Advertisement
৩০ মার্চ ২০২৩
Abhishek Banerjee

অভিষেকের ‘মডেল’ প্রার্থী মঞ্জু, অভিজিৎ, হসিনুদ্দিন কারা? কেশপুরে খোঁজ নিল আনন্দবাজার অনলাইন

এক জন নিজেকে শুধুই মমতার অনুগামী মনে করেন। অন্য দু’জন সম্পর্কে স্বামী-স্ত্রী, পেশায় তৃণমূল কর্মী। অভিষেক যাঁদের দলের ‘মডেল’ হিসেবে দেখছেন, তাঁদের পরিচয় কী? খোঁজ নিল আনন্দবাজার অনলাইন।

‘‘হোসিনুদ্দিনের মতো লোকেরাই তৃণমূলের মুখ হতে চলেছেন। এঁদেরই আমরা স্বীকৃতি দেব। করেকম্মে খাওয়ার দিন শেষ।’’

‘‘হোসিনুদ্দিনের মতো লোকেরাই তৃণমূলের মুখ হতে চলেছেন। এঁদেরই আমরা স্বীকৃতি দেব। করেকম্মে খাওয়ার দিন শেষ।’’ গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

মৌসুমী খাঁড়া
কেশপুর শেষ আপডেট: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৮:৩৭
Share: Save:

দুর্নীতিগ্রস্ত এবং বাতেলাসর্বস্ব নেতার জায়গা নেই দলে। শনিবার পূর্ব মেদিনীপুরের কেশপুরের সভা থেকে এই বার্তা দিয়ে ‘নতুন তৃণমূল’ কেমন হবে, তার উদাহরণও তুলে ধরেছেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। দুই পরিবারের তিন জনকে তিনি তুলে এনেছিলেন মঞ্চে। তাঁদের এক জন সক্রিয় ভাবে কোনও রাজনৈতিক দলের কর্মী বা সমর্থক নন বলেই দাবি করেছেন অভিষেক। অন্য দু’জন সম্পর্কে স্বামী-স্ত্রী এবং দলের তৃণমূল স্তরের কর্মী। অভিষেক যাঁদের দলের ‘মডেল’ হিসেবে দেখছেন, তাঁদের পরিচয় কী? খোঁজ নিল আনন্দবাজার অনলাইন।

Advertisement

কেশপুরের সভায় সাদা জামা, এক মুখ দাড়ি, চোখে চশমা পরা এক ব্যক্তির কাঁধে হাত রেখে অভিষেক তাঁকে মঞ্চে তুলে এনেছিলেন। সভায় উপস্থিত জনতাকে অভিষেক বলেন, ‘‘হসিনুদ্দিনের মতো লোকেরাই তৃণমূলের মুখ হতে চলেছেন। এঁদেরই আমরা স্বীকৃতি দেব। করেকম্মে খাওয়ার দিন শেষ।’’ পাশাপাশি, গোলাড় গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য মঞ্জু দলবেরা এবং তার স্বামী, তৃণমূল বুথ সভাপতি অভিজিৎ দলবেরাকে মঞ্চে ডেকে ভূয়সী প্রশংসা করেন অভিষেক। জানান, এমন কর্মীদের দলের তিনি সাধারণ সম্পাদক, এটা ভেবেই গর্ব অনুভব করছেন।

কেশপুর ১১ নম্বর অঞ্চলের উচাহারের বাসিন্দা শেখ হসিনুদ্দিন। প্রায় ১০ বছর ধরে বেসরকারি বাসে কন্ডাক্টরি করেছেন এই প্রৌঢ়। এখন বয়স হয়েছে। তাই কেশপুরে একটি ওষুধের দোকানে কাজ করেন। অভিষেক যাঁকে কিছু ক্ষণ আগে প্রণাম করেছেন, সেই হসিনুদ্দিন আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেন, ‘‘আবাস যোজনা প্রকল্পে যখন আমার নাম দেখতে পেলাম, তখনই ঠিক করে নিই উপভোক্তার তালিকা থেকে নিজের নাম তুলে নেওয়ার। মেয়ের বিয়ে দিতে হবে। তাই বাড়ির জন্য খরচ করব না।’’

হসিনুদ্দিনের বাড়ির ছবিও এ দিন মঞ্চে বড় করে দেখিয়েছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। তা নিয়ে হসিনুদ্দিন বলেন, ‘‘১৫ দিন আগে এক জন গ্রামে এসেছিলেন। তিনি খোঁজখবর নিয়েছিলেন। তার পরে বাড়ির ছবি তুলে পাঠাতে বলেছিলেন। জানতাম না যে, আজ (শনিবার) এই ভাবে অভিষেক আমায় মঞ্চে ডেকে নেবেন।’’

Advertisement

হসিনুদ্দিন কোনও দিনও কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত না হলেও নিজেকে মুখ্যমন্ত্রীর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুগামী বলে দাবি করেছেন। ছেলে মহম্মদ ফায়েজ উচ্চ মাধ্যমিক দেবে। মেয়ে তানিয়া সুলতানা বিএডের ছাত্রী। শনিবার অভিষেক তাঁকে মঞ্চে এনে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তাতে আপ্লুত হসিনুদ্দিন। তৃণমূলের শীর্ষ নেতা তাঁর মেয়ের বিয়ের দায়িত্ব নেওয়ায় নিজেকে ‘চিন্তামুক্ত পিতা’ বলে জানান তিনি। অভিষেক যদি পঞ্চায়েত ভোটে আপনাকে প্রার্থী করেন, লড়বেন? আনন্দবাজার অনলাইনের এই প্রশ্নের জবাবে প্রৌঢ় হসিনুদ্দিন বলেন, ‘‘যদি তাই হয় তা হলে সাধ্য মতো মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করব।’’

অভিষেক যে দম্পতিকে তৃণমূলের ‘আদর্শ কর্মী’ বলেছেন, তাঁদের মধ্যে মঞ্জু দলবেরা আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেন, ‘‘গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য হয়ে এলাকার মানুষের পাশে থাকার কাজ করে চলেছি। বসবাসের অযোগ্য বাড়ির থাকা সত্ত্বেও ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা, ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে বাড়ি করিনি।’’ তাঁর সংযুক্তি, ‘‘আবাস যোজনার টাকা পেলেও বাড়ি তৈরি করতে গিয়ে অতিরিক্ত কিছু টাকার প্রয়োজন হবে। কিন্তু ওই পরিমাণ অর্থ খরচ করার মতো সামর্থ্য নেই। সেই কারণে আবাস যোজনার তালিকা থেকে নাম বাদ দেওয়ার সুপারিশ করেছি।’’

মঞ্জু জানান, দিন সাতেক আগে তাঁর বাড়ির ছবি তুলে নিয়ে গিয়েছিল কয়েক জন। তিনি ঘুণাক্ষরেও বুঝতে পারেননি যে শনিবার দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের হাতে সেই ছবির কাটআউট থাকবে। অভিজিৎ-মঞ্জুর এক ছেলে উচ্চ মাধ্যমিক দেবেন। মেয়ে দশম শ্রেণির ছাত্রী। তাদের অনেক দূর পড়ানোর ইচ্ছে। অভিজিৎ দলবেরা বলেন, ‘‘প্রায় দশ বছর ধরে বুথ সভাপতির দায়িত্ব সামলাচ্ছি। চাষবাসের কাজের সঙ্গে দলের কাজও চালিয়ে যাই। আমাদের নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বাড়ি করে দেবেন বলেছেন। এটাই প্রাপ্তি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE
Popup Close
Something isn't right! Please refresh.