রোগীর অভিযোগ শুনছেন সাংসদ উমা সরেন। নিজস্ব চিত্র।
ঝাড়গ্রাম জেলা ও সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে ফল বিলি করতে গিয়েছিলেন ঝাড়গ্রামের সাংসদ উমা সরেন। রবিবার দুপুরে সাংসদকে কাছে পেয়ে হাসপাতালে খাবারের মান ও পরিষেবা নিয়ে বিস্তর অভিযোগ জানালেন রোগী আর তাঁদের পরিজনরা।
গত ৩ নভেম্বর জামবনির প্রশাসনিক সভায় হাসপাতালে নিম্ন মানের খাবার দেওয়ার প্রসঙ্গ তুলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তারপর স্বাস্থ্যকর্তারা তদন্তে আসেন। খাবারের মান নিয়ে নজরদারির জন্য তৈরি হয় কমিটি। তারপরও যে পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়নি এ দিনের ঘটনার তারই প্রমাণ।
রবিবার দুপুর ১ টা নাগাদ প্রথমে হাসপাতালের সুপার স্পেশ্যালিটি ভবনে আসেন উমাদেবী। সঙ্গে ছিলেন ঝাড়গ্রামের উপ মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক নন্দ মল্লিক। তিন তলায় মেল মেডিসিন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রোগীদের কাছে উমাদেবী জানতে চান, “আপনারা খাবার খেয়েছেন? খুচরো নিয়ে সাধারণ মানুষের খুব সমস্যা হচ্ছে। আপনাদের জন্য আমি ফল কিনে নিয়ে এসেছি। আপনারা খাবেন।” তখনও অবশ্য ফলের প্যাকেট এসে পৌঁছয়নি ওয়ার্ডে। উমাদেবীর অনুগামীরা কিছুক্ষণের মধ্যে ট্রলিতে করে কয়েকশো ৪০ মাইক্রনের সাদা প্যাকেটে ভর্তি ফল নিয়ে হাজির হন।
উমাদেবীকে সামনে পেয়ে রোগী রাখাল সরকার শয্যার পাশের টেবিলে রাখা ভাতের থালা দেখিয়ে বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর সদিচ্ছার বাস্তবায়ন হচ্ছে না। কোনও প্রভাবশালী অদৃশ্য আঁতাত কাজ করছে। না হলে মুখ্যমন্ত্রী সতর্ক করার পরেও এমন নিম্নমানের খাবার দেওয়া হচ্ছে কীভাবে!” খাবারের থালায় ছিল ভাত, হলুদ জলের ডাল, দু’টুকরো সয়াবিনের ঝোল, দু’কুচি চিকেন টুকরোর ঝোল। রাখালবাবু উমাদেবীকে অনুরোধ করে বলেন, “রোগীদের স্বার্থে হাসপাতালে ভাল খাবার দেওয়ার চেষ্টা করুন।” উমাদেবী অবশ্য ‘দেখছি’ বলে রাখালবাবুকে আশ্বস্ত করেন।
এক রোগীর আত্মীয় পম্পা রায় উমাদেবীর কাছে অভিযোগ করেন, “চিকিৎসকরা নিয়মিত ওয়ার্ডে আসেন না। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরও অভাব রয়েছে।” ফিমেল মেসিডিন ওয়ার্ডের রোগিনী শিশুশিক্ষা কেন্দ্রের কর্মী তুলনা মাহাতো উমাদেবীর কাছে অভিযোগ করেন, “চিকিত্সক সিটি স্ক্যান করতে বলেছেন। কিন্তু এখনও হাসপাতাল থেকে তা করা হয়নি।” মেল সার্জিক্যাল ওয়ার্ডের রোগিনী সাদরি সরেনের অভিযোগ, ‘‘রবিবার ছুটির দিন হওয়ায় পায়ের ক্ষতের ড্রেসিং করা হয়নি।’’
হাসপাতালের সব ওয়ার্ডে গিয়ে নিজের হাতে রোগীদের ফলের প্যাকেট তুলে দেন উমাদেবী। তবে রোগীদের অভিযোগ প্রসঙ্গে কোনও প্রতিক্রিয়া দিতে চাননি সাংসদ। উমাদেবীর দাবি, সাংসদ হিসেবে তিনি যে বেতন পান, সেই টাকায় জঙ্গলমহলের সমস্ত রোগীদের ফল কিনে দিয়েছেন। এ দিন ঝাড়গ্রাম জেলা ও সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল থেকে সেই কর্মসূচির সূচনা করলেন তিনি। হাসপাতালের সুপার মলয় আদক বলেন, “রোগীদের খাবারের মান নিয়ে নজরদারি ও পরীক্ষা করার জন্য একটি কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। শীঘ্রই কমিটির সদস্যরা কাজ শুরু করবেন।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy