Advertisement
১৭ মে ২০২৪

জোড়া বন্‌ধ, চোরাস্রোত, পথে তৃণমূল, নেই বিজেপি

বিজেপির ডাকা ১২ ঘণ্টার বন্‌ধকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার রক্তও ঝরল সেখানে। তবে বন্‌ধ বিরোধিতায় শাসক দল পথে নামলেও সমর্থনে সেভাবে দেখা গেল না গেরুয়া শিবিরকে।

আহত: গোলমালে এক তৃণমূল কর্মী হাসপাতালে। —নিজস্ব চিত্র।

আহত: গোলমালে এক তৃণমূল কর্মী হাসপাতালে। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কেশিয়াড়ি শেষ আপডেট: ২৩ জানুয়ারি ২০১৯ ০০:৪১
Share: Save:

যুদ্ধক্ষেত্রের নাম কেশিয়াড়ি। বিজেপির ডাকা ১২ ঘণ্টার বন্‌ধকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার রক্তও ঝরল সেখানে। তবে বন্‌ধ বিরোধিতায় শাসক দল পথে নামলেও সমর্থনে সেভাবে দেখা গেল না গেরুয়া শিবিরকে।

পঞ্চায়েত সমিতির বোর্ড গঠন স্থগিতের বিরোধিতায় বন্‌ধের ডাক দিয়েছিল বিজেপি। জনজীবন স্বাভাবিক রাখতে সক্রিয় ছিল প্রশাসন। জায়গায় জায়গায় পুলিশ বাহিনী। জলকামান। সকাল হতে পথে দেখা গেল তৃণমূলকে। শাসক দলের তরফে কয়েকটি দোকান খোলানো হয়। হয়েছে বন্‌ধ বিরোধী মিছিলও। তবে কেশিয়াড়ি বাজার-সহ কয়েকটি এলাকায় সেভাবে দেখা যায়নি বিজেপিকে। কোনও মিছিল বা পিকেটিং করেনি। বিজেপির দু’টি দলীয় কার্যালয় বন্ধ ছিল।

সার্বিক ভাবে বিজেপি পথে না নামলেও বন্‌ধকে কেন্দ্র করে গোলমাল এড়ানো যায়নি। এ দিন কেশিয়াড়ির বাজার এলাকায় বন্‌ধ বিরোধী মিছিলে যোগ দিয়েছিলেন পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী। তৃণমূলের অভিযোগ, ভসরা থেকে সেই মিছিলে যোগ দিতে আসার সময় তাদের কর্মী, সমর্থকদের উপর হামলা চালিয়েছে বিজেপি। অভিযোগ, টাঙি, বল্লম ও লাঠির আঘাতে আহত হয়েছেন ছয়জন। তাঁদের মধ্যে শিবপ্রসাদ সেনাপতি, দিলীপ সেনাপতি, কমল ঘোষ নামে তিন তৃণমূল সমর্থককে প্রথমে কেশিয়াড়ি গ্রামীণ হাসপাতাল পরে সেখান থেকে মেদিনীপুর মেডিক্যালে স্থানান্তরিত করানো হয়। শুভেন্দু বলেন, ‘‘ভসরাতে অতর্কিতে আক্রমণ করতে পারে এটা আমাদের জানা ছিল না। জানা থাকলে যে ভাষায় উত্তর দেওয়ার দরকার ছিল সে উত্তর আমরা দিয়ে দিতাম।’’ পুলিশকে নির্দেশ দিয়ে বলেন, ‘‘আমি আপনাদের বলে যাচ্ছি মঙ্গলবার সন্ধ্যার মধ্যে দুষ্কৃতীদের গ্রেফতার করতে হবে।’’ আগামী ২৫ জানুয়ারি ভসরাতে প্রতিবাদ সমাবেশে তিনি উপস্থিত থাকবেন বলেও জানান।

একতরফা: কেশিয়াড়িতে মিছিলের নেতৃত্বে শুভেন্দু অধিকারী

পাল্টা মারধরের অভিযোগ তুলেছে বিজেপি। তাদের অভিযোগ, বাইকে করে কয়েকজন সমর্থক কেশিয়াড়ি আসার সময় তাদের মারধর করেছে তৃণমূল। এমনকি, শুভেন্দুর মিছিল থেকে বেরিয়ে তৃণমূলের কয়েকজন কেশিয়াড়ি দক্ষিণ মণ্ডলের কার্যালয় ভাঙচুর করেছে বলে অভিযোগ। যদিও তৃণমূলের ব্লক সভাপতি পবিত্র শীট জানিয়েছেন, ভাঙচুরের অভিযোগ মিথ্যে।

কেমন ছিল এ দিনের বন্‌ধ চিত্র? কেশিয়াড়ি মিনি মার্কেটে গিয়ে দেখা গেল, বন্‌ধের কোনও প্রভাব নেই। তবে আনাজ ও মাছের বাজার কার্যত বন্ধ ছিল। কেশিয়াড়ির অন্যত্র বন্‌ধের কিছুটা প্রভাব পড়েছে। তবে সরকারি অফিস খোলা ছিল। কয়েকটি স্কুল বন্ধ থাকলেও অধিকাংশ স্কুল ও কলেজ খোলা ছিল।

কেশিয়াড়ি পঞ্চায়েত সমিতিকে কেন্দ্র করে স্নায়ুর লড়াই তীব্র হচ্ছে। এদিন মালদহে বিজেপি সভাপতি অমিত শাহের সভায় রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষও কেশিয়াড়ির প্রসঙ্গ টেনে আনেন। জানান, তৃণমূল প্রশাসনকে ব্যবহার করে বারবার বোর্ড গঠনে বাধা দিচ্ছে। খোদ মুখ্যমন্ত্রী সভা করার পরে শুভেন্দু অধিকারীরকে দায়িত্ব দিয়ে কেশিয়াড়িতে তাদের দল ভাঙানোর চেষ্টা করেছেন। এই পরিস্থিতি বন্‌ধের দিন কেশিয়াড়ি গিয়ে পতাকা হাতে মিছিল করলেন শুভেন্দু। বললেন, ‘‘যারা বন্‌ধ ডেকেছে তাদের টিকিটা পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। নো মিছিল, নো মিটিং। দলীয় কার্যালয়ে তালা।’’ দিনভর বিজেপির প্রথমসারির কাউকে দেখা যায়নি কেশিয়াড়িতে। গেরুয়া শিবিরের ব্যাখ্যা, এখন আইনি লড়াইয়ের প্রস্তুতি চলছে। তাই কৌশল গত কারণে সরাসরি লড়াই এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। তাছাড়া বড় সংঘর্ষ ঘটলে এটা প্রমাণ হত যে, কেশিয়াড়িতে বোর্ড স্থগিত করে ঠিক সিদ্ধান্তই নিয়েছে প্রশাসন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE