Advertisement
E-Paper

সচেতনতাই কমাবে মৃত্যু

এ ক্ষেত্রে আমরা মূলত যে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছি, তা হল, জ্বরের পরেও রোগীরা অনেক দেরিতে সরকারি হাসপাতালে আসছেন। এমনকী সাত-দশদিন জ্বর হওয়া রোগীও আমরা পাচ্ছি।

শুভঙ্কর গায়েন

শেষ আপডেট: ২৬ জুলাই ২০১৭ ০৯:৩০
প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

ম্যালেরিয়ার কারণ প্লাসমোডিয়াম নামক পরজীবী আদ্যপ্রাণি। মশার মাধ্যমেই একজন ম্যালেরিয়া আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে আর এক জন সুস্থ ব্যক্তির শরীরে এই রোগটি ছড়ায়। তাই ম্যালেরিয়া আক্রান্ত ব্যক্তিকে দ্রুত খুঁজে বের করাটা খুবই জরুরি। এবং তারপর যেটা প্রয়োজন তা হল দ্রুত চিকিৎসা শুরু। এ জন্য জেলা জুড়েই সরকারি প্রাথমিক চিকিৎসা কেন্দ্র এবং গ্রামস্তরে স্বাস্থ্যকর্মীরা অত্যন্ত দায়িত্বের সঙ্গে কাজ করে চলেছেন। ফলে, আমরা বিভিন্ন এলাকার ম্যােলরিয়া রোগীকে শনাক্ত করতে পারছি। এই ম্যালেরিয়া আক্রান্ত রোগীর মধ্যে যাঁদের অবস্থা সঙ্কটজনক, গ্রামীণ হাসপাতালে যাঁদের সারিয়ে তোলা সম্ভব নয়, তাঁদের ‘রেফার’ করা হচ্ছে ঝাড়গ্রাম জেলা ও সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে। এই হাসপাতালে ক্রিটিকাল কেয়ার ইউনিট (সিসিইউ)-এ বহু রোগীকে ডায়ালিসিস দিতে হয়। অথবা ভেন্টিলেটরে রেখে চিকিৎসার প্রয়োজন পড়ে।

এ ক্ষেত্রে আমরা মূলত যে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছি, তা হল, জ্বরের পরেও রোগীরা অনেক দেরিতে সরকারি হাসপাতালে আসছেন। এমনকী সাত-দশদিন জ্বর হওয়া রোগীও আমরা পাচ্ছি। শুধু ঝাড়গ্রাম নয়, লাগোয়া ঝাড়খণ্ড থেকেও রোগীরা আসছেন। সচেতনতার অভাবে হাতুড়ের কাছে গিয়ে ভুল চিকিৎসা পাচ্ছেন রোগীরা। ফলে, ম্যালেরিয়া আক্রান্ত রোগীর অবস্থা সঙ্কটজনক হয়ে পড়ছে। দেরিতে হাসপাতালে আসা রোগীদের কিডনি অকেজো, জ্ঞান না থাকা, খিঁচুনি, রক্তচাপ কমে যাওয়া, শকে চলে যাওয়ার মতো উপসর্গ দেখা যায়। এঁদের মধ্যে বেশিরভাগকেই আমরা সুস্থ করে তুলতে পারছি। কিন্তু আপ্রাণ চেষ্টা করেও প্রাণসংশয় ঠেকানো যায়নি। মানুষ সচেতন হলে এই মৃত্যুহার কমানো সম্ভব।

ম্যালেরিয়া থেকে বাঁচতে

বাড়িতে বা বাড়ির বাইরে পরিষ্কার জল জমতে দেবেন না

পরিত্যক্ত টায়ার, পরিত্যক্ত পাত্রে বৃষ্টির জল জমতে দেবেন না

রাতে মশারি টাঙিয়ে শোবেন

জ্বর হলেই সঙ্গে সঙ্গে রক্ত পরীক্ষা করান

রোগ নির্ণয়ে দেরি হলে রোগ জটিল হবে

নিরীহ প্লাসমোডিয়াম ভাইভাক্সও প্রাণঘাতী হতে পারে

ওষুধ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবেন না।

চিকিৎসকের লিখে দেওয়া ওষুধই শুধু খাবেন

ওষুধের পুরো ডোজ শেষ করবেন, মাঝপথে বন্ধ করবেন না

ঝাড়গ্রামের মতো এলাকায় স্বাস্থ্য দফতর থেকে ম্যালেরিয়া নিবারণে মেডিকেটেড মশারি (লং লাস্টিং ইনসেক্টিসাইড ইমপ্রেগনেটেড নেট) ব্যবহারের উপর জোর দেওয়া হচ্ছে। জেলায় ৩০ হাজার মশারি বিলি করা হয়েছে। কিন্তু দুঃখের সঙ্গে লক্ষ্য করছি, জনসাধারণ ওই মশারি ব্যবহার করছেন না। এই সময়ে যখন ম্যালেরিয়া রোগীর সংখ্যা বাড়ছে, স্বাস্থ্যবিভাগ থেকে সাধারণ মানুষকে মেডিকেটেড মশারি ব্যবহারের গুরুত্ব বোঝাতে বিশেষ পদক্ষেপ করা হচ্ছে।

ঝাড়গ্রামে শহর এলাকা আড়ে-বহরে বাড়ছে। সেই সঙ্গে ম্যালেরিয়া রোগীর সংখ্যাও শহরে বাড়ছে। মশা জমা জলে বংশবিস্তার করে। তাই কোথাও জল যাতে না জমে, সে ব্যাপারে পুরসভার সঙ্গে জনসাধারণকেও সচেতন হতে হবে। আশা করি, সচেতনতার জোরেই অদূর ভবিষ্যতে নবগঠিত ঝাড়গ্রাম জেলায় ম্যালেরিয়ার প্রকোপ কমবে।

(লেখক ঝাড়গ্রাম জেলা হাসপাতালে সিসিইউয়ের চিকিৎসক)

Malaria Plasmodium Parasite ম্যালেরিয়া ঝাড়গ্রাম
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy