পুরসভার অনুষ্ঠান। প্রত্যাশিতভাবেই সেখানে হাজির বিধায়ক জুন মালিয়া, পুরপ্রধান সৌমেন খান প্রমুখ। হাজির প্রাক্তন বিধায়ক তথা প্রাক্তন উপপুরপ্রধান আশিস চক্রবর্তী ওরফে নান্টিও। অনেকের কাছেই যা অপ্রত্যাশিত! শনিবার পুরসভায় মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক, মাদ্রাসার কৃতী ছাত্রছাত্রীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এই ছবি দেখা গিয়েছে। এরপর থেকেই শহর তৃণমূলের অন্দরে, এমনকি জেলা তৃণমূলের অন্দরেও জোর জল্পনা, ঠিক কোন অঙ্কে ‘দূরত্ব’ ঘুচিয়ে জুনের কাছাকাছি গেলেন নান্টি।
‘দূরত্ব’ ছিল, স্পষ্ট। কিছু আগেই পুরভোটের ফল প্রকাশিত হয়েছে। ২৫টি আসনের মেদিনীপুরে তৃণমূলের অনুকূলে ফল ২০- ৫। পরাজিত তৃণমূলের মাত্র পাঁচ প্রার্থী। তাঁদের একজন নান্টি। প্রাক্তন উপপুরপ্রধান আশিস হেরে গেলেন, ওখানে কি আরও একটু সময় দিলে ফল ভাল হত? সেদিন সদুত্তর এড়িয়ে জুনের জবাব ছিল, ‘‘মানুষ রায় দিয়েছেন। অতীতটা অতীতই। এ বার আমরা ভবিষ্যতের দিকে এগোব।’’ দিনকয়েক পরে তৃণমূলের জেলা কোর কমিটির বৈঠক হয়। পুরভোটের ফলাফলের পর্যালোচনাও হয় সেখানে। বৈঠকে পুলিশের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি সরব হয়েছিলেন আশিসই। দলীয় সূত্রে খবর, তিনি নিশানা করেছিলেন কোতোয়ালি থানার এক অফিসারকেই। বৈঠকে আশিসের প্রশ্ন ছিল, ‘‘ও (ওই অফিসার) কেন আমাদের দলের সাংগঠনিক ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করবে? পুলিশ কি আমাদের সংগঠন চালাবে? চূড়ান্ত নোংরামি করেছে ও! কার কথায়, জানি। আগে তো আমরা জেলা চালিয়েছি। তখন তো পুলিশের সাহায্য দরকার হয়নি।’’ সেদিনের বৈঠকে ছিলেন দলের জেলা সভাপতি সুজয় হাজরা, বিধায়ক তথা জেলা চেয়ারম্যান দীনেন রায়, রাজ্য সম্পাদক প্রদ্যোৎ ঘোষ প্রমুখ। শুধু তাই নয়, দলীয় সূত্রে খবর মেলে, তাঁর পরাজয়ের কারণ ব্যাখ্যা করে স্বয়ং দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে রিপোর্ট পাঠিয়েছেন আশিস। সেখানে না কি ওই পুলিশ অফিসারের নামোল্লেখও ছিল। তাঁর বিরুদ্ধে অন্তর্ঘাত হয়েছে, দলের অন্দরে দাবি করেছিলেন নান্টি।
মেদিনীপুরে তৃণমূলের দুই শিবিরের একদিকে থাকছেন বিধায়ক, পুরপ্রধানের অনুগামী বলে পরিচিতরা। আরেকদিনে থাকছেন দলের জেলা সভাপতি সুজয় হাজরা, দলের শহর সভাপতি বিশ্বনাথ পাণ্ডবের অনুগামী বলে পরিচিতরা। পুরভোটের আগে, পরেও আশিসকে জেলা সভাপতির দিকে থাকতেই দেখা গিয়েছে। এদিকে থাকেন দীনেন, প্রদ্যোতরাও। এঁদের সঙ্গ ছেড়ে আশিস কেন পুরসভার অনুষ্ঠানে গেলেন, দলের অন্দরেই জল্পনা শুরু হয়েছে। জানা যাচ্ছে, অনুষ্ঠানের মাঝপথে পুরসভায় পৌঁছন আশিস। বিধায়কের কাছাকাছি কিছুক্ষণ তাঁকে দেখা গিয়েছে। দু’জনের কথাও হয়েছে। তবে কি কোথাও কোনও পদপ্রাপ্তি হতে চলেছে তাঁর, এমন কোনও ইঙ্গিত পেয়েছেন নান্টি, জল্পনা রয়েছে সে নিয়েও।
পুরসভার অনুষ্ঠানে কেন? বিধায়কের সঙ্গে একমঞ্চে আপনাকে দেখে অনেকে না কি বিস্মিত? নান্টি বলছেন, ‘‘বিস্ময়ের কী রয়েছে? আমন্ত্রণ ছিল। তাই পুরসভার অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম। আমি দলের রাজ্য সম্পাদক। উনিও (বিধায়ক) দলের রাজ্য সম্পাদক। দেখা হলে তো কথা হবেই।’’ পুরপ্রধান সৌমেন খান বলেন, ‘‘উনি প্রাক্তন উপপুরপ্রধান। পুরসভার অনুষ্ঠানে আসতেই পারেন।’’ তবে কি ওই দু’জনের ‘দূরত্ব’ ঘোচাতে মধ্যস্থের ভূমিকায় সৌমেন, প্রশ্ন ঘুরছে। আশিস অনুগামী এক নেতা বলছেন, ‘‘একজন সিনিয়র নেতার মতোই নান্টিদা ব্যালান্স করে চলছেন!’’