Advertisement
E-Paper

ডুবেছে লাইন, ট্রেনের অপেক্ষায় দিনভর দুর্ভোগ

মঙ্গলবার দুপুর দু’টো। খড়্গপুর স্টেশনে গালে হাত দিয়ে বসে প্রেমবাজারের বাসিন্দা বহ্নিশিখা দাস। সঙ্গে দুই মেয়ে ও শাশুড়ি। গন্তব্য পুরী। সকাল ৭টা ৪৫ মিনিটে আসার কথা ছিল পুরীগামী ধৌলি এক্সপ্রেসের। আসেনি। পেশায় শিক্ষিকা বহ্নিশিখাদেবী বলছিলেন, “অনেক দিন আগে টিকিট কেটেছিলাম। কিন্তু ট্রেন তো আসছে না। জানি না আর পুরী যাওয়া হবে কিনা!”

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০২:০৩
প্ল্যাটফর্মেই ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা। মঙ্গলবার খড়্গপুরে। নিজস্ব চিত্র।

প্ল্যাটফর্মেই ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা। মঙ্গলবার খড়্গপুরে। নিজস্ব চিত্র।

মঙ্গলবার দুপুর দু’টো। খড়্গপুর স্টেশনে গালে হাত দিয়ে বসে প্রেমবাজারের বাসিন্দা বহ্নিশিখা দাস। সঙ্গে দুই মেয়ে ও শাশুড়ি। গন্তব্য পুরী। সকাল ৭টা ৪৫ মিনিটে আসার কথা ছিল পুরীগামী ধৌলি এক্সপ্রেসের। আসেনি। পেশায় শিক্ষিকা বহ্নিশিখাদেবী বলছিলেন, “অনেক দিন আগে টিকিট কেটেছিলাম। কিন্তু ট্রেন তো আসছে না। জানি না আর পুরী যাওয়া হবে কিনা!”

মঙ্গলবার সকাল খড়্গপুরের এমন বহু রেল যাত্রীই নাকাল হলেন। হাওড়া-খড়্গপুর শাখার মাঝে টিকিয়াপাড়া কারশেডে জল জমেই যাবতীয় বিপত্তি। লাইন জলের তলায় চলে যাওয়ায় বিঘ্নিত হয় খড়্গপুর ডিভিশনের ওই শাখার ট্রেন চলাচল। ৭-৮ ঘন্টা দেরিতে চলেছে সমস্ত দূরপাল্লার ট্রেন। বাতিল হয়েছে বেশ কয়েকটি প্যাসেঞ্জার ট্রেন। বিশেষ করে হাওড়া থেকে খড়্গপুরগামী আপ ট্রেনের যাত্রীদের বিস্তর ভুগতে হয়েছে। হাওড়াগামী ডাউন লাইনেও ট্রেন চলাচল বিঘ্নিত হয়। হাওড়াগামী প্রতিটি লোকাল ট্রেন ৩-৪ ঘন্টা দেরিতে চলেছে এ দিন। সিগন্যালের অভাবে বিভিন্ন স্টেশনের মাঝে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছিল ট্রেনগুলিকে।

রেল সূত্রে খবর, এ দিন বেলা দু’টো পর্যন্ত হাওড়া থেকে আপ লাইনের কোনও দূরপাল্লার ট্রেন খড়্গপুর স্টেশনে আসেনি। সকাল ৭টা ৪৫-এর ধৌলি এক্সপ্রেস, ৮টা ৩৩-এর ইস্পাত এক্সপ্রেস, ৯টা ৫ মিনিটের ফলকনামা, ৮টা ৫মিনিটের বরবিল জনশতাব্দী এক্সপ্রেসের মতো ট্রেনগুলি সিগন্যাল না পেয়ে টিকিয়াপাড়ার কাছে আটকে ছিল। আবার সকাল ১১টার ইস্ট-কোস্ট এক্সপ্রেস হাওড়া থেকেই ছেড়েছে দু’পুর ২টোয়। প্যাসেঞ্জার ট্রেনও দেরিতে চলেছে। এ ছাড়াও বাতিল হয়েছে খড়্গপুর-হিজলি আপ ও ডাউন প্যাসেঞ্জার, আপ লালমাটি প্যাসেঞ্জার, এক জোড়া মেদিনীপু-হাওড়া লোকাল।

ট্রেনে অপেক্ষায় থেকে ধৈর্যের বাঁধ ভেঙেছে যাত্রীদের। অনেকেই স্টেশনে শুয়ে পড়েছেন। সকাল সাড়ে দশটায় এগরার ইটাবেড়িয়া থেকে টাটানগর যাওয়ার জন্য খড়্গপুরে এসেছিলেন একদল রাজমিস্ত্রি। কিন্তু ট্রেন আসেনি। বাদল জানা, বুদ্ধদেব দাসরা বলছিলেন, “কাজে ঠিক সময়ে যোগ দিতে পারব কিনা বুঝছি না।” খড়্গপুরের নিউ সেটলমেন্টের রেলের জুনিয়ার ইঞ্জিনিয়ার এ মণি মা ও স্ত্রীকে নিয়ে আপ ফলকনামা এক্সপ্রেসের অপেক্ষায় ছিলেন। গন্তব্য সেকেন্দ্রাবাদ। সকাল ৯টার ট্রেন বেলা ২টোতেও আসেনি। ওই রেলকর্মী বলছিলেন, “দেশের বাড়িতে অনুষ্ঠান রয়েছে। ট্রেন কখন আসবে ঘোষণাও হয়নি। বয়স্ক মা’কে নিয়ে চিন্তা হচ্ছে।”

অপেক্ষা করেও ট্রেন না আসায় এ দিন টিকিট বাতিলের হিড়িকও দেখা গিয়েছে। দিনের শেষে টিকিট বাতিল করেছেন বহ্নিশিখাদেবীরাও। তবে ট্রেন বাতিল ঘোষিত না হওয়ায় টিকিটের পুরো টাকা ফেরত পাওয়া যায়নি। বহ্নিশিখাদেবীর স্বামী শিক্ষক সত্যব্রত দাসের ক্ষোভ, “ঘন্টার পর ঘন্টা দেরি হলেও ট্রেন বাতিল হয়নি। টিকিট বাতিল করতে গিয়ে গুনাগার দিতে হল। এটা ঠিক নয়। প্রাকৃতিক বিপর্যয় হতেই পারে। তবে রেলের ব্যবস্থা উন্নত করা প্রয়োজন।”

খড়্গপুরের এডিআরএম মনোরঞ্জন প্রধান বলেন, ‘‘টিকিয়াপাড়া কারশেডে লাইনের উপর এক ফুটের বেশি জল। তাই
কিছু লোকাল ট্রেন বাতিল করা হয়েছে। এক্সপ্রেস দেরিতে হলেও চলছে। আর টিকিট বাতিল নিয়ে প্রথমে কিছু সমস্যা হয়েছিল। পরে তা মিটে গিয়েছে।’’

Railway waterloged delayed
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy