয়েছিলেন খড়্গপুরের বিধায়ক, বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তাঁর মতে, ‘‘সারা বাংলার মতোই খড়্গপুরেও আইনশৃঙ্খলা বলে কিছু নেই। শাসক দল ও পুলিশের আশ্রয়ে থেকে মাফিয়ারা সাধারণ মানুষ আর ব্যবসায়ীদের উপর হামলা চালাচ্ছে।’’

মালঞ্চয় গুলিচালনার ঘটনাতেও এখনও কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। শহরের বিভিন্ন রাস্তায় টহলদারি বাড়ানো হবে বলে পুলিশ সূত্রে খবর। ঘটনার দ্রুত তদন্তের জন্য শনিবার রাতে টাউন থানার আইসির সঙ্গে দেখা করেন স্থানীয় বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীরা। উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারাও। ঘটনার অভিযুক্তদের পাকড়াও করতে কয়েকজন দুষ্কৃতীর ছবি স্থানীয়দের দেখানোর জন্য পুরপ্রধান প্রদীপ সরকারের হাতে তুলে দেন আইসি। যদিও ব্যক্তিগত আক্রোশ না কি ছিনতাইয়ের উদ্দেশে দুষ্কৃতীরা গুলি চালায়, তা নিয়ে ধোঁয়াশা কাটেনি।

তদন্ত এগোতে সমস্যা কোথায়? পুলিশের দাবি, ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা কেউ মুখ খুলতে না চাওয়ায় সমস্যা হচ্ছে। গুলিবিদ্ধ দুই ব্যক্তির থেকেও সে ভাবে কোনও সূত্র পাওয়া যায়নি বলে পুলিশ সূত্রে দাবি। শুক্রবার টাটাব্যাঙ্কের কাছে সোনার দোকান বন্ধ করে বাড়ি ফেরার সময় গুলিবিদ্ধ হন সোনার ব্যবসায়ী উত্তম দাস। দুষ্কৃতীরা তাঁকে লক্ষ করে গুলি চালাতে থাকলে গুলিবিদ্ধ হন কাঠমিস্ত্রি সুনীল শর্মা। গুলিবিদ্ধ সুনীলকে খড়্গপুর রেল হাসপাতালে ও উত্তমবাবুকে খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। দু’জনকেই পরে মেদিনীপুর মেডিক্যালে এবং সেখান থেকে কলকাতায় এসএসকেএম হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। তাঁদের দু’জনের শারীরিক অবস্থা বর্তমানে স্থিতিশীল বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে।

স্থানীয়দের একাংশের দাবি, ঘটনার দিন দীর্ঘক্ষণ উত্তমবাবুর বাড়ির সামনে দুষ্কৃতীরা ঘোরাফেরা করে। ঘটনার সময়েও আলো-আঁধারি পথে কাউকে চেনা যায়নি বলে অভিযোগ। মালঞ্চ ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক হৃষিকেন্দু গোপের অভিযোগ, “ঘটনার আগে অনেকেই ওই যুবকদের এলাকায় ঘোরাফেরা করতে দেখেছে। কিন্তু ওখানে আলো না থাকায় চিনতে পারেনি।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘এখন ঘটনার পরে এলাকায় বাতিস্তম্ভ বসছে। দু’দিন আগে এই আলো থাকলে হয়তো দুষ্কৃতীরা এমন ঘটনা ঘটানোর সাহস পেত না।”

গত এক বছরে শহরের মালঞ্চ, খরিদা, ইন্দা, ঝাপেটাপুরে বিভিন্ন রাস্তার মোড়ে ও মাঠে হাই মাস্ট ও মিনি মাস্ট (উঁচু) আলোকস্তম্ভ বসানো হয়েছে। যদিও শহরের বাসিন্দাদের অভিযোগ, প্রধান রাস্তায় জোরালো আলো থাকলে অনেক গলিপথ এখনও আঁধারে ডুবে থাকে। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে অনেক জায়গায় পথবাতি জ্বলে না আবার অনেক রাস্তায় বাতি জ্বলে নাম কা ওয়াস্তে। মালঞ্চর টাটা ব্যাঙ্কের সামনে পথবাতির আলো জ্বলে টিমটিম করে। দিন কয়েক আগেই স্থানীয়রা এলাকায় জোরালো আলো বসানোর দাবি জানিয়েছিলেন। যদিও আলোকস্তম্ভ বসানো হয়নি বলে অভিযোগ। এ নিয়ে পুরপ্রধান প্রদীপ সরকার বলেন, “টাটা ব্যাঙ্ক এলাকার মোড়ে স্থানীয় বাসিন্দারা মিনি মাস্ট বাতিস্তম্ভ বসানোর দাবি করেছিল। আমরা আগেই ওই আলো বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। তবে এমন ঘটনার পরে আমরা আর দেরি না করে বাস্তি স্তম্ভ বসানোর ব্যবস্থা করছি।”

গুলিচালনার ঘটনায় নিরাপত্তার অভাব বোধ করছেন স্থানীয়রা। গৃহবধূ পাপিয়া সেন বলেন, “গলিপথে পুলিশের টহলদারি বাড়ানো উচিত। সেই সঙ্গে শুধু প্রধান রাস্তা নয়, গলিপথেও পুরসভার আলো লাগানোর ব্যবস্থা করা উচিত।” আলোর অভাবে তালবাগিচা হাইস্কুল মাঠ, ইন্দা বয়েজ স্কুল মাঠ, আর্য বিদ্যাপীঠের মাঠও দুষ্কৃতীদের আখড়ায় পরিণত হয়েছে বলে অভিযোগ। প্রেমবাজারের বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত ব্যাঙ্ক ম্যানেজার তপন তরফদার বলেন, “প্রেমবাজারে আলোকস্তম্ভ বসানো হয়েছে। কিন্তু পথবাতিগুলি টিমটিম করে জ্বলে। তবে এলাকায় জোরালো আলো লাগানো প্রয়োজন। পুলিশি টহলও বাড়ানো দরকার।”

এ বিষয়ে পুরপ্রধান প্রদীপ সরকার বলেন, “শহরের সবকটি ময়দানে আলো বসানোর সিদ্ধান্ত আগেই হয়েছে। এ ছাড়াও যেখানে আলোর অভাব রয়েছে সেখানে আলো দেওয়া হবে। তবে এলাকার গলিপথের আলোর জন্য স্থানীয় কাউন্সিলরদের উদ্যোগী হতে হবে। পরবর্তীকালে বোর্ড মিটিংয়ে এই বিষয়ে আলোচনা করা হবে।”

Police Street-light Firing
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy