Advertisement
১১ অক্টোবর ২০২৪
Abhishek Banerjee

মাতকাতপুরে বাজিমাত! দুয়ারে পাওয়ার ঘোরে গ্রামবাসীরা, ‘নেতা’ থেকে ‘দাদা’ হলেন অভিষেক

শনিবার কেশপুরের সভায় যাওয়ার আগে আচমকাই খড়্গপুর-১ ব্লকের মাতকাতপুর গ্রামে যান অভিষেক। সেই গ্রামে গিয়েছিল আনন্দবাজার অনলাইন। দেখা গেল, নেতাকে কাছে পেয়ে আপ্লুত গ্রামবাসীরা।

photograph of Abhishek Banerjee.

গ্রামবাসীদের মন জিতলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কেশপুর শেষ আপডেট: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৫:২৬
Share: Save:

জটায়ু লিখলে নির্ঘাত এই কাহিনির নাম দিতেন ‘মাতকাতপুরে বাজিমাত’! ‘দাদা’র হঠাৎ আগমনে যেন ঘোর কাটছে না মাতকাতপুর গ্রামের বাসিন্দাদের। শনিবার পশ্চিম মেদিনীপুরের কেশপুরের আনন্দপুরে সভায় যাওয়ার আগে কনভয় থামিয়ে আচমকাই ওই গ্রামে ঢুকে পড়েছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘দিদির সুরক্ষা কবচ কর্মসূচি’র ঢঙেই ‘দিদির দূত’ হয়ে গ্রামে হাজির হয়ে বাসিন্দাদের নানা সমস্যার কথা শোনেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। সুরাহার আশ্বাসও দেন তৃণমূলের ‘সেনাপতি’। যা নিয়ে আপ্লুত গ্রামের বাসিন্দারা। শনিবার তাঁরা বলছিলেন, ‘‘দাদা আশ্বাস দিয়েছেন। আমরা ভরসা রেখেছি।’’ রবিবারই দেখলেন, গ্রামে সরকারি কর্মীরা চলে এসেছেন পাট্টার আবেদন নিতে।

এখানেই মাত করে দিয়েছেন অভিষেক। ছিলেন ‘নেতা’। হয়ে উঠলেন ‘দাদা’। গ্রামবাসীরা সত্যিই যেন কাছে পেয়ে আপন করে নিয়েছেন এত দিন দূর থেকে দেখা শাসকদলের নেতাকে।

Photograph of Matkatpur Village.

অভিষেকের আশ্বাসের পর দিনই মাতকাতপুর গ্রামে পৌঁছেছেন সরকারি কর্মীরা। নিজস্ব চিত্র।

সামনেই পঞ্চায়েত ভোট। তার আগে সাধারণ মানুষের অভাব-অভিযোগ শুনতে ‘দিদির দূত’ হয়ে গ্রামে গ্রামে যাচ্ছেন তৃণমূলের নেতা এবং জনপ্রতিনিধিরা। শনিবার কেশপুরে সভা ছিল অভিষেকের। তার আগে বা পরে ঘোষিত ‘দিদির সুরক্ষা কবচ কর্মসূচি’ ছিল না তৃণমূল সাংসদের। কিন্তু সভায় যাওয়ার পথে হঠাৎই খড়্গপুর-১ ব্লকের বড়কোলা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার মাতকাতপুর গ্রামে ঢুকে পড়েন তিনি। আচমকা তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদককে কাছে পেয়ে উচ্ছ্বসিত হয়ে পড়েন গ্রামবাসীদের অনেকেই। অভিষেকের কাছে নানা সমস্যার কথা জানান তাঁরা।

সবার সঙ্গে কথা বলে অভিষেক জানতে পারেন, সেখানে ৯০টি বাড়িতে ১৫০ পরিবারের বাস। কিন্তু বাড়িগুলি সেচ দফতরের জমিতে রয়েছে। এই কারণে বিভিন্ন সরকারি পরিষেবা থেকে তাঁরা বঞ্চিত হচ্ছেন বলে অভিষেকের কাছে অভিযোগ জানান গ্রামবাসীরা। জমির পাট্টা পাওয়ার আর্জি জানান। অভিযোগ শুনতে শুনতেই গ্রামের পথে ঘুরতে থাকেন অভিষেক। গ্রামবাসীদের উপস্থিতিতেই সেচমন্ত্রী পার্থ ভৌমিককে ফোন করেন। যা শুনেছেন তাই বলেন ফোনে। কী করে ওই পরিবারগুলি পাট্টা পেতে পারে তা দেখার জন্য অনুরোধ করেন তিনি। অভিষেক ফোনে বলেন, ‘‘এঁরা (মাতকাতপুরের বাসিন্দারা) অনেক সরকারি সুযোগসুবিধা পাচ্ছেন না। নিয়মকানুন মেনে যত দ্রুত সম্ভব করে দিয়ো।’’ এর ২৪ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই রবিবার গ্রামে পৌঁছেছেন সরকারি কর্মীরা। জমির পাট্টার আবেদনপত্রের জন্য এলাকায় শিবির করেছেন খড়্গপুর-১ ব্লকের বিডিও। জেলাশাসক আয়েষা রানি বলেন, ‘‘ওই এলাকায় জমি সংক্রান্ত কিছু সমস্যা রয়েছে। বিডিও এবং ভূমি দফতরের একটি শিবির করা হয়েছে।’’

রবিবার সকাল সাড়ে ১১টা থেকে প্রায় ৩টে পর্যন্ত সরকারি শিবির বসেছিল মাতকাতপুর গ্রামে। সেখানে বিডিও অফিসের উদ্যোগে জমির পাট্টার বিষয়ে আবেদন নেওয়া হয়। খড়্গপুর-১ ব্লকের বিডিও দেবদত্ত চক্রবর্তী বলেন, ‘‘ওই এলাকায় ভূমি দফতরের আধিকারিকদের নিয়ে জমি সংক্রান্ত বিষয়ে আবেদন জমা নেওয়া হয়েছে। ৯২ টি পরিবার রয়েছে, তবে আবেদন তার থেকে বেশি জমা পড়েছে। সব কিছু খতিয়ে দেখা হবে।’’ এলাকায় একটি আইসিডিএস কেন্দ্রও ঘুরে দেখেন সরকারি কর্মীরা।

সেচমন্ত্রীকে ফোন করে যে ভাবে সমস্যা সমাধানে অভিষেক তৎপরতা দেখিয়েছেন, তাতেই বেশি আপ্লুত গ্রামবাসীরা। বাসিন্দা অজিত রায় বলেন, ‘‘এখানে চার পুরুষ ধরে বাস করছি। কিন্তু আজও জমির পাট্টা পাইনি। দাদা আশ্বাস দিয়েছেন। ওঁর উপর ভরসা রেখেছি।’’ স্বরূপ বেরা নামে আর এক গ্রামবাসী বলেন, ‘‘এখানে প্রত্যেক পরিবারের সদস্যরাই শ্রমিকের কাজ করেন। কাজের সমস্যার কথা বলেছি। যাতে কাজ পাওয়া যায়, সেটা দেখার জন্য বলেছি আমরা। দাদা সবটা দেখবেন বলেছেন। আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন।’’

Photograph of Matkatpur Village.

মাতকাতপুর গ্রামে রবিবার শিবির করেছেন সরকারি কর্মীরা। সেখানে পাট্টার আবেদনপত্র নেওয়ার কাজ চলছে। নিজস্ব চিত্র।

অভিষেককে না চাইতেও এ ভাবে এতটা কাছে পেয়ে উচ্ছ্বসিত গ্রামের মহিলারাও। রিঙ্কু বেরার কথায়, ‘‘ওঁকে (অভিষেক) সামনে পেয়ে খুবই আনন্দ হয়েছে। সমস্যার কথা জানতে পেরে তিনি আমাদের সামনেই মন্ত্রীকে ফোন করেছিলেন। আমার খুব ভাল লেগেছে।’’

অভিষেকের এই হঠাৎ সফরে উচ্ছ্বসিত স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বও। পঞ্চায়েত ভোটের আগে অভিষেকের এই ‘আশ্বাসে’ সুফল মিলবে বলে আশা তাঁদেরও। রবিবার এলাকায় গিয়েছিলেন খড়গপুর গ্রামীণের বিধায়ক দীনেন রায়। তিনি বলেন, ‘‘এলাকার জমি সমস্যা দীর্ঘদিনের। সেই সমস্যার জট কাটতে চলেছে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে। তিনি ওই গ্রাম পরিদর্শন করে যাওয়ার পরেই দিনই গ্রামে জমি সমস্যার আবেদনপত্র নেওয়া হয়েছে প্রশাসনিক ভাবে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Abhishek Banerjee TMC Didir Suraksha Kavach
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE