Advertisement
E-Paper

হামলা চললে রেফার রোগ কমবে তো!

বৃহস্পতিবার রাতে বেলদা গ্রামীণ হাসপাতালে ঠিক কী হয়েছিল? প্রত্যক্ষদর্শীরা জানাচ্ছেন, রোগী মৃত্যুতে চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ নতুন কিছু নয়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে যেভাবে ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক আশিস মণ্ডলকে টেনে হিঁচড়ে বার করে এনে মারধর করা হয়েছে, তাঁর মোবাইল কেড়ে নেওয়া হয়েছে তাতে মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছেন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০১৮ ০২:৪১
—প্রতীকী ছবি।

—প্রতীকী ছবি।

রোগী দেখছেন চিকিৎসক। চোখে মুখে ভয়ের ছাপ স্পষ্ট। হাসপাতালের বিভিন্ন কোণেও বৃহস্পতিবার রাতে গোলমালের ঘটনা নিয়ে আলোচনা। এক চিকিৎসক তো বলেই ফেললেন, ‘‘যা হল তারপর কি আর মন দিয়ে কাজ করা যায়! এ জন্যই তো রেফারের সংখ্যা বাড়ছে। আমাদের নিরাপত্তা কোথায়?’’

বৃহস্পতিবার রাতে বেলদা গ্রামীণ হাসপাতালে ঠিক কী হয়েছিল? প্রত্যক্ষদর্শীরা জানাচ্ছেন, রোগী মৃত্যুতে চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ নতুন কিছু নয়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে যেভাবে ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক আশিস মণ্ডলকে টেনে হিঁচড়ে বার করে এনে মারধর করা হয়েছে, তাঁর মোবাইল কেড়ে নেওয়া হয়েছে তাতে মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছেন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা। শুক্রবার হাসপাতালে কর্তব্যরত এক নার্স বলেন, ‘‘নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে হয় আমাদের।’’ এক চিকিৎসক আবার বলছেন, ‘‘আমাদের উপর চাপ আসছে রেফার করা যাবে না। আমরা নির্দেশ মেনে চলার চেষ্টা করি। কিন্তু সরকারেরও আমাদের নিরাপত্তার দিকটা ভাবা উচিত। আমাদের প্রাণ সংশয় হলে ঝুঁকি নেব কেন?’’

হাসপাতাল সূত্রের খবর, রোগী কল্যাণ সমিতির তরফ থেকে প্রশাসনের কাছে হাসপাতালে নিরাপত্তারক্ষীর আবেদন করলেও তা পাওয়া যায়নি। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরা বলেন, ‘‘গ্রামীণ হাসপাতালগুলিতে নিরাপত্তারক্ষী রাখার নিয়ম নেই।’’ চিকিৎসকদের উপর হামলা হলে যে ‘রেফার’ রোগ বৃদ্ধির প্রবণতা বাড়ে তা স্বীকার করে নিয়ে তিনি বলেন, ‘‘পুলিশ সুপারকে বলে ব্যবস্থা করতে পারি। কিন্তু প্রয়োজন সামাজিক সচেতনতা।’’ ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক ঘটনা সম্পর্কে মন্তব্য করতে চাননি। তবে তাঁর ঘনিষ্ঠেরা জানিয়েছেন, আপাতত কয়েকদিন ছুটি নেওয়ার কথা ভাবছেন তিনি।

বৃহস্পতিবার এগারোটা নাগাদ বেলদার রসুলপুরের ছবিরঞ্জন প্রামাণিককে (৭০) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সর্দি, কাশি ও শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন তিনি। রাত ৯টা নাগাদ চিকিৎসা চলাকালীন তাঁর মৃত্যু হয়। রোগীর পরিজনের অভিযোগ, রোগী সুস্থ ছিলেন। নেবুলাইজার দেওয়ার সময় মারা যান তিনি। মৃত্যুর খবর পেয়ে পরিজনেরা জড়ো হন হাসপাতালে। অভিযোগ, ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিককে মারধর করা হয়। বেলদা থানা থেকে বিশাল পুলিশ বাহিনী এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। মৃত রোগীর ভাইপো অচিন্ত্য প্রামাণিক, আত্মীয় রজত মাঝির অভিযোগ, ‘‘চিকিৎসায় গাফিলতির কারণেই মৃত্যু হয়েছে। চিকিৎসকের শাস্তি চাই।’’ এক চিকিৎসক বলেন, ‘‘গাফিলতি ছিল না। সকাল থেকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা হয়েছে। বয়স বেশির জন্য হয়তো নেবুলাইজার নিতে পারেননি ওই রোগী।’’ রাত পর্যন্ত হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মারধরে যুক্তদের নামে কোনও লিখিত অভিযোগ করেনি। মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের অবশ্য দাবি, ‘‘বিএমওএইচের সঙ্গে পুলিশের কথা হয়েছে। আজ, শনিবার অভিযোগ করতে পারেন বিএমওএইচ।’’ তিনি জানিয়েছেন, মৃতের পরিবার বুধবার রাতে রোগীকে খাওয়ানোর পর তাঁর শ্বাসকষ্ট বেড়েছিল। মৃতের পরিবার ময়নাতদন্তে রাজি হয়নি।

Doctor Lynching Patient Refer
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy