Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
Festival

নির্বাক অঞ্জলির আড়ালেই মনের মানুষের খোঁজ ‘শ্রুতি’তে

শ্রবণ প্রতিবন্ধী স্কুল সরস্বতী পুজোর দিন কার্যত মিলন মেলা হয়ে ওঠে। সেই সঙ্গে মনের মানুষ খোঁজার পালাও চলে।

পুজোর আনন্দের প্রকাশ এ ভাবেই। বুধবার। নিজস্ব চিত্র

পুজোর আনন্দের প্রকাশ এ ভাবেই। বুধবার। নিজস্ব চিত্র

আরিফ ইকবাল খান
হলদিয়া শেষ আপডেট: ৩০ জানুয়ারি ২০২০ ০১:০৫
Share: Save:

নির্বাক অঞ্জলিতে মিশে থাকে আবেগঘন ইশারা আর অঙ্গভঙ্গি। ওঁরা এভাবেই অঞ্জলি দেন বাগদেবীর কাছে। দেশের যেখানেই কর্মসূত্রে থাকুন না কেন, বছরের এই কয়েক দিন ওঁদের ঠিকানা হলদিয়ার ঘোষের মোড়ের শ্রুতি স্কুল। কারণ এখানেই শৈশব কেটেছে ওঁদের। এখানেই তাঁরা বাঁচার নতুন অর্থ খুঁজে পেয়েছেন।

শ্রবণ প্রতিবন্ধী স্কুল সরস্বতী পুজোর দিন কার্যত মিলন মেলা হয়ে ওঠে। সেই সঙ্গে মনের মানুষ খোঁজার পালাও চলে। একই সঙ্গে পড়েছেন এখানে কিন্তু কর্মসূত্রে বাইরে থাকেন। পুজার দিন ওঁরা সবাই ঘরে ফেরেন। এই স্কুলঅ ওঁদের ঘর। যাঁরা আসতে পারেন না তাঁদের ভরসা স্মার্ট ফোন। সেখানেই ভিডিও কলিংয়ের মধ্যে দিয়ে চলে স্মৃতি চারণা। ভাষাহীন অঞ্জলি দেওয়া থেকে ভোগ রান্না করা সবেতেই থাকে তাঁদের সক্রিয় অংশগ্রহণ। হলদিয়ার সরকার পোষিত এই স্কুলে পড়ুয়ায় সংখ্যা শতাধিক। কিন্তু পুজোর কদিন কয়েকশো ছেলে মেয়ে হাজির হন। এঁদের জন্য বিশেষ ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। পুজোয় পাত পেড়ে খিচুড়ি আর তার সঙ্গে নিখাদ আড্ডা। আর সেই আড্ডায় চলে মন দেওয়া নেওয়ার পালাও। কেউ কেউ এখান থেকেই খুঁজে নেন মনের সঙ্গী। চলে নতুন করে চিনে নেওয়ার পালা।

এ বার দু’দিনের পুজো। তাই উচ্ছ্বলতাও যেমন বেশি। বুধবার ‘শ্রুতি’তে গিয়ে দেখা গেল বিভিন জায়গা থেকে এসেছেন প্রাক্তনীরা। সেখানে যেমন কাঁথি থেকে শ্রবণ প্রতিবন্ধী স্বামীকে নিয়ে হাজির মিনু দাস। তেমনই বাড় বাসুদেবপুর থেকে এসেছেন মীরা দাস। বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে স্বামীর অকাল মৃত্যুর পর মন মরা থাকতেন মীরা। নিজের ভাষায় কথা বলার লোকের অভাব। সেই অভাব পুরণের জন্য চলে এসেছেন নিজের পুরনো স্কুলে। দ্বারিবেড়িয়ার ইন্দ্রাণী হাজরা, দুর্গাচকের প্রতীক দাস কিংবা ভবানীপুরের চম্পা বেরা, কুকড়াহাটির বিরাজ দোলইয়ের মতো পৌঁছে গিয়েছেন অনেকেই। এঁদের সঙ্গে আড্ডায় যোগ দিয়েছিলেন অভিভাবক ঝুমা পাঠক ও দশমতি মাহাতো ও মধুমিতা ঝাঁজ। ঝুমার ছেলে প্রান্তিক শ্রবণ প্রতিবন্ধী এই স্কুলের ছাত্র। মহিষাদলের ঝুমা পাটের গয়না তৈরিতে পারদর্শী। ছেলের স্কুলের সরস্বতীর গায়েও তাঁর তৈরি গয়নার সাজ। অভিভাবকদের কেউ কেউ হাত লাগিয়েছেন খিচুড়ি রান্নায়।

স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা ও বিদ্যালয়ের হস্টেল সুপার পান্নালাল দাস বলেন, ‘‘ওঁদের জন্য এই দিনটির দিকে তাকিয়ে থাকি। প্রতিকূল পরিবেশের জন্য অনেকেই আসতে পারেনি। তবে ভিডিও কলে ইশারায় সেই স্বাদ মিটিয়ে নিচ্ছে। নির্বাক রি ইউনিয়নে না থাকার বেদনাও রয়েছে অনেকের।’’ স্কুলের অঙ্কন শিক্ষক বিশ্বজিৎ মণ্ডলের কথায়, ‘‘বিভিন্ন জায়গা থেকে ওরা পুজোর দিনে চলে আসে। নিজেরাই আলপনা এঁকে পুজোর আয়োজনে ঝাঁপিয়ে পড়ে।’’ স্কুলের ইনচার্জ জয়দেব দাস জানান, স্কুলের অনেকেই প্যারা অলিম্পিকে পদক পেয়েছেন। এ দিন তাঁরা চলে আসেন স্কুলে।

কেমন লাগছে পুজোয় এসে?

মিনু দাস, প্রতীক দাস, চম্পা বেরা বলেন, ‘‘আমাদের কাছে এই দিনটা স্বপ্নের মতো। মনের কথা আদান প্রদানের এর চেয়ে ভাল জায়গা আর কোথায় পাব বলুন?’’ মনের আদান প্রদান হয় বলেই প্রতীক দাস আর বর্ণালি, কাজলিরা নিজেদের খুঁজে পান। আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারি দুই শ্রবণ প্রতিবন্ধীর বিয়েও হবে এখানেই।

স্কুলের এক শিক্ষকের কথায়, ‘‘বাঙালির নির্বাক ভ্যালেন্টাইন দিবস কেউ দেখতে চাইলে তাঁকে সরস্বতী পুজায় ‘শ্রুতি’তে আসতেই হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Festival Saraswati Puja
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE