কেশপুর কলেজ
দিন কয়েক আগের ঘটনা। তৃণমূল ছাত্র পরিষদের (টিএমসিপি) কয়েকজন ছেলে হঠাৎ ঢুকে পড়েছিল কেশপুর কলেজের অধ্যক্ষের ঘরে। টেবিল চাপড়ে অধ্যক্ষের দিকে আঙুল উঁচিয়ে তাদেরই একজন বলে উঠেছিল, ‘চেকে সই করবেন না মানে? এটা কি মামাবাড়ি! কলেজের প্রতিষ্ঠা দিবসে একটু বেশি খরচ হবে না! এক-দু’দিনের মধ্যে সব বিল ক্লিয়ার করতে হবে।’ ধমক খেয়ে পরদিনই চেকে সই করে দেন অধ্যক্ষ।
সম্প্রতি কেশপুর কলেজের প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে একদিনের এক দিনের অনুষ্ঠানে প্রায় তিন লক্ষ টাকা খরচ নিয়ে শোরগোল পড়ে গিয়েছে। সাধারণত কলেজের প্রতিষ্ঠা দিবস কলেজ কর্তৃপক্ষই উদ্যাপন করেন। কিন্তু এ ক্ষেত্রে তা হয়নি। গত ২৩ মার্চ প্রতিষ্ঠা দিবসের গোটা অনুষ্ঠানই আয়োজন করেছিল টিএমসিপি পরিচালিত ছাত্র সংসদ। তারপর খরচ বাবদ মোটা অঙ্কের বিল পাশ করাতে ছাত্র সংসদের তরফে কলেজ কর্তৃপক্ষকে জোরাজুরি করা হয়েছে বলে অভিযোগ। কলেজের এক সূত্রে খবর, বিশাল অঙ্কের বিল নিয়ে ছাত্র সংসদের ছেলেদের সঙ্গে বিস্তর কথা কাটাকাটি হয়েছে অধ্যক্ষের। সমস্যা যে হয়েছে তা মানছেন কেশপুর কলেজের অধ্যক্ষ দীপক ভুঁইয়াও। তাঁর কথায়, “কয়েকটি ক্ষেত্রে খরচ বেশি হয়েছে বলে মনে হয়েছিল। কিছু জিজ্ঞাসা ছিল। ছাত্র সংসদের ছেলেদের কাছে তাই জানতে চেয়েছিলাম। পরে সমস্যা মিটে গিয়েছে।”
ছাত্র সংসদের দাবি, প্রতিষ্ঠা দিবসের অনুষ্ঠানে খরচ হয়েছে প্রায় ৩ লক্ষ ২০ হাজার টাকা। কলেজ এখনও পর্যন্ত কয়েক ধাপে প্রায় ২ লক্ষ ৮৮ হাজার টাকা দিয়েছে। তবে প্রতিষ্ঠা দিবসের অনুষ্ঠানে নামী কোনও শিল্পী আসেননি। স্থানীয় শিল্পীরাই অনুষ্ঠান করেছেন। যদিও সংসদের দাবি, এক শিল্পীই নিয়েছেন ৭২ হাজার টাকা। আর ওই দিনকলেজে ২,২০০ জনের খাওয়াদাওয়ার আয়োজন করতে হয়েছিল। মাথাপিছু খাবারের জন্য খরচ হয়েছে ৫০ টাকা করে। টিএমসিপি পরিচালিত ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক শেখ সানাউল্লার কথায়, “ওই দিন অনেক অনুষ্ঠান হয়েছে। কোন খাতে কত খরচ হয়েছে, সবই কলেজকে জানানো হয়েছে।”
তবে এই সব বিল যথাযথ নয় বলেই অনেকের সন্দেহ। কলেজের এক শিক্ষকের কথায়, “বিলে প্রচুর গরমিল রয়েছে বলে আমাদের ধারণা। এ নিয়ে তদন্ত হওয়া উচিত।”
বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছে বিরোধী ছাত্র সংগঠনও। তাদের ব্যাখ্যা, বাড়তি টাকা নিজেদের পকেটে ঢোকাতেই বিলে কারসাজি করা হয়েছে। এসএফআইয়ের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সভাপতি সৌমিত্র ঘোড়ইয়ের কথায়, “এখন তো কেশপুর কলেজে টাকা খরচ হয় না, টাকা ওড়ে।”
আজ, সোমবার কলেজের পরিচালন সমিতির বৈঠক রয়েছে। সেখানেও প্রতিষ্ঠা দিবসে বিপুল খরচের প্রসঙ্গ উঠতে পারে বলে খবর। কলেজ পরিচালন সমিতির সভানেত্রী তথা কেশপুরের বিধায়ক শিউলি সাহা বলেন, “ওই খরচ নিয়ে মন্তব্য করব না। কলেজের দায়িত্বে আমি নতুন এসেছি। বেশি খরচ হয়ে থাকলে তার দায়িত্ব আগের পরিচালন সমিতিকে নিতে হবে। অধ্যক্ষকেও নিতে হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy