মৃত বিজেপি কর্মী মিঠুন খামরইয়ের বাড়িতে শুভেন্দু অধিকারী। বুধবার কর্ণগড়ে। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল
মেলা দেখতে গিয়ে আর বাড়ি না ফেরা বিজেপি কর্মী মিঠুন খামরইয়ের দেহ উদ্ধার হয়েছিল মঙ্গলবার সকালে, পশ্চিম মেদিনীপুরের শালবনির কর্ণগড়ে। বুধবার বিকেলে সেই কর্ণগড়ে এসে মৃত কর্মীর পরিজনেদের সঙ্গে দেখা করলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। বিজেপি বিধায়ক শুভেন্দুর দাবি, ষড়যন্ত্র করে তৃণমূলের গুন্ডারাই এই খুন করেছে। গোটা ঘটনার তদন্তে পুলিশ গাফিলতি করছে বলেও নালিশ তাঁর।
শুভেন্দু এ দিন বলেন, ‘‘ওঁর (মিঠুনের) মাতৃদেবী ২০১৮ সালে পঞ্চায়েত ভোটে বিজেপির প্রার্থী ছিলেন। ওঁর বাবা এখানে বিজেপির অন্যতম সংগঠক। মিঠুনও বুথের সম্পাদক ছিল। এই মৃত্যুর পিছনে রাজনীতিই রয়েছে।’’ তাঁর দাবি, ‘‘এই এলাকায় তৃণমূলের গুন্ডামি ২০১৯ সালে লোকসভা ভোটে হারার পর থেকেই শুরু হয়। একুশের ভোটের পরে এই এলাকায় ৩৫- ৪০টি বাড়ি ভাঙচুর হয়। মিঠুনকে ঘরছাড়া করা হয়। মিঠুনের রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। সবাই জানে। বিজেপি করত, তাই এই হত্যা। এই খুন তৃণমূলের গুন্ডারা করেছে।’’
পুলিশকে নিশানা করে শুভেন্দুর আরও দাবি, ‘‘মঙ্গলবার সকালে দেহ উদ্ধার হয়েছে। বুধবার বিকেল হয়ে গেল। এখনও কোনও গ্রেফতার হয়নি। বাড়ির লোকেদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়নি। ঘটনাস্থলে পুলিশ কুকুর আনা হয়নি। পুলিশের এ সব করা উচিত ছিল তদন্তের স্বার্থে। পুলিশ এটাকে অস্বাভাবিক মৃত্যু হিসেবেই দেখছে। এটা যে রাজনৈতিক হত্যা, এর পিছনে যে ষড়যন্ত্র রয়েছে এবং শাসক দলের গুন্ডারা রয়েছে, এটা পুলিশ সামনে আনতে চায় না।’’ পুলিশ আধিকারিকদের নাম করেই তিনি বলেন, ‘‘মমতা পুলিশের চরিত্র সব জায়গায় সমান। এখানে ধৃতিমান যা করছে, কলকাতায় বিনীত গোয়েলও তাই করছে। ডিজি রাজীব কুমারও তাই করছে। মডেল একই। দু’টো কাজ এদের। মালকড়ি তোলা এবং তোলার বড় অংশ ভাইপোর কাছে পৌঁছে দেওয়া।’’ যুব বিজেপির এসপি অফিস অভিযানের দিন পুলিশের অতি সক্রিয়তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন শুভেন্দু। তাঁর কথায়, ‘‘এখানে পুলিশ অতি সক্রিয়। বিজেপি কর্মীদের কেস দাও। আটকে রাখো। তাদের উপর দমনপীড়ন করো। এই কাজ।’’
মৃত কর্মীর পরিজনেদের সঙ্গে দেখা করে বেশ কিছুক্ষণ কথা বলেন শুভেন্দু। পরে তিনিবলেন, ‘‘ওঁর ছবিতে ফুল দিয়েছি। দল পাশে রয়েছে, পরিবারকে জানিয়েছি। অর্থ দিয়ে মৃত্যুর ক্ষতিপূরণ হয় না। প্রাথমিকভাবে পরিবারকে কিছু সাহায্য করা হয়েছে। পরে আরও সাহায্য করা হবে।’’ মিঠুনের বাবা রাম খামরইয়েরও বক্তব্য, ‘‘পুলিশে ভরসা রাখতে পারছি না। গতকাল থানায় গিয়েছিলাম। দেখলাম পুলিশের তেমন গা নেই।’’ বিরোধী দলনেতা ৮ দিন অপেক্ষা করে কোর্টে যেতে বলেছেন বলেও জানান তিনি।
তৃণমূলের মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি সুজয় হাজরার অবশ্য দাবি, ‘‘এই যুবকের মৃত্যুর ঘটনার সঙ্গে রাজনীতির কোনও যোগ নেই। বিজেপি বিষয়টি নিয়ে নোংরা রাজনীতি করছে।’’ জেলা পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘অভিযোগের প্রেক্ষিতে মামলা রুজু হয়েছে। তদন্তে সবদিকই খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’ পুলিশ সূত্রে আরও খবর, কর্ণগড়ের ওই যুবকের দেহের ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট মিলেছে। রিপোর্ট থেকে তদন্তকারীর কাছে এটা স্পষ্ট হয়েছে যে, উপর থেকে নীচে পড়ে গিয়ে মাথায় আঘাত লেগেই ওই যুবকের মৃত্যু হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy