Advertisement
০৬ মে ২০২৪
Fake Maoist

চাকরি পেতে ভুয়ো মাওবাদী, কবুল পুলিশের

গত বছর ১৮ মে ঝাড়গ্রাম স্টেডিয়ামে মুখ্যমন্ত্রীর সভা থেকে মাওবাদী পুনর্বাসন প্রকল্পে ৩১ জনকে স্পেশাল হোমগার্ডের চাকরি দেওয়া হয়।

শহিদ স্মৃতিতে শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন রাজ্য পুলিশের এডিজি সঞ্জয় সিং। নিজস্ব চিত্র

শহিদ স্মৃতিতে শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন রাজ্য পুলিশের এডিজি সঞ্জয় সিং। নিজস্ব চিত্র

রঞ্জন পাল
শিলদা শেষ আপডেট: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৬:৫৮
Share: Save:

ভুয়োয় ভরা ভুবন!

এতদিন মিলছিল ভুয়ো মাওবাদী পোস্টার। এ বার খোদ পুলিশ জানাল, পুনর্বাসন প্যাকেজের চাকরি পেতে অনেকেই সেজেছিলেন ভুয়ো মাওবাদী। পুলিশের এই স্বীকারোক্তিকে কাজে লাগিয়ে মাঠে নামল বিরোধীরা। তাদের বক্তব্য, মুখ্যমন্ত্রী যতই বড়াই করুন না কেন, এর থেকেই বোঝা যাচ্ছে রাজ্যে কর্মসংস্থানের হাল কী।

বুধবার শিলদা চক্রের শহিদ স্মরণ অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে রাজ্য পুলিশের এডিজি (পশ্চিমাঞ্চল) সঞ্জয় সিং বলেন, ‘‘ঝাড়গ্রাম জেলা থেকেই এক হাজারের থেকে বেশি মানুষ চাকরি পেয়েছে। আরও কিছু আবেদন রয়েছে। যেগুলো বাকি রয়েছে। সেগুলি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। অনেক ভুয়ো আবেদন রয়েছে। যাঁরা সত্যি মাওবাদী নন, অন্য কোনও মামলায় নাম রয়েছে তাঁদের অনেকে আবেদন করেছেন। ওঁদেরকে যদি চাকরি দেওয়া হয় সত্যি যাঁরা মাওবাদী ছিলেন তাঁদের ক্ষোভটা বাড়বে। এ জন্য সবকিছু খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’

গত বছর ১৮ মে ঝাড়গ্রাম স্টেডিয়ামে মুখ্যমন্ত্রীর সভা থেকে মাওবাদী পুনর্বাসন প্রকল্পে ৩১ জনকে স্পেশাল হোমগার্ডের চাকরি দেওয়া হয়। তাঁদের মধ্যে একজন আত্মসমর্পণকারী মাওবাদী ও চারজন মাওবাদী হানায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যদের হাতে নিয়োগপত্র মুখ্যমন্ত্রী নিজে তুলে দিয়েছিলেন। পুলিশ সূত্রে খবর, ওই তালিকায় মোট ৩২ জনের চাকরির নাম ছিল। মুখ্যমন্ত্রীর অনুষ্ঠান শুরুর কিছুটা আগে শীর্ষ পুলিশ মহল জেলায় ফোন আসে ওই চাকরির তালিকায় ঝাড়গ্রাম ব্লকের বাঁধগোড়া এলাকার একজনের ‘ভুয়ো’ নাম রয়েছে। তড়িঘড়ি করে দেখা যায় ওই ব্যক্তির পরিবারের কেউ মাওবাদী হানায় মারা যায়নি। মোরগ লড়াইয়ে ঝামেলাকে কেন্দ্র করে খুনের ঘটনায় মৃত্যু হয়েছিল। ওই ব্যক্তিকে বাদ দেওয়া হয়েছিল। পুলিশ সুপার অরিজিৎ সিনহা বলেন, ‘‘ওই ঘটনার পর থেকে আরও বেশি স্ক্রিনিং করে নামের তালিকা রাজ্যে পাঠাতে বলা হয়েছিল।’’ মাওবাদী হানায় নিহত ও নিখোঁজ পরিবারের লোকজন যৌথমঞ্চ গড়ে চাকরির জন্য একাধিকবার প্রশাসনের কাছে দরবার করেছেন। যৌথমঞ্চের সম্পাদক শুভঙ্কর মণ্ডল বলছেন, ‘‘এখন পর্যন্ত আমাদের সংগঠনের ২৪০ জনের মত চাকরি পায়নি। আমাদের তরফ থেকে ভুয়ো নাম জমা দেওয়া হয়নি।’’ তবে শুভঙ্করের দাবি, ‘‘অনেকের নামে কোনও মামলা ছিল না তাঁরা চাকরি পেয়ে গিয়েছেন। প্রমাণ রয়েছে।’’

গত বছর ভুয়ো পোস্টার শোরগোল পড়েছিল জেলায়। ভুয়ো পোস্টার কাণ্ড ও মাওবাদীদের নাম করে টাকা তোলার ঘটনায় ১৯ জনকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। যার মধ্যে দু’জন হোমগার্ড ও দু’জন পুলিশের ইনফর্মার ছিল। আবার লালগড় থানা এলাকার হদহদি গ্রামের বাসিন্দা নিরঞ্জন মাহাতো ওরফে হৃষিকেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা থাকলেও গ্রেফতার না হওয়ায় প্যাকেজে চাকরি পাওয়ার জন্য আদালতে আত্মসমর্পণ করে ১২ বছরের পুরনো মামলায় ১২ দিন জেল খেটেছিলেন। প্রশ্ন উঠছে ভুয়ো পোস্টারের সঙ্গে ভুয়ো মাওবাদীদের কি সম্পর্ক রয়েছে। চাকরি পেতেই কি সব পরিকল্পনা!

সিপিএমের জেলা সম্পাদক প্রদীপকুমার সরকার বলেন, ‘‘রাজ্যে শিক্ষক নিয়োগে টাকার বিনিময়ে দালাল চক্র কাজ করেছে। এক্ষেত্রে মাওবাদী প্যাকেজের নামে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার নামে দালাল চক্র কাজ করেছে। সেটাও বেরিয়ে আসছে।’’ জেলা বিজেপির সহ-সভাপতি দেবাশিস কুণ্ডু বলেন, ‘‘এ রাজ্যে যারা মাওবাদী তাদের জন্য সরকারের চাকরি রয়েছে, শিক্ষিতদের জন্য চাকরি নেই। চাকরির আকালের জন্য মাওবাদীদের ক্ষেত্রে ভুয়ো আবেদন জমা পড়ে যাচ্ছে।’’

জেলা তৃণমূলের সভাপতি দুলাল মুর্মু বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী মাওবাদীদের মূলস্রোতে ফিরিয়ে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের লোকজনকে চাকরি দিয়েছেন। নকল কি আসল সেটা পুলিশ-প্রশাসন দেখছেন। যদি ভুয়ো হয়ে থাকে সেটা বিরোধীরা করিয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Maoist West Bengal Police Sanjay Singh
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE