Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Jhragram

বন্যপ্রাণী বাঁচাতে দল গড়ছেন বাঘ-প্রেমী

প্রাণীটি আদৌ বাঘ কিনা নিশ্চিত করেনি বন দফতর। তবে পায়ের ছাপ দেখে বাঘ-বিশেষজ্ঞদের একাংশ জানাচ্ছেন, বাঘ হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।

—ফাইল চিত্র

—ফাইল চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০২০ ০০:১৫
Share: Save:

বেলপাহাড়ির জঙ্গল-রাস্তার ধারে পায়ের ছাপ পাওয়া অজানা প্রাণীটির সন্ধান মেলেনি। বন দফতরের দাবি, সে ঝাড়খণ্ডের ঘাটশিলার জঙ্গলে গিয়েছে।

প্রাণীটি আদৌ বাঘ কিনা নিশ্চিত করেনি বন দফতর। তবে পায়ের ছাপ দেখে বাঘ-বিশেষজ্ঞদের একাংশ জানাচ্ছেন, বাঘ হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। এই পরিস্থিতিতে বন্যপ্রাণী বাঁচাতে স্থানীয় যুবকদের নিয়ে সচেতন-দল গঠনের কাজ শুরু করেছেন বাঘ-প্রেমী রথীন্দ্রনাথ দাস। কলকাতার বাসিন্দা রথীন্দ্রনাথ ও তাঁর স্ত্রী গীতাঞ্জলি ২০১৯ সালে বাঘ বাঁচানোর বার্তা নিয়ে মোটরবাইকে ২৬৮ দিনে গোটা দেশ ঘুরেছেন। এ বার বাঘ বাঁচানোর আর্জি নিয়ে বিশ্বভ্রমণে যাওয়ার তোড়জোড় শুরু করেছেন দাস-দম্পতি। তার আগে ঝাড়গ্রামের জঙ্গলে ফের ‘বাঘুত ঠাকুরে’র হাজিরার সম্ভাবনা নাড়া দিয়েছে রথীন্দ্রনাথকে।

রথীন্দ্রনাথ চান, বন্যপ্রাণীর নিরাপত্তার স্বার্থে ঝাড়গ্রামের বনাঞ্চলকে অভয়ারণ্য ঘোষণা করা হোক। তবে এই দাবি এলাকা থেকেই ওঠা প্রয়োজন বলে তাঁর মত। আর তাই স্থানীয় যুবকদের নিয়ে সচেতন-দল গঠনের সিদ্ধান্ত। ইতিমধ্যে কয়েকটি দল গড়া হয়েছে। প্রথম পর্বে ওই দলের সদস্যদের নিয়ে জঙ্গল লাগোয়া এলাকায় বন্যপ্রাণীদের বাঁচানোর স্লোগান তুলে ফুটবল প্রতিযোগিতা হবে। বন্যপ্রাণীদের নামেই হবে এক -একটি খেলার দল।

বছর দু’য়েক আগে লালগড়ের জঙ্গলে বাঘের দেখা মিলেছিল। যদিও সেই বাঘকে মরতে হয়েছিল একদল শিকারীর হাতে। ঝাড়গ্রামের জঙ্গলে নানা ধরনের বন্যপ্রাণীই আছে। রথীন্দ্রনাথের মতে, ঝাড়খণ্ড ও ওড়িশার জঙ্গলে বাঘ রয়েছে। দুই রাজ্যের জঙ্গলের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে ঝাড়গ্রাম জেলার জঙ্গলের যোগসূত্র রয়েছে। তাই ভবিষ্যতে ঝাড়গ্রামের বনাঞ্চলে বাঘেদের স্থায়ী আস্তানা হওয়াটা অস্বাভাবিক নয়। স্থানাভাব, খাদ্যাভাব এবং অন্যান্য পরিবর্তনের সঙ্গে নিজেদের অস্তিত্ব বজায় রাখার তাগিদেই বাঘেরা নতুন এলাকা বিস্তারে বাধ্য হচ্ছে। জঙ্গলমহলের জঙ্গলগুলিতে উপযুক্ত পরিবেশও রয়েছে। সমস্যা একটিই, পর্যাপ্ত স্থান। অর্থাৎ একটি বাঘের নিরাপদে বেঁচে থাকতে ন্যূনতম ৫০ বর্গকিলোমিটার এলাকা প্রয়োজন। জঙ্গলের মাঝে-মাঝে লোকালয় থাকায় জঙ্গলমহলে তা নেই। ফলে, বাঘ ও অন্য বন্যপ্রাণীর সঙ্গে মানুষের সংঘাত অনিবার্য। যেটা হাতির দলের ক্ষেত্রে হচ্ছে।

ইতিমধ্যেই রথীন্দ্রনাথের ‘আমরা বুনো’ (উই ওয়াইল্ড) সংস্থার শাখার সদস্যরা ঝাড়গ্রাম জেলায় কাজ শুরু করেছেন। দলের সদস্য অঙ্গিরা ভট্টাচার্য, পিন্টু মাহাতোরা জঙ্গল লাগোয়া গ্রামবাসীদের বোঝাচ্ছেন, জঙ্গল না বাঁচলে বন্যপ্রাণীদের বাঁচানো সম্ভব নয়। তাই আতঙ্কিত না হয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন তাঁরা। রথীন্দ্রনাথের দাবি, ‘‘আদিবাসী যুব সম্প্রদায়ের একাংশকে আমরা পাশে পেয়েছি। বন দফতরের সহযোগিতায় তাঁদের প্রশিক্ষণ দিয়ে এলাকায় সচেতনতা-কর্মসূচির কাজে জোর দেওয়া হবে।’’

এমন উদ্যোগকে সমর্থন জানিয়ে ডিএফও (ঝাড়গ্রাম) বাসবরাজ হলেইচ্চি বলছেন, ‘‘ঝাড়গ্রামের বনাঞ্চলে শিকার উৎসব এখন আর হয় না। বন দফতরের পাশাপাশি, বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার প্রতিনিধিরাও সচেতনতার কাজ করছেন। এটা খুবই সদর্থক দিক।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE