E-Paper

শিক্ষকরা অনুষ্ঠানে, অনুমতি ছাড়াই স্কুলের সময় বদল

সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, সকাল ১০টা ৪৫ থেকে বিকেল ৪টে পর্যন্ত প্রাথমিক স্কুলে পঠনপাঠন হবে।

নিজস্ব সংবাদাতা

শেষ আপডেট: ২২ নভেম্বর ২০২৩ ০৯:১৪
বন্ধ রয়েছে স্কুল। নিজস্ব চিত্র 

বন্ধ রয়েছে স্কুল। নিজস্ব চিত্র 

রয়েছে শাসকদলের শিক্ষক সংগঠনের বিজয়া সম্মিলনীর অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠান শেষে হবে পাত পেড়ে খাওয়াদাওয়া। অভিযোগ, সেই জন্য অনুমতি ছাড়াই বদলে গিয়েছে স্কুলের সময়সূচি। নির্ধারিত সময়ের বদলে সকালে স্কুল করে দরজায় তালা মেরে অনুষ্ঠানে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে কাঁথির চারটি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার একাধিক স্কুলের শিক্ষকদের বিরুদ্ধে।

মঙ্গলবার কাঁথি-৩ ব্লকের গোপালপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়, নীলপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়, মারিশদা মক্তব বোর্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়, বাঘা মহাকালী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মতো বেশ কয়েকটি স্কুল বন্ধ ছিল। দুপুর ১টা নাগাদ ওইসব স্কুলে গিয়ে দেখা যায়, দরজায় তালা ঝুলছে। নীলপুর গ্রামের এক স্থানীয় বাসিন্দা রিঙ্কু কাণ্ডার বললেন, ‘‘স্কুল তো ভোরেই হয়ে গিয়েছে। শিক্ষকেরা কোথায় মিটিংয়ে যাবেন বলে শুনেছিলাম।’’

ব্যাপারটা ঠিক কী?

খোঁজ নিতেই জানা গেল আসল বিষয়। মঙ্গলবার তৃণমূল প্রভাবিত প্রাথমিক শিক্ষক সংগঠনের উদ্যোগে বিজয়া সম্মিলীর আয়োজন করা হয়েছিল ভাজাচাউলি গ্রাম পঞ্চায়েতের কার্যালয়ে। মুখ্য অতিথি ছিলেন তৃণমূল পরিচালিত স্থানীয় পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি বিকাশ বেজ। সেখানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়েছে। অনুষ্ঠানের শেষে শিক্ষক শিক্ষিকা এবং আমন্ত্রিতদের খাসি মাংস সহযোগে ভুরিভোজ ছিল। আর সেখানেই অধিকাংশ শিক্ষক- শিক্ষিকা সেখানেই হাজির ছিলেন এ দিন। স্থানীয় সূত্রের খবর, কাঁথি-৩ ব্লকে মোট দুটি চক্র রয়েছে। এর মধ্যে কাঁথি-৩ চক্রে ৬৯টি প্রাইমারি স্কুল রয়েছে। যার মধ্যে বেশিরভাগ প্রাথমিক বিদ্যালয় এ দিন সকাল ১০টা নাগাদ ছুটি হয়ে গিয়েছিল এই কারণেই।

সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, সকাল ১০টা ৪৫ থেকে বিকেল ৪টে পর্যন্ত প্রাথমিক স্কুলে পঠনপাঠন হবে। কোনও স্কুল সরকার নির্ধারিত সময়ের আগে বা পরে ক্লাস নিতে চাইলে প্রধান শিক্ষককে সংশ্লিষ্ট চক্রের স্কুল পরিদর্শকের কাছে লিখিতভাবে আবেদন জানাতে হবে। তিনি সিদ্ধান্ত নিতে না পারলে বিষয়টি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদকে জানাতে হবে। যদিও অভিযোগ, এদিন কানাইদিঘি, ভাজাচাউলি, কুমিরদা এবং লাউদা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার অধিকাংশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সেই নিয়ম মানা হয়নি। আগাম নোটিস ছাড়াই ক্লাস হয়েছে বলে অভিযোগ অভিভাবকদের একাংশের।

ব্লকের তৃণমূল সমর্থিত শিক্ষক সংগঠনের নেতা তথা মারিশদা মক্তব প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক দীপক মণ্ডল বলছেন, ‘‘দলের শিক্ষক সংগঠনের ব্যানারে বিজয়া সম্মিলনী ছিল। সে জন্য সাত সকালে সকলকে আগেভাগে জানিয়ে এদিন সব স্কুলে ক্লাস হয়েছে। তারপরেই অনুষ্ঠানে এসেছি। সম্মিলিতভাবে অনুষ্ঠানে যাওয়ার জন্য আগে পঠন-পাঠন করাতে চেয়ে স্কুল পরিদর্শকের কাছে লিখিত আবেদন জানিয়েছি।’’

কিন্তু অনুমতি কি শিক্ষা দফতর দিয়েছিল?

শিক্ষক সংগঠনের ওই নেতার দাবি, ‘‘এটা সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। তবে,আমরা আবেদন পত্র রিসিভ করিয়েছি।’’ সংশ্লিষ্ট চক্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত স্কুল পরিদর্শক সুরজিৎ টুডু বলছেন, ‘‘এমন কোনও আবেদন জানানো হয়েছে, কি না তা জানা নেই। তবে কোনও স্কুলকেই এভাবে ক্লাস নেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়নি।’’

শাসকদলকে এ দিন এক সুরে আক্রমণ করেছে বিজেপি ও বামেরা। স্থানীয় পঞ্চায়েত সমিতির বিরোধী দলনেতা রাজশেখর মণ্ডল বলছেন, ‘‘নমো নমো করে ক্লাস নিয়ে মহোৎসব খেতে গিয়েছেন তৃণমূলের শিক্ষকেরা।’’ সিপিএম নেতা ঝাড়েশ্বর বেরা বলছেন, ‘‘ইচ্ছে খুশি মতো কাজ করছে। এটা অত্যন্ত লজ্জাজনক ঘটনা।’’ যদিও সংগঠনের শিক্ষকদের পাশে দাঁড়িয়ে স্থানীয় পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি বিকাশ বেজ বলছেন, ‘‘অভিযোগ করাটাই বিরোধীদের একমাত্র কাজ।’’

যেসব স্কুলের শিক্ষকদের বিরুদ্ধে নিয়ম লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে, তাঁদের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করা হবে? পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমানের জবাব, ‘‘এ ধরনের আবেদন পত্র আমার কাছে আসেনি। অনুমতি পাওয়ার আগে বিশেষ ক্লাস করানো যায় না। আমি জেলার বাহিরে রয়েছি। কী ঘটেছে খোঁজখবর নিয়ে দেখছি।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

marishda

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy