দু’বছর আগে গড়বেতায় এক তৃণমূল কর্মী খুনের ঘটনায় দলেরই আর এক কর্মীকে গ্রেফতার করল পুলিশ। ঘটনার পর থেকে পুলিশের দাবি ছিল, খুনের ঘটনায় মূল অভিযুক্ত অনুপ ওরফে বাচ্চু কুমার পলাতক। শেষে নিহত গণেশ দুলের পরিজনেরা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। গত সোমবার হাইকোর্ট নির্দেশ দেয়, সাত দিনের মধ্যে অভিযুক্তকে গ্রেফতার করতে হবে। তারপরই বুধবার কলকাতার রিজেন্ট পার্ক এলাকা থেকে অনুপকে গ্রেফতার করা হয়। বৃহস্পতিবার মেদিনীপুর আদালতে হাজির করা হলে ধৃতের জেল হেফাজতের নির্দেশ হয়।
এ দিকে, ধরা পড়ার পরই অনুপকে আর দলের কেউ বলে মানতে নারাজ তৃণমূল নেতৃত্ব। দলের জেলা কার্যকরী সভাপতি আশিস চক্রবর্তী বলেন, “উনি দলের কর্মী নন। বর্তমানে দলের সঙ্গে কোনও সম্পর্কও নেই।” অথচ তৃণমূলের গড়বেতা-১ ব্লক সভাপতি দিলীপ পালের ঘনিষ্ঠ বলেই পরিচিত ছিলেন অনুপ। এক সময় দলের যাবতীয় কর্মসূচিতে তাঁকে দেখাও যেত।
২০১৩ সালের ১৪ জুলাই নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিলেন গড়বেতার আমলাগোড়া পঞ্চায়েতের কপ্পরপুর এলাকার তৃণমূল কর্মী গণেশ দুলে। ১৫ জুলাই গড়বেতা থানায় লিখিত অভিযোগ জানানো হয়। তিন দিন পরে, ১৮ জুলাই কুড়চিবনিতে সেতুর নীচে রেললাইনের ধার থেকে গণেশের বস্তাবন্দি দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। অভিযোগ ছিল, তৃণমূলেরই বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর লোকজন গণেশকে খুন করেছে। মোট ১২ জনের নামে অভিযোগও দায়ের হয়। তার মধ্যে ১১ জনকে গ্রেফতারও করে পুলিশ। শুধু অনুপকেই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বলে দাবি করেছিল পুলিশ।
নিহত গণেশের পরিবারের অবশ্য অভিযোগ, ইচ্ছে করেই পুলিশ শাসক দলের সক্রিয় কর্মী অনুপকে ধরছিল না। তাদের দাবি, গত দু’বছরে মেদিনীপুর আদালতে অন্য মামলায় হাজিরাও দিয়েছেন অনুপ। পুলিশ হাতের কাছে পেয়েও তাঁকে ধরেনি। শেষমেশ সুবিচার পেতে গণেশের পরিবার হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়। গত সোমবার হাইকোর্ট নির্দেশ দেয়, সাত দিনের মধ্যে অভিযুক্তকে গ্রেফতার করতে হবে। এরপরই অনুপকে ধরতে তত্পর হয় পুলিশ। মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে ওই তৃণমূল কর্মীর খোঁজ শুরু হয়। অনুপের খোঁজে কলকাতায় যান গড়বেতার ওসি হীরক বিশ্বাস। বুধবার ধরা পড়ে অনুপ।
তৃণমূল কর্মী বলে পরিচিত গণেশের দাদা নিমাই দুলে গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে দলের প্রতীক না পেয়ে নির্দল হিসেবে নির্বাচনে লড়েছিলেন। তারপর থেকেই ওই পরিবারকে স্থানীয় তৃণমূল নেতারা হুমকি দিচ্ছিলেন বলে অভিযোগ। এই প্রেক্ষিতেই অনুপকেও গ্রেফতার করা হচ্ছিল না বলে দাবি ওই পরিবারের। যদিও পুলিশের বক্তব্য, অনুপের নাগাল পাওয়া যাচ্ছিল না। এমনকী অন্য মামলায় মেদিনীপুর আদালতে অনুপের হাজিরার বিষয়টিও তাদের জানা ছিল না। ইতিমধ্যে মামলাটির চার্জশিট হয়েছে। বিচার প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে মেদিনীপুর আদালতে। তবে আগে ধৃত ১১ জনই এখন জামিনে মুক্ত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy