Advertisement
E-Paper

প্রার্থী বদল, কোন্দল কাঁটা ভাবাচ্ছে শাসক দলকে

দুই চিত্র। প্রার্থী বদলে এক দিকে যখন জয়ের আশা দেখছে বামেরা, তখনই বিদায়ী বিধায়ক টিকিট না পাওয়ায় কোন্দল কাঁটা ভাবাচ্ছে শাসকদলকে।গতবার প্রার্থী বদলে ডেবরা হাতছাড়া হয়েছিল বামেদের। এ বার অবশ্য পাঁচ বারের বিধায়ক শেখ জাহাঙ্গির করিমের উপর আস্থা রেখেছে সিপিএম।

দেবমাল্য বাগচী

শেষ আপডেট: ১১ মার্চ ২০১৬ ০১:৪৩

দুই চিত্র। প্রার্থী বদলে এক দিকে যখন জয়ের আশা দেখছে বামেরা, তখনই বিদায়ী বিধায়ক টিকিট না পাওয়ায় কোন্দল কাঁটা ভাবাচ্ছে শাসকদলকে।

গতবার প্রার্থী বদলে ডেবরা হাতছাড়া হয়েছিল বামেদের। এ বার অবশ্য পাঁচ বারের বিধায়ক শেখ জাহাঙ্গির করিমের উপর আস্থা রেখেছে সিপিএম। শাসকদলের ছবিটা অবশ্য আলাদা। ডেবরার বিদায়ী বিধায়ক রাধাকান্ত মাইতিকে এ বার প্রার্থী করেনি তৃণমূল। পরিবর্তে ওই কেন্দ্রে সেলিমা খাতুন (বিবি)-কে টিকিট দিয়েছে দল। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, প্রার্থী বদেলর পর ডেবরায় তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের ঝাঁঝ আরও বেড়েছে। এক তৃণমূল নেতার কথায়, ‘‘কোন্দল সামলে ডেবরায় প্রচার শুরু করাটাই এখন চ্যালেঞ্জ।’’

২০০৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল প্রার্থী মৃগেন মাইতিকে হারান জাহাঙ্গির করিম। ওই বার বামেরা পেয়েছিল প্রায় ৫৬ শতাংশ ভোট। তৃণমূল প্রায় ৩৮ শতাংশ ভোট পেয়েছিল। ২০১১ সালের বিধানসভা ভোটে জাহাঙ্গির করিমের পরিবর্তে সোহরাব হুসেনকে প্রার্থী করে বামেরা। সোহরাবকে ৮৮১৩ ভোটে হারান তৃণমূল প্রার্থী রাধাকান্ত মাইতি। ওই বার কংগ্রেস-তৃণমূল জোট হয়েছিল। জোট পেয়েছিল প্রায় ৫০ শতাংশ ভোট। বামেদের দখলে ছিল প্রায় ৪৫ শতাংশ ভোট। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে ঘাটালের অন্তর্গত ডেবরা বিধানসভা কেন্দ্রে নিকটতম বাম প্রতিদ্বন্দ্বির থেকে ২০৮৩০ ভোটে এগিয়ে ছিল তৃণমূল। শতাংশের হিসেবে তৃণমূল পেয়েছিল ৪৬ শতাংশ ভোট। বাম প্রার্থী প্রায় ৩৫ শতাংশ ও কংগ্রেস প্রার্থী প্রায় ৭ শতাংশ ভোট পেয়েছিলেন। সিপিএমের দাবি, গত পাঁচ বছরে পরিস্থিতি অনেক বদলেছে। এই পাঁচ বছরে সন্ত্রাস, মিথ্যা মামলা, ভোট লুঠ মেনে নেয়নি মানুষ। এ বার ভোটে তার ফল পাওয়া যাবে বলে মনে করছেন সিপিএম নেতৃত্ব।

বিদায়ী বিধায়ক রাধাকান্তবাবুকে টিকিট না দেওয়ায় গোষ্ঠীকোন্দল নিয়ে চিন্তা বেড়েছে শাসকদলের। দলীয় সূত্রে খবর, রাধাকান্তবাবুর বিরোধী গোষ্ঠীর নেতা হিসেবে পরিচিত অলোক আচার্যও এ বার ডেবরায় ভোটে লড়ার দাবিদার ছিলেন। যদিও তাঁর ভাগ্যেও শিঁকে ছেঁড়েনি। রাধাকান্তবাবু ও অলোকবাবুর অনুগামীরা ভোটে অন্তর্ঘাত চালাতে পারে, এমন আশঙ্কা দলে রয়েছে বলে তৃণমূলের এক সূত্রে খবর। অলোকবাবুর দাবি, ‘‘জেলা নেতৃত্ব আমাকে বললেই আমি প্রচারের ময়দানে নামব। তবে রাধাকান্ত মাইতি ও ব্লক সভাপতি রতন দে দলের সংগঠনকে পিছিয়ে দিচ্ছেন।’’ তাঁর আরও দাবি, ‘বিগত দিনে জাহাঙ্গির করিম ব্লকে যে কাজ করেছেন তা রাধাকান্ত মাইতি করেননি। ভোট দেওযার সময় মানুষ তো এ সব বিচার করবেই।’’

ব্লকের যুব তৃণমূল কর্মীরা ডেবরায় প্রচার শুরু করেছেন। দলের সকলে কোমর বেঁধে না নামলে প্রচারে ঝড় তোলাও অসম্ভব বলে মনে করছেন, দলের এক নেতা। দলের এক নেতাই বলছেন, দলের সকলে সামনা এগিয়ে না আসায় প্রচারে সমস্যা তো হচ্ছেই। ব্লক নেতা তথা যুব তৃণমূলের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ করের কথায়, “ব্লকের অনেকেই আসলে ভোটে টিকিট পাওয়ার আশা করেছিলেন। কিন্তু দল সেলিমা খাতুনকে প্রার্থী করায় রাধাকান্ত মাইতিদের মতো কেউ কেউ আশাহত হয়ে প্রচারে নামেননি।’’ তিনি আরও বলছেন, ‘‘আমরা দলনেত্রীর সিদ্ধান্তের পক্ষে রয়েছি। তাই প্রার্থীর হয়ে প্রচার চালাচ্ছি। এ বার সিপিএমের সঙ্গে লড়াই হবে।” দলে কোন্দলের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে ব্লক সভাপতি রতনবাবুও বলছেন, ‘‘প্রার্থীর প্রতি কারও ক্ষোভ নেই। ব্লকের নেতাদের প্রতি কারও কারও ক্ষোভ থাকতে পারে। তবে ভোটের আগে সব মিটে যাবে।’’

জাহাঙ্গীর করিমের জয় নিয়ে আশাবাদী বাম নেতৃত্ব। বালিচকের এক সিপিএম কর্মীর কথায়, ‘‘বিগত বিধানসভা ভোটে জাহাঙ্গির করিমকে বাদ দিয়ে নতুন মুখকে প্রার্থী করাই দলের ভুল ছিল। সেই থেকে শিক্ষা নিয়েই ফের জাহাঙ্গির করিমকে দল ফিরিয়ে এনেছে। ফলে, কঠিন লড়াইয়ের মুখে পড়বে তৃণমূল।” রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, ডেবরার মোট ভোটদাতাদের ৩০ শতাংশ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের। এই ভোট বাম ও তৃণমূলের মধ্যে ভাগ হবে। যদিও বাম নেতৃত্বের দাবি, সংখ্যালঘু ভোটের অধিকাংশই জাহাঙ্গির করিমের পক্ষে যাবে। ডেবরায় কংগ্রেস প্রার্থী না দেওয়ায় তাদের ভোটও বাম প্রার্থীর পক্ষেই যাবে বলে আশাবাদী বাম নেতৃত্ব।

সিপিএমের ডেবরা জোনাল সম্পাদক প্রাণকৃষ্ণ মণ্ডল বলেন, “কংসাবতী নদীর ওপারের ভরতপুর, ভবানীপুর, মলিঘাটি, সত্যপুরে কী হবে, তা নিয়ে একটু চিন্তা রয়েছে। তবে জাহাঙ্গির করিম বিধায়ক থাকাকালীন এলাকায় যে উন্নয়ন হয়েছে তা মানুষ মনে রেখেছে। এ সব বিচার করেই দল ফের জাহাঙ্গির করিমের উপর আস্থা রেখেছে। মানুষও সেই সিদ্ধান্তের মর্যাদা দেবে বলে আশা করছি।”

ডেবরার তৃণমূল প্রার্থী সেলিমা খাতুন (বিবি)-র কথায়, “বাংলার মানুষ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের করা উন্নয়ন দেখেছেন। সেই উন্নয়নের জোয়ারে আমার জয় নিশ্চিত।’’ দলে কোন্দল প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য, ‘‘দলের সকলে আমার সঙ্গে রয়েছে। আর যাঁরা ক্ষুব্ধ বলে মনে হচ্ছে তাঁরা দলের কেউ নয়।” নিজের জয়ের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী সিপিএম প্রার্থী জাহাঙ্গির করিম বলছেন, “দল আমার প্রতি আস্থা রেখেছে। জয় আসবেই। বিগত দিনে আমার কাজের নমুনা দেখেই মানুষ ভোট দেবে।”

debra tmc party clash
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy