পুরপ্রধান হওয়ার পর সমর্থকদের সঙ্গে নির্মল ঘোষ। —নিজস্ব চিত্র।
দীর্ঘ জল্পনার অবসান। অবশেষে রামজীবনপুর পুরসভা দখল করল তৃণমূলই।
ত্রিশঙ্কু এই পুরসভা তৃণমূলর দখল করবে তা একপ্রকার নিশ্চিতই ছিল। তবে বৃহস্পতিবার শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত পুরপ্রধানের নাম নিয়ে গোপনীয়তা বজায় থাকল। তৃণমূলের এক সূত্রে খবর, বিদায়ী পুরপ্রধান শিবরাম দাস ও কাউন্সিলর নির্মল চৌধুরীর মধ্যে কাকে পুরপ্রধান করা হবে, তা নিয়ে যথেষ্ট বেগ পেতে হয় দলীয় নেতৃত্বকে। তাই প্রথম থেকেই সতর্ক ছিল দল। এ দিন রামজীবনপুরে যান রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, তৃণমূলের জেলা সভাপতি দীনেন রায়, প্রদ্যোৎ ঘোষ, আশিস চক্রবর্তী, শঙ্কর দোলই, শ্যাম পাত্র প্রমুখ। এ দিন পুরবোর্ড গঠনের মাত্র দশ মিনিট আগে দলীয় কার্যালয়ে শাসক দলের ছ’জন কাউন্সিলরের হাতে মুখবন্ধ খাম তুলে দেন মন্ত্রী। খাম খোলার পরই জানা যায়, নির্মল চৌধুরীকে পুরপ্রধান করা হয়েছে। দলনেতা হিসেবে বিদায়ী পুরপ্রধান শিবরাম দাসের নাম ঘোষণা করা হয়। শপথ গ্রহণ শেষে সাংবাদিক বৈঠকে উপ-পুরপ্রধান হিসেবে শিউলি সিংহের নাম ঘোষণা করা হয়।
এ দিন নবনির্বাচিত কাউন্সিলরদের শপথ বাক্য পাঠ করান ঘাটালের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট জ্যোতিন্দ্রবিমল কর। পুরপ্রধান হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন নির্মল ঘোষ। এ দিন ১১টি আসন বিশিষ্ট পুরসভার কাউন্সিলরদের মধ্যে অনুষ্ঠানে ১০ জন উপস্থিত ছিলেন। গত সোমবার রাতে দুর্নীতির পুরনো একটি মামলায় বিজেপি কাউন্সিলর গোবিন্দ মুখোপাধ্যায়কে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। তিনি এখন পুলিশি হেফাজতে রয়েছেন।
রামজীবনপুর পুরসভায় পুরভোটে কোনও দলই নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। তৃণমূল পাঁচটি ও বিজেপি দু’টি আসন পায়। বিরোধীদের মহাজোটের প্রার্থীরা চারটি আসনে জয়ী হয়। প্রথমে ঠিক ছিল, বিজেপির জয়ী কাউন্সিলরদের সমর্থনে মহাজোটই পুরবোর্ড গঠন করবে। পরে অবশ্য হিসেব বদলে যায়। কলকাতায় সাংবাদিক বৈঠক করে বিজেপির রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ মহাজোটের চার কাউন্সিলরের সমর্থনে বিজেপির পুরবোর্ড গঠন করার কথা ঘোষণা করেন। যদিও তারপরেও কাটেনি পুর-জট। পরে মহাজোটের কাউন্সিলর শিউলি সিংহ তৃণমূলে যোগ দেন। মহাজোটের অপর দুই কাউন্সিলর মানসী চৌধুরী ও রিঙ্কু নিয়োগী তৃণমূলকে সমর্থন করার কথা জানান। ফলে তৃণমূলের পুরবোর্ড গঠন একপ্রকার নিশ্চিতই হয়ে যায়। এ দিন সকাল থেকেই রামজীবনপুরে প্রচুর পুলিশ মোতায়েন করা হয়। উপস্থিত ছিলেন জেলা পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলের এক জেলা নেতার দাবি, ‘‘কলকাতা থেকে ঘনঘন মন্ত্রীর কাছে ফোন আসছিল। খোদ দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও রামজীবনপুরের পরিস্থিতি জানতে চান। বোর্ড গঠনের পর চারপাশের গম্ভীর পরিবেশ খানিকটা হাল্কা হয়।’’ এ দিন সদ্য তৃণমূলে যোগ দেওয়া শিউলি সিংহকে দলনেত্রী হিসাবে ঘোষণা করেন নির্দল কাউন্সিলর জয়দেব ধাড়া। তাঁকে সমর্থন করেন অপর নির্দল কাউন্সিলর মানসী চৌধুরী। যদিও শিউলিদেবী দলনেত্রী হতে অস্বীকার করায় ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট এই প্রস্তাব খারিজ
করে দেন।
শপথ গ্রহণ পর্ব শেষে এক সাংবাদিক বৈঠকে ফিরহাদ হাকিম উপ-পুরপ্রধান হিসেবে শিউলি সিংহের নাম ঘোষণা করেন। পুরমন্ত্রী বলেন, ‘‘উন্নয়নের স্বার্থে শিউলিদেবী আমাদের দলে যোগ দেওয়ায় ভাল লাগছে।’’ পুরসভায় বাকি বিরোধী দলের কাউন্সিলরদেরও তৃণমূলে যোগ দেওয়ার আর্জি জানান তিনি। নাম না করে বিজেপি নিয়ে তাঁর কটাক্ষ, ‘‘কলকাতায় বসে সাংবাদিক বৈঠকে অনেক কিছুই বলা যায়। বাস্তব বড় কঠিন। কেউ কেউ খেলার আগেই বলে জিতে গিয়েছি। তবে কেউ যদি মাঠে নেমে খেলে জেতে-তার অনুভূতিই আলাদা।’’ তাঁর দাবি, ‘‘আমরা মাঠে নেমে খেলে
জয়ী হয়েছি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy