Advertisement
E-Paper

পার্ক বাড়ন্ত, রেলশহরে বিপন্ন শৈশব

তিন বছর হতে না হতেই কাঁধে বইয়ের ব্যাগ। স্কুল থেকে বাড়ি ফিরে সেই চার দেওয়ালেই আটকে জীবন। বিনোদন বলতে টিভির পর্দায় কার্টুন। ইচ্ছে থাকলেও বাইরে খেলতে যাওয়ার জো নেই। কারণ, খড়্গপুর শহরে পার্ক নেই বললেই চলে।

দেবমাল্য বাগচী

শেষ আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০২:২৩
খড়্গপুরের সুষমাপল্লিতে পার্ক তৈরির কাজ শুরু হয়েছে (বাঁ দিকে)। জল-কাদায় বেহাল সুভাষপল্লির নেতাজি সুভাষ পার্ক (ডান দিকে)।  নিজস্ব চিত্র।

খড়্গপুরের সুষমাপল্লিতে পার্ক তৈরির কাজ শুরু হয়েছে (বাঁ দিকে)। জল-কাদায় বেহাল সুভাষপল্লির নেতাজি সুভাষ পার্ক (ডান দিকে)। নিজস্ব চিত্র।

তিন বছর হতে না হতেই কাঁধে বইয়ের ব্যাগ। স্কুল থেকে বাড়ি ফিরে সেই চার দেওয়ালেই আটকে জীবন। বিনোদন বলতে টিভির পর্দায় কার্টুন। ইচ্ছে থাকলেও বাইরে খেলতে যাওয়ার জো নেই। কারণ, খড়্গপুর শহরে পার্ক নেই বললেই চলে।

১৯৫৪ সালে জন্ম খড়্গপুর পুরসভার। অথচ পুর এলাকায় সে ভাবে পার্ক গড়ে তোলা হয়নি। বছর খানেক আগে রেলের দু’টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলরদের উদ্যোগে পার্ক হয়েছে। আর পুর এলাকার একটি ওয়ার্ডে বেহাল পার্ক সদ্য সংস্কার শুরু করেছে পুরসভা। এর বাইরে শহরের বেশিরভাগ ওয়ার্ডেই পার্ক নেই। পুর-কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, জমির অভাবেই এই অবস্থা। শহরবাসী যদিও এ জন্য পুর-উদাসীনতাকে দায়ী করছেন।

পুর-বিধি অনুযায়ী, প্রতি ওয়ার্ডে একটি করে বিনোদনের ক্ষেত্র গড়ে তোলার কথা। কিন্তু খড়্গপুরে ৩৫টি ওয়ার্ডের মধ্যে দু’টি রেল ওয়ার্ড ও একটি পুর ওয়ার্ড ছাড়া কোথাও কোনও পার্ক নেই। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ১১ নম্বর ওয়ার্ডের পার্ক আবার বেহাল। ভেঙেছে পাঁচিল, উধাও বসার চেয়ার, স্লিপ, দোলনা, গাছ। সম্প্রতি আমরুট প্রকল্পে এই পার্কের সংস্কার শুরু করেছে পুরসভা। বছর খানেক আগে পুরপ্রধানের নিজের ২০ নম্বর ওয়ার্ডে রেলের জমিতে একটি পার্ক গড়া হয়েছে পুরসভার পক্ষ থেকে। সেখানে ভিড়ও হচ্ছে। এ ছাড়া রেলের ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে স্থানীয় কাউন্সিলরের উদ্যোগে একটি পার্ক হয়েছে। তবে রেলের জমিতে ওই পার্কের ভবিষ্যৎ নিয়ে রয়েছে আশঙ্কা। স্থানীয়দের মতে, রেলের জমিতে বেআইনিভাবে তৈরি ওই পার্ক রেল কর্তৃপক্ষ মানবেন না।

এর বাইরে শহরের ৩২টি ওয়ার্ডে পুরসভার তৈরি কোনও পার্ক নেই। ৩টি ওয়ার্ডে স্থানীয় ক্লাব বা প্রতিষ্ঠান ছোট পার্ক গড়েছে বটে। আর রেল এলাকার ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে একমাত্র সাউথ ইস্ট ডেভেলপমেন্ট এলাকায় রেলের উদ্যোগে হয়েছে পার্ক। পুরসভার দাবি, জমির অভাবে প্রতি ওয়ার্ডে পার্ক করা যাচ্ছে না। যদিও শহরবাসীর পাল্টা যুক্তি, প্রোমোটাররা তো জমি খুঁজে একের পর এক বহুতল নির্মাণ করছেন। তাহলে পুরসভা কেন পার্কের জমি পাচ্ছে! ৩ নম্বর ওয়ার্ডের শেখ আখতার বলেন, “বাড়িতে দু’টো বাচ্চা। স্কুল থেকে ফিরে ওরা বাড়িতেই থাকে। খেলাধুলো করার জায়গা নেই। প্রমোটারেরা একের পর এক ফ্ল্যাট তুলছে। আর পুরসভা বলছে জমি নেই। একটা পার্ক না হলে ছেলেমেয়েরা খেলবে কোথায়!”

স্থানীয়দের দাবি, ২০১৫ সালে পুরবোর্ডের হাতবদলের পরে প্রতিটি ওয়ার্ডে পার্ক গড়ার কথা জানানো হয়েছিল। কিন্তু এখনও পর্যন্ত অধিকাংশ ওয়ার্ডে সেই পদক্ষেপ করেনি পুরসভা। এমনকী শহরের ছোট মাঠগুলিও সংস্কার হয়নি বলে অভিযোগ। ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের ইসরাপুকুরের বাসিন্দা শঙ্কর সাউয়ের কথায়, “এলাকার ছেলেমেয়েরা সারাদিন পড়াশুনোয় ব্যস্ত। পুরসভা এই খুদেদের মনোরঞ্জনের জন্য কিছু ভাবেনা। পার্ক তো নেই। এলাকার একটা ছোট মাঠ আছে, সেটাও নোংরা।” এই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তুষার চৌধুরী পূর্ত বিভাগের পুর-পারিষদ। তাঁর ওয়ার্ডের সাঁজোয়াল শিবমন্দির এলাকার সপ্তম শ্রেনির ছাত্র সমীর আদগিরির আক্ষেপ, “স্কুল থেকে বাড়িতে ফিরে কার্টুন দেখি। খেলার তো জায়গা নেই। অনেক দূরে রেলের পার্কে একবার গিয়েছিলাম। খুব মজা হয়েছিল। এখানে এরকম পার্ক হলে খুব ভাল হত।”

পুর-কর্তৃপক্ষ কি শুনছেন?

পুরপ্রধান প্রদীপ সরকার বলেন, “প্রতিটি ওয়ার্ডে পার্ক দরকার এটা আমিও মানি। তবে এ ক্ষেত্রে স্থানীয় কাউন্সিলরদের উদ্যোগী হতে হবে। আমরা আমরুট প্রকল্পে ইতিমধ্যেই শহরের ৫টি পার্ক গড়া ও সংস্কারে জোর দিয়েছি। জমির অভাব রয়েছে। তবু আরও পার্ক যাতে গড়া যায় সেই চেষ্টা করব।”

parks
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy