Advertisement
০২ মে ২০২৪

গ্যাস-ধোঁয়ায় রাতভর আতঙ্ক

সারা রাত ধরে পুড়ল সালফার। বিষাক্ত ধোঁয়ায় সাদা হয়ে গেল বিস্তীর্ণ এলাকা। দুর্গাচক শিল্পতালুকে সোমবার রাতে আগুন লাগে এক বেসরকারি গুদামে। কয়েক টন সালফার আগুনে পুড়ে গিয়েছে বলে অনুমান পুলিশের।

ভস্মীভূত: কারখানায় পুড়ে যাওয়া যন্ত্রাংশ। নিজস্ব চিত্র

ভস্মীভূত: কারখানায় পুড়ে যাওয়া যন্ত্রাংশ। নিজস্ব চিত্র

আরিফ ইকবাল খান
হলদিয়া শেষ আপডেট: ০১ মার্চ ২০১৭ ০০:৩৯
Share: Save:

সারা রাত ধরে পুড়ল সালফার। বিষাক্ত ধোঁয়ায় সাদা হয়ে গেল বিস্তীর্ণ এলাকা। দুর্গাচক শিল্পতালুকে সোমবার রাতে আগুন লাগে এক বেসরকারি গুদামে। কয়েক টন সালফার আগুনে পুড়ে গিয়েছে বলে অনুমান পুলিশের। হলদিয়া দমকল কেন্দ্রের তিনটি ইঞ্জিন সারারাতের চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। কিন্তু ততক্ষণে টন টন সালফার মিশে গিয়েছে বাতাসে। আর তারপরেই প্রশ্ন চিহ্নের সামনে দাঁড়িয়ে পড়েছে শিল্পশহরের নিরাপত্তা।

পুলিশ ও প্রশাসনের দিকেও আঙুল তুলছেন বাসিন্দারা। তাঁদের অভিযোগ, ওই গুদামে কোনও অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ছিল না। সোমবার রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ ঝাঁঝালো গন্ধ টের পান তাঁরা। খবর দেন দমকলে। কিন্তু বহুক্ষণ আগুন নেভানোর কাজ শুরুই করতে পারেনি দমকল। এক দমকল কর্মী স্বীকারও করেছেন, অতিদাহ্য রাসায়নিকে লাগা আগুন কী ভাবে নেভাবেন, তা ভাবতেই খানিকটা সময় চলে যায়। গ্যাসের গন্ধে অসুস্থ হয়ে পড়েন বেশ কয়েকজন দমকল কর্মী। শেষ পর্যন্ত গুদামের একদিকের দেওয়ার ভেঙে আগুন নেভানোর কাজ করেন তাঁরা। ভোরের দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। প্রাথমিক ভাবে দমকলের অনুমান, শর্ট সার্কিট থেকেই আগুন লেগেছে।

এ দিকে মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত পুলিশ ওই গুদাম মালিকের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেয়নি বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের। এমনকী কোনও মামলা শুরু করা হয়নি। ওই গুদামে রাসায়নিক মজুত রাখার জন্য পুলিশ ও রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের কোনও অনুমতি ছিল কি না, তাও জানা যায়নি। হলদিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কাজি সামসুদ্দিন আহমেদ অবশ্য বলেন, ‘‘শিল্পতালুকে অবৈধ ভাবে রাসায়নিক জড়ো করে রাখা হতে পারে। সে ক্ষেত্রে আমাদের সব দিক খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নিতে হবে। কোনও বাসিন্দা অভিযোগ দায়ের করলে মামলা শুরু হবে।’’ তিনি জানিয়েছেন মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ওই গুদামের মালিককে হলদিয়া থানায় ডেকে পাঠানো হয়েছে। যদিও থানায় হাজির হননি গুদাম মালিক। তবে মহকুমাশাসক পূর্ণেন্দুশেখর নস্কর বলেন, ‘‘কড়া পদক্ষেপ করতে পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছি।’’

এলাকায় গিয়ে দেখা যায় সম্পূর্ণ ভস্মীভূত গুদাম। সামনে দাঁড়িয়ে থাকা একটি ট্রাকও পুড়ে খাক হয়ে গিয়েছে। বাতাসে ঝাঁঝালো গন্ধ। সারা রাত আতঙ্কে কাটিয়েছেন এলাকার বাসিন্দারা। ক্ষুদিরাম স্কোয়ারের বাসিন্দা ইমদাদুল হোসেন বলেন, ‘‘রাত যত বেড়েছে তত বেড়েছে চোখ জ্বালা আর শ্বাসকষ্ট!’’ অনেকেই বলছেন, এমন ভাবে গ্যাসের গন্ধ হামেশাই ছড়ায় হলদিয়ায়। পুলিশ ব্যবস্থা নেয় না। তাঁরা বলছেন, পুলিশের একাংশের মদতেই তৈরি হচ্ছে এ ধরনের গুদাম। খবরও পাচ্ছে না দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ।

সারারাত যে ভাবে বাতাসে মিশেছে বিষাক্ত রাসায়নিক, তাতে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরাও। শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ আশিস ভক্তা জানান, সালফার পুড়ে বাতাসে মিশেছে। তা জলীয় বাষ্পের সঙ্গে মিশে তা সালফিউরিক অ্যাসিডে পরিণত হবে। ভবিষ্যতে ওই এলাকায় অ্যাসিড বৃষ্টির সম্ভাবনা । এতে শ্বাসকষ্ট, ত্বকের রোগ হওয়ার সম্ভাবনা। বেশি ক্ষতি শিশুদেরই।

প্রশাসনের উদাসীনতা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন বাসিন্দারা। তাঁদের দাবি, ওই রাতে যখন গ্যাসের গন্ধে তাঁরা আতঙ্কিত তখন প্রশাসন অন্তত মাইকে প্রচার করতে পারত। ঠিক কী হয়েছে তা জানিয়ে আশ্বস্ত করতে পারত। টিকি পাওয়া যায়নি বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Fire spreading Public Panic
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE