Advertisement
E-Paper

শিল্পীর ছোঁয়ায় নব কলেবরে মহিষাদলের রথ

হলদিয়ার সুতাহাটার প্রতিবন্ধী চিত্রশিল্পী বিধান রায়ের হাতেই এ বার নতুন করে সেজে উঠছে রথ। রথের বেশি দেরি নেই। চোদ্দোজন তরুন শিল্পীকে নিয়ে দিনরাত কাজ করছেন শিল্পী। মহিষাদল রাজবাড়ি সূত্রে জানা গিয়েছে, এক সময় ফ্রান্সের, চিনের শিল্পীরা রাজদরবারে আতিথ্য নিয়ে রথ সংস্কারের কাজ করেছেন। এই রথযাত্রা দেখতে রাজ্যের নানা প্রান্ত থেকে মানুষ আসেন। প্রতি বছর রথের আগে নাম কা ওয়াস্তে রঙের পোঁচ পড়লেও পূর্ণাঙ্গ সংস্কারের দাবি বহুদিনের।

আরিফ ইকবাল খান

শেষ আপডেট: ১৫ জুন ২০১৭ ১৯:০০
ব্যস্ত: চলছে রথের মূর্তি তৈরির কাজ। নিজস্ব চিত্র

ব্যস্ত: চলছে রথের মূর্তি তৈরির কাজ। নিজস্ব চিত্র

নতুন করে সংস্ক‌ার হয়ে রথযাত্রায় পথে নামবে মহিষাদলের ঐতিহ্যবাহী রথ। দীর্ঘদিন এই রথের সংস্কার হয়নি। এ বার পরিবহণ মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী এ বিষয়ে উদ্যোগী হন। রথের সংস্কারে তিনি ২৮ লক্ষ টাকার সংস্থানও করেছেন বলে মহিষাদল পঞ্চায়েত সমিতির সহ সভাপতি ও রথ সংস্কার কমিটির সম্পাদক তিলক চক্রবর্তী জানিয়েছেন।

হলদিয়ার সুতাহাটার প্রতিবন্ধী চিত্রশিল্পী বিধান রায়ের হাতেই এ বার নতুন করে সেজে উঠছে রথ। রথের বেশি দেরি নেই। চোদ্দোজন তরুন শিল্পীকে নিয়ে দিনরাত কাজ করছেন শিল্পী। মহিষাদল রাজবাড়ি সূত্রে জানা গিয়েছে, এক সময় ফ্রান্সের, চিনের শিল্পীরা রাজদরবারে আতিথ্য নিয়ে রথ সংস্কারের কাজ করেছেন। এই রথযাত্রা দেখতে রাজ্যের নানা প্রান্ত থেকে মানুষ আসেন। প্রতি বছর রথের আগে নাম কা ওয়াস্তে রঙের পোঁচ পড়লেও পূর্ণাঙ্গ সংস্কারের দাবি বহুদিনের।

শিল্পী বিধান রায় বলেন, ‘‘এই রথের গরিমা ও গৌরবের কথা কারও অজানা নয়। সেই ঐতিহ্যের কথা মাথায় রেখেই বিভিন্ন কাঠের মূর্তি ও রথের গায়ে ছবি আঁকা হচ্ছে।’’

রাজবাড়ির দুই সদস্য-সহ মহিষাদলের বিশিষ্টজনদের নিয়েই রথ সংস্কার কমিটি গড়া হয়েছে। কমিটি সূত্রে জানা গিয়েছে, সাড়ে ১৭ লক্ষ টাকা দিয়ে শাল ও সেগুন কাঠ আনা হয়েছে। শিল্পী সমীরণ জানার নেতৃত্বে কুড়িজন শিল্পী দিনরাত কাজ করছেন। বদলে ফেলা হচ্ছে রথের দশটি চাকা। বদলানো হচ্ছে ডুরি। রথের মধ্যে থাকা দেবদেবীর মূর্তিও নতুন করে তৈরি হচ্ছে। বদলে দেওয়া হচ্ছে ঘোড়া। তবে মূল নকশাকে অবিকৃত রেখে চলছে সংস্কার।

রাজবাড়ি সূত্রে খবর, ১৭৭৬ সালে রানি জানকীনাথ এই রথযাত্রার সূচনা করেন। যদিও অন্য মতে ১৮০৪ সালে মতিলাল উপাধ্যায় এই রথযাত্রার সূচনা করেন। তবে মত যাই হোক, ইতিহাসের সরণি বেয়ে নানা বিবর্তন হয়েছে এই রথে। ১৭ চূড়ার এই রথ তৈরিতে ৬০ হাজার সিক্কা খরচ হয়েছিল। ১৮০৭ সালে মহিষাদলের রাজা লছমনপ্রসাদ গর্গের আমন্ত্রণে রথ দেখতে আসেন ফ্রান্সের বিখ্যাত ভাস্কর মঁসিয়ে পেরু। তিনি জানান, ১৭ চূড়ার এই রথে ভারসাম্যর অভাব রয়েছে। তাঁর পরামর্শেই চূড়ার সংখ্যা ১৭ থেকে কমিয়ে ১৩ করা হয়। বাদ যাওয়া চারটি চূড়ার জায়গায় চারটি ঘোড়া বসানো হয়। সেই ঘোড়া আজও রথের শোভা বাড়াচ্ছে।

রথ সংস্কারের সঙ্গে সঙ্গে জগন্নাথের মাসির বাড়ি গুণ্ডিচাবাটিতেও সংস্কার পর্ব চলছে। এ ক্ষেত্রে স্থানীয় মানুষই চাঁদা তুলে টাকার সংস্থান করেছেন। সহযোগিতা করছে মহিষাদল পঞ্চায়েত সমিতি। সংস্কার হচ্ছে রাজবাড়ির ঐতিহ্যবাহী গোপালজিউর মন্দির। মন্দিরের প্রবেশদ্বারে থাকা প্রাচীন চৈনিক ঘণ্টার সংস্কার করা হবে বলে রাজবাড়ি সূত্রে জানানো হয়েছে।

আবেগ আর ঐতিহ্যকে সঙ্গে নিয়ে রথের আগেই তাই উৎসবের মেজাজ মহিষাদলে। মহিষাদলের বাসিন্দা ও লেখক অধ্যাপক হরিপদ মাইতি বলেন, ‘‘এই রথের পরতে পরতে ইতিহাস মিশে রয়েছে। তাই রথের সংস্কার নিঃসন্দেহে ভাল উদ্যোগ।’’

chariot মহিষাদল mahishadal
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy