এসডিপিও-র (বাঁদিকে) সঙ্গে বচসা আইনজীবীদের।
নিরাপত্তার ফাঁক-ফোকরের সুযোগ নিয়ে মাস খানেক আগে আদালত চত্বর থেকে চম্পট দিয়েছিল পুলিশ খুনে অভিযুক্ত কর্ণ বেরা। তবে শেষ রক্ষা হয়নি। পুলিশের হাতে ধরা পড়ে যায় সে। কিন্তু এবার সেই নিরাপত্তা নিয়েই পুলিশের ‘বাড়াবাড়ি’তে আটকে গেল তার সাজা ঘোষণা।
পুলিশ ও আইনজীবী সূত্রে জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার কর্ণকে হলদিয়া মহকুমা আদালতে তোলা হচ্ছিল, সেই সময় আইনজীবীদের আদালতে ঢোকা নিয়ে তাঁদের সঙ্গে ‘বাদানুবাদে’ জড়িয়ে পড়েন হলদিয়ার এসডিপিও তন্ময় মুখোপাধ্যায়। অভিযোগ, সিদ্ধার্থ গাঁতাইত নামে এক আইনজীবীর পরিচয় পত্র থাকা সত্ত্বেও তাঁকে আদালতের ভিতরে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। এমনকী তাঁকে ‘হেনস্থা’ করা হয় বলেও অভিযোগ। প্রতিবাদে এদিন ‘কর্মবিরতি’ পালন করেন হলদিয়া মহকুমা আদালতের আইনজীবীরা। ফলে এ দিন কর্ণকে আদালতে হাজির করানো গেলেো তার সাজা ঘোষণা সম্ভব হয়নি। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, আগামী ১ ডিসেম্বর ফের কর্ণকে আদালতে তোলা হবে সাজা ঘোষণার জন্য। হলদিয়ার এসডিপিও তন্ময় মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এ দিন আদালত চত্বরে যা হয়েছে, তা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাব।’’
প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ৭ জানুয়ারি কাপাসবেড়িয়ার কাছে রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ কর্তব্যরত পুলিশ কর্মী নবকুমার হাইত গুলিতে খুন হন। খুনে অভিযুক্ত হিসেবে নাম উঠে আসে কাঁথির মাজিলাপুরের বাসিন্দা কর্ণ বেরা এবং শেখ রহিমের। পুলিশ শেখ রহিমকে ধরতে পারলেও গা ঢাকা দিয়েছিল কর্ণ। পরে দক্ষিণ ২৪ পরগনার বারুইপুর থেকে তাকে গ্রেফতার করে মহিষাদল থানার পুলিশ। গত ১৩ নভেম্বর এই মামলার শুনানি শেষ হয়।
আইনজীবী সূত্রে জানা গিয়েছে, সরকার পক্ষের ৩৪ জন এবং আসামীপক্ষের একজন সাক্ষ্য দেয়। তার ভিত্তিতে শুনানি শেষ করে আদালত। বৃহস্পতিবার মামলার সাজা ঘোষণার কথা ছিল হলদিয়া মহকুমা আদালতের অতিরিক্ত দায়রা বিচারক আশিস কুমার দাসের এজলাসে। ফলে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে আদালত ও সংলগ্ন এলাকায় কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছিল পুলিশ। আদালতে ঢোকার জন্য রোজ দু’টি দরজা খোলা থাকে। এদিন অবশ্য একটি দরজা খোলা রাখা হয়েছিল। ওই দরজা দিয়ে সকাল ১০টা নাগাদ দোষীসাব্যস্ত কর্ণ বেরা এবং তার সঙ্গী শেখ রহিমকে আদালতে ঢোকানো হয়। কিন্তু আদালতে আইনজীবী এবং ল’ক্লার্ক দের ‘পরিচয় পত্র’ ছাড়া ঢোকা নিষিদ্ধ করেছিল পুলিশ। সিদ্ধার্থ গাঁতাইত নামে এক আইনজীবীর অভিযোগ, পরিচয় পত্র থাকা সত্ত্বেও তাঁকে আদালতে ঢুকতে বাধা দেওয়া হয়।
সিদ্ধার্থবাবুর দাবি, পরিচয়পত্র দেখালেও এসডিপিও তাঁকে আদালতে ঢুকতে দেননি। এ নিয়ে হইচই হলে অন্য আইনজীবীরা সেখানে চলে আসেন। দু’পক্ষে বাদানুবাদ শুরু হয়ে যায়। সিদ্ধার্থবাবুর অভিযোগ, সেই সময় তাঁকে হেনস্থা করা হয়। প্রতিবাদে আইনজীবীরা দিনভর কর্মবিরতি পালন করেন। ফলে এজলাসে কর্ণের সাজা ঘোষণার প্রক্রিয়া শুরু করা যায়নি।
হলদিয়া মহকুমা আদালতের বার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক বিমল কুমার মাঝি বলেন, ‘‘নিরাপত্তার অজুহাত দেখিয়ে আইনজীবী এবং ল’ক্লার্ক এবং আদালতে কাজে আসা সাধারণ মানুষকে পুলিশ হেনস্থা করেছে। তারই প্রতিবাদে আমরা কর্মবিরতি পালন করেছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy