Advertisement
০৬ মে ২০২৪
WBSEDCL

পুজোর মরসুমে বাড়বে হুকিং! রুখতে অভিযান

রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার সূত্রের খবর, পূর্ব মেদিনীপুরে মাসে গড়ে ৫০০ মেগাওয়াট ইউনিট বিদ্যুৎ খরচ হয়। এর মধ্যে বিল আদায় হয় গড়ে ৭৫-৮০ শতাংশ ইউনিটের!

—প্রতীকী চিত্র।

—প্রতীকী চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কাঁথি শেষ আপডেট: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৭:৫৪
Share: Save:

পুজোর মরসুম আসতেই বিদ্যুৎ চুরির বিষয়ে সতর্ক বিদ্যুৎ বন্টনকারী সংস্থা। এই মরসুমে হুকিং করে বিদ্যুৎ চুরির ঘটনা বাড়ায় তা ‘ডব্লুবিএসইডিসিএল’-এর মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে আধিকারিকদের কাছে। তা রুখতে অভিযান শুরু করা হয়েছে। বিদ্যুৎ চুরির অভিযোগে কয়েক জনের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগও দায়ের করা হয়েছে। চলতি মাসে সেই অভিযোগের সংখ্যাটা হল ৬।

গত ৫ সেপ্টেম্বর কাঁথি-৩ ব্লক এলাকায় অভিযান চলে। মারিশদা কাস্টমার সার্ভিস কেয়ারের তত্ত্বাবধানে হকিং বিরোধী ওই অভিযানে পশ্চিম পারুলিয়া এবং পশ্চিম সরপাই গ্রামে কয়েক জনের বাড়িতে বিদ্যুতের খুঁটি থেকে বেআইনি ভাবে সংযোগ নিতে দেখে যায়। তাঁদের কাছ থেকে বেশ কিছু বিদ্যুতের সরঞ্জাম বাজেয়াপ্ত করা হয়। এরপর পশ্চিম পারুলিয়া গ্রামের প্রদীপ দেবনাথ, বাদল দেবনাথ এবং শত্রুঘ্ন দেবনাথ ও পশ্চিম সরপাই গ্রামের বাসিন্দা রতন জানার বিরুদ্ধে মারিশদা থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন আধিকারিকেরা। একই রকম ভাবে ১১ সেপ্টেম্বর কাঁথি শহর সংলগ্ন খাগড়াবনি এলাকায় দুজনের বাড়িতে হুকিং হাতেনাতে ধরে ফেলেন দফতরের আধিকারিকেরা। পরে স্বপন সিংহ এবং আকবর রহমান নামে দুজনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ জানানো হয়। কয়েক মাস আগে এগরায় এক জায়গায় বিদ্যুৎ চুরির বিরুদ্ধে অভিযানে গিয়ে তাজ্জব হয়ে যান বণ্টন সংস্থার ইঞ্জিনিয়ার ও কর্মীরা। পাঁচ ফুট মাটির নীচ দিয়ে বিদ্যুতের তার টেনে হুকিং করে বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার মতো ঘটনা সামনে আসে সে সময়। তবে অনেক জায়গায় অভিযানে গিয়েও প্রতিরোধের মুখে পড়তে হচ্ছে বণ্টন সংস্থার কর্মীদের। বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার রিজিওনাল ম্যানেজার দীপককুমার মণ্ডল বলেন, ‘‘জেলায় হুকিং বিরোধী অভিযান ধারাবাহিকভাবে চলছে। যে কারণে বিদ্যুৎ চুরির ঘটনায় অনেকটাই রাশ টানা গিয়েছে। লোকসানও উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে।’’ তাঁর কথায়, ‘‘রাজস্ব আদায় বাড়ানোর লক্ষ্যে সচেতনতা বাড়াতে প্রচার ও গ্রাহক পরিষেবা মেলাও হয়েছে।’’

রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার সূত্রের খবর, পূর্ব মেদিনীপুরে মাসে গড়ে ৫০০ মেগাওয়াট ইউনিট বিদ্যুৎ খরচ হয়। এর মধ্যে বিল আদায় হয় গড়ে ৭৫-৮০ শতাংশ ইউনিটের! বাকি ২০ শতাংশ বিদ্যুৎ চুরি হচ্ছে বলে অভিযোগ। জেলার মারিশদা, এগরা, পটাশপুর, অমর্ষি, নন্দীগ্রাম, রেয়াপাড়া এবং পাঁশকুড়া ব্লকে হুকিংয়ের জেরে ক্ষতির বহর বেশি বলে দাবি।

এদিকে, বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে ক্ষতির বহর কমিয়ে আয় বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এর পরেই কয়েক মাস আগে নড়েচড়ে বসেছেন দফতরের কর্তারা। বিদ্যুৎ চুরি রুখতে বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার ভিজিল্যান্স টিম গত এক বছরে জেলা জুড়ে অভিযান চালিয়ে ২ কোটি ২১ লক্ষ টাকা জরিমানা আদায় করেছে। ২৬১ জনের বিরুদ্ধে বিদ্যুৎ চুরির জন্য এফআইআর দায়ের করেছে ‘সিকিউরিটি অ্য়ান্ড লস প্রিভেনশন’ বিভাগ। এছাড়া, ২৯টি কাস্টমার সার্ভিস এলাকায় আরও অন্তত এক হাজার জনের বিরুদ্ধে এফআইআর হয়েছে। তবে এত অভিযোগ হলেও তেমন ভাবে কেউই গ্রেফতার হয়নি বলে পুলিশ সূত্রে খবর। দাবি, ধরপাকড় না হওয়ায় বিদ্যুৎ চুরি সংক্রামক ব্যধির আকার নিয়েছে।

জেলায় মাছের ভেড়িতেও বেআইনিভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ ব্যবহারের অভিযোগ এসেছে বিস্তর। বিদ্যুৎ চুরি ঠেকানো সম্ভব হচ্ছে না কেন? এ প্রসঙ্গে ‘অল বেঙ্গল ইলেকট্রিসিটি কনজিউমারস অ্যাসোসিয়েশন’ (অ্যাবেকা) এর পূর্ব মেদিনীপুর জেলা কমিটির অফিস সম্পাদক নারায়ণচন্দ্র নায়েকের অবশ্য ব্যাখ্যা, ‘‘লক্ষ্য করা যায়, গ্রাহক নতুন বিদ্যুৎ সংযোগের আবেদন করেও তা পাচ্ছেন না। ফলস্বরূপ তখন কোনও কোনও ক্ষেত্রে গ্রাহক বিদ্যুৎ চুরি করতে বাধ্য হচ্ছেন। অনেক সময় মিটার পুড়ে যাওয়ার পর মিটার সরবরাহ করতে কর্তৃপক্ষ অনেক সময় দেরি করেন। সেই সময় বাধ্য হয়েই গ্রাহক বিদ্যুৎ
চুরি করেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Contai
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE