Advertisement
E-Paper

বিরবাহার বাম-স্বর! অস্বস্তিতে তৃণমূল

গত সোমবার নেতাইয়ে সভা করেন বিজেপি বিধায়ক শুভেন্দু। বুধবার তার পাল্টা তৃণমূলের সভায় শুভেন্দুকে আক্রমণ করতে গিয়েই বিরবাহা ওই মন্তব্য করে বসেন।

রঞ্জন পাল

শেষ আপডেট: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৯:০২
বিরবাহার মা, ঝাড়খণ্ড পার্টির (নরেন) প্রার্থী চুনিবালা হাঁসদা ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটে বামেদের সমর্থনে ভোটে লড়েন। ফাইল চিত্র

বিরবাহার মা, ঝাড়খণ্ড পার্টির (নরেন) প্রার্থী চুনিবালা হাঁসদা ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটে বামেদের সমর্থনে ভোটে লড়েন। ফাইল চিত্র

শুভেন্দুর অধিকারীর পাল্টা সভা। ফলে সেই মঞ্চ থেকে আগাগোড়া তাঁকেই নিশানা করবেন তৃণমূলের নেতা-নেত্রীরা, এটাই স্বাভাবিক। তবে নেতাইয়ের মাটিতে বুধবারের সেই সভা থেকে রাজ্যের মন্ত্রী বিরবাহা হাঁসদার মন্তব্য তৃণমূলকে খানিক অস্বস্তিতেই ফেলেছে।

নেতাইয়ের সভায় রাজ্যের বন প্রতিমন্ত্রী বিরবাহা বলেছেন, ‘‘শুভেন্দু অধিকারী ও ভারতী ঘোষ মিলে নিরীহ মানুষগুলোকে মাওবাদী কেস দিয়েছেন।’’ শুভেন্দু ও ভারতী দু’জনেই এখন বিজেপিতে। ফলে, শাসকদলের নেত্রীর নিশানা স্পষ্ট। কিন্তু বিরবাহা যে সময়ের কথা বলেছেন, তখন কিন্তু শুভেন্দু তৃণমূলের দাপুটে নেতা। আর ভারতী পশ্চিম মেদিনীপুরের সেই এসপি যিনি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে জঙ্গলমহলের মা বলতেন। আর এঁদের নিশানা করতে গিয়ে বিরবাহা যে অভিযোগটা করেছেন, তা বরাবর বামেদের অভিযোগ। সেই অতীত মনে করিয়ে দিয়ে সিপিএমের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সম্পাদক সুশান্ত ঘোষ বলছেন, ‘‘আমরা তো প্রথম থেকেই বলছি মাওবাদীদের সঙ্গে নিয়ে তৃণমূল রাজ্যে ক্ষমতা দখলের জন্য জঙ্গলমহলে নানা ব্লু প্রিন্ট করেছিল। তা একে একে প্রকাশ্যে আসছে। তৃণমূলের ওই মন্ত্রীর কথাতেও তার ইঙ্গিত আছে। জঙ্গলমহলের মানুষ জানেন কারা পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র করে তাঁদের রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছিল।’’

গত সোমবার নেতাইয়ে সভা করেন বিজেপি বিধায়ক শুভেন্দু। বুধবার তার পাল্টা তৃণমূলের সভায় শুভেন্দুকে আক্রমণ করতে গিয়েই বিরবাহা ওই মন্তব্য করে বসেন। বলেন, ‘আপনি (শুভেন্দু) কোথায় ছিলেন এতদিন? মিথ্যা মামলা দিয়েছেন। ওই ভারতী ঘোষ এখন বিজেপির নেত্রী হয়ে গিয়েছেন। তখন এসপি ছিলেন। এসপি আর আপনি (শুভেন্দু) মিলে নিরীহ মানুষগুলোকে এত কেস দিয়েছেন। সবাই ভুলে গেলেও বিরবাহা হাঁসদা ভুলে যায়নি।’’ বিরবাহা নিজেও তখন তৃণমূলের ত্রিসীমানায় ছিলেন না। তাঁর বাবার (নরেন হাঁসদা) প্রতিষ্ঠিত ঝাড়খণ্ড পার্টি (নরেন) করতেন। সেই দলের প্রার্থী হয়ে পুরসভা, বিধানসভা ও লোকসভা তিন ভোটেই একবার করে হেরেছিলেন। আরও উল্লেখ্য, বিরবাহার মা ঝাড়খণ্ড পার্টির নেত্রী চুনিবালা হাঁসদা কিন্তু ২০১৬ সালে বামেদের সমর্থনেই বিধানসভায় লড়েছিলেন। ঝাড়খণ্ড পার্টির কিছু লোকজনও সেই সময় মাওবাদী মামলায় গ্রেফতার হয়েছিলেন। তৃণমূলের এক নেতা বলছেন, ‘‘তৃণমূলের লোকজন মাওবাদী কেসে গ্রেফতার হয়নি। যাঁরা তৃণমূল ছেড়ে অন্য দলে যেতে চেয়েছিলেন তাঁদের ভারতী ঘোষ মাওবাদী কেস দিয়েছেন। বাকি সিপিএম ও ঝাড়খণ্ড পার্টির উপর আঘাত এসেছিল।’’

ফলে, এখন তৃণমূলের মন্ত্রীর বিরবাহার এমন মন্তব্যে আলোড়ন পড়েছে। সিপিএমের ঝাড়গ্রাম জেলা সম্পাদক প্রদীপকুমার সরকার বলছেন, ‘‘যেখানে আমাদের সংগঠন শক্তিশালী ছিল, সেখানে শুভেন্দুর নির্দেশে ভারতী ঘোষ মাওবাদী মামলা দিয়ে পার্টির উপর আঘাত এনেছিলেন। লালগড়, গড়বেতা সর্বত্র তাই করেছিল। অনেকের বাড়িতে বন্দুক ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছিল। সেই সময় ভারতী ঘোষ ও শুভেন্দু অধিকারী মিলেই এ কাজ করেছিলেন।’’

তাহলে কি সে কথাই বলতে চাইলেন বিরবাহা?

রাজ্যের বন প্রতিমন্ত্রীর অবশ্য ব্যাখ্যা, ‘‘আমি বলতে চেয়েছি, বাম বিরোধী যে সব মানুষজন আন্দোলন করেছেন তাঁদের মাওবাদী কেস দেওয়া হয়েছে। এলাকার মানুষকে হেনস্থা করে উনি (শুভেন্দু) নিজের আধিপত্য বিস্তারের জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম করে এ সব করে গিয়েছেন।’’

এ প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে অধুনা বিজেপি নেত্রী ভারতী ঘোষ বলেন, ‘‘যিনি (বিরবাহা) মিথ্যা বলায় অভ্যস্ত, তিনি সবমসয় মিথ্যা কথাই বলেন। কেসগুলো দেখে বের করে বলুন তো। যে মন্ত্রীকে তাঁর নিজের সম্প্রদায়ের সংগঠনের লোকেরা বাড়িতে ঘেরাও করে তাঁর কোনও লজ্জা নেই।’’ বিজেপির ঝাড়গ্রাম জেলা সহ-সভাপতি দেবাশিস কুণ্ডুর কটাক্ষ, ‘‘বিরবাহা নিজেই আগাগোড়া তৃণমূলে ছিলেন না। নিজের স্বার্থে দলবদল করেছেন। কখন কী বলছেন কূল কিনারা খুঁজে পাচ্ছেন না।’’

Birbaha Hansda Suvendu Adhikari Jhargram
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy