Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

জঙ্গলের কাছে যেতেই নেকড়ের হামলা, জখম দুই যুবক

সোমবার সন্ধ্যায় জামবনির বাঁকশোল গ্রামের এই ঘটনায় গুরুতর জখম সনাতন হেমব্রম ও তাঁর ভাইপো ললিত হেমব্রমকে রাতেই ঝাড়গ্রাম জেলা সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।

হাসপাতালে জখম কাকা-ভাইপো। —নিজস্ব চিত্র।

হাসপাতালে জখম কাকা-ভাইপো। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ০৯ জানুয়ারি ২০১৯ ০১:০৬
Share: Save:

আগুন পোহানোর সময় ঘটল বিপত্তি। নেকড়ের হামলায় গুরুতর জখম হলেন কাকা-ভাইপো। সোমবার সন্ধ্যায় জামবনির বাঁকশোল গ্রামের এই ঘটনায় গুরুতর জখম সনাতন হেমব্রম ও তাঁর ভাইপো ললিত হেমব্রমকে রাতেই ঝাড়গ্রাম জেলা সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।

পেশায় চাষি সনাতন ও ললিত জানিয়েছেন, সোমবার সন্ধের মুখে তাঁরা বাড়ির কাছে আগুন পোহাচ্ছিলেন। তখন গ্রাম লাগোয়া জঙ্গলের দিকে কয়েকটি কুকুর অসম্ভব চিৎকার জোড়ে। কী হচ্ছে দেখতে কিছুটা এগিয়ে গিয়েছিলেন সনাতন ও ললিত। তাঁদের দাবি, কুকুরের তাড়া খেয়ে তখনই একটি বড়সড় নেকড়ে জঙ্গল থেকে ছুটে বেরিয়ে আসে। তারপর সামনে ললিতকে পেয়ে তাঁর উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। নেকড়ের আঁচড়-কামড়ে ললিতের মুখমণ্ডল ক্ষতবিক্ষত হয়। ললিতকে বাঁচাতে গেলে সনাতনও নেকড়ের আক্রমণে জখম হন। সনাতনের বাঁ হাত কামড়ে কয়েক জায়গায় মাংস খুবলে নেয় নেকড়েটি। দুই যুবকের আর্তনাদে ততক্ষণে ছুটে এসেছেন গ্রামবাসী। লোক দেখে নেকড়েটি জঙ্গলের দিকে পালিয়ে যায়। গ্রামবাসীরা জখম দুই যুবককে উদ্ধার করে ঝাড়গ্রাম জেলা সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে নিয়ে যান। রাতে হাসপাতালে গিয়ে দুই যুবকের সঙ্গে কথা বলেন জামবনির রেঞ্জ অফিসার গোপালকুমার ঘোষ।

ওই বনকর্তা জানাচ্ছেন, জঙ্গলে পায়ের দাগ, আহতদের বয়ান ও স্থানীয় বন সুরক্ষা কমিটির সঙ্গে কথা বলে যে তথ্য পাওয়া গিয়েছে, তাতে মনে হচ্ছে হামলাকারী প্রাণীটি নেকড়ে। ওই এলাকার জঙ্গলে বেশ কিছু নেকড়ে রয়েছে। একটি নেকড়ে আবার শাবক প্রসব করেছে। শাবক বাঁচানোর জন্য নেকড়েরা আক্রমণাত্মক হয়। মনে করা হচ্ছে, কুকুর-দলের তাড়া খেয়ে নেকড়েটি লোকালয়ে কাছে চলে এসেছিল। ওই সময় দুই যুবক নেকড়ের সামনে পড়ে যাওয়ায় বিপত্তি বাধে। গোপালবাবু জানান, সোমবার দুপুরে বাঁকশোলের পাশের গ্রাম চালতায় নেকড়ের হামলায় আরও এক যুবক জখম হন। গণেশ হেমব্রম নামে ওই যুবক সিভিক ভলান্টিয়ার। গ্রামের লাগোয়া পুকুরে স্নান সেরে ফেরার সময় একটি নেকড়ে তাঁকে আক্রমণ করে। লাঠি হাতে তাড়া করায় নেকড়েটি পালিয়ে যায়। গণেশ সামান্য জখম হয়। প্রাথমিক চিকিৎসার পরে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

মেল মেডিক্যাল ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন ললিত ও সনাতনকে মঙ্গলবার দেখতে আসেন হাসপাতালের সুপার মলয় আদক। মলয়বাবু বলেন, ‘‘এমন ঘটনায় দুই যুবক আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলেন। তাঁদের চিকিৎসা চলছে। এখন তাঁদের অবস্থা স্থিতিশীল।’’ এদিন সনাতনের দাদা জয়রাম হেমব্রম, ললিতের জেঠিমা কমলা হেমব্রম বলেন, ‘‘জঙ্গলে প্রায়ই হাতি ঘোরাফেরা করে। নেকড়েও ঘোরোফেরা করে। জঙ্গলে খরগোস কমে গেলে নেকড়েরা আমাদের ছাগল, মুরগি চুরি করে। কিন্তু এভাবে মানুষের উপর এর আগে হামলা কখনও করেনি। একদল কুকুরের তাড়া খেয়ে নেকড়েটা বাড়ির কাছে চলে এসেছিল।’’

বাঁকশোল বন সুরক্ষা কমিটির সদস্য নরেন মাহাতো বলেন, এলাকার জঙ্গলে নেকড়ে রয়েছে। প্রায়ই তাদের দেখা যায়। ঝাড়গ্রামের ডিএফও বাসবরাজ হোলেইচ্চি বলেন, ‘‘জঙ্গলের ঘনত্ব বাড়ার কারণেই নেকড়ে-সহ বন্যপ্রাণীর সংখ্যা বাড়ছে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহত দুই যুবককে সরকারি নিয়ম অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Wolf Jambani জামবনি
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE