পাশে: মলয় পাত্র। নিজস্ব চিত্র
মায়ের দেওয়া ৩০০ টাকার ভাঙা সাইকেল— তাতে চড়েই ২০১৬ সালে ১২০০ কিলোমিটার পাড়ি দিয়েছিলেন সদ্য উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করা এক কিশোর। দূষণমুক্ত ভারতের বার্তা দিয়ে ঘুরে এসেছিলেন কাশ্মীর থেকে কন্যা কুমারিকা। এবার তাঁর লক্ষ্য জাপান!
হলদিয়ার গুয়াবেড়া গ্রামের বাসিন্দা মলয় পাত্র। সাইকেলে বেরিয়ে পড়ায় তাঁর নেশা। মহিষাদল রাজ কলেজের ভূগোলে স্নাতকের ওই পড়ুয়া গত মার্চেই ফিরেছেন সাইকেলে নেপাল-ভুটান ভ্রমণ সেরে। যুব সমাজকে অনুপ্রাণিত করতে সম্প্রতি হলদিয়ার একটি স্কুলের ছেলেমেয়েদের তিনি শোনালেন নিজের অভিজ্ঞতার কথা।
মলয় জানালেন, ভারতের প্রতি রাস্তার প্রতি বাঁকেই রয়েছে রহস্য ও রোমাঞ্চ। আমাদের তা শুধু উপলব্ধি করতে হবে। ২০১৬ সালের অভিযান প্রসঙ্গে মলয় জানিয়েছেন, ভাঙা সাইকেলের ভোলবদলে কার্যত শূণ্য পকেটেই তিনি বেরিয়ে পড়েছিলেন। যখন পেরেছেন দূষণমুক্ত ভারত এবং সবুজায়নের বার্তা দিয়েছেন। সেবার দেশের বিভিন্ন এলাকার ১৮০টি থানা থেকে মলয় শংসাপত্র পেয়েছিলেন।
নেপাল-ভুটান প্রসঙ্গে মলয় বলেন, ‘‘ওখানে গ্রামের স্কুল-ঘরের অবস্থা খারাপ। তবে সেখানের মানুষ আন্তরিকভাবে আমার কথা শুনেছেন। অনেকেই নিজেদের বাড়িতে খেতে-থাকতে দিয়েছেন।’’ উত্তরপ্রদেশ ও হিমাচলপ্রদশে দুষ্কৃতীদের খপ্পরে পড়ার অভিজ্ঞতাও হয়েছে মলয়ের। তিনি জানান, একবার উত্তরপ্রদেশে তাঁকে সন্ত্রাসবাদী ভেবে পুলিশ আটক করেছিল। শেষে হলদিয়ার সুতাহাটা থানায় ফোন করে সব জানান তিনি। পরে সেখান থেকে ফোন যাওয়ার পরে মিলেছিল ছাড়। তবে ‘ভাল’ পুলিশের সঙ্গেও সাক্ষাৎ হয়েছে মলয়ের। তিনি জানিয়েছেন, এক পুলিস অফিসার ভালবেসে তাঁকে একটি দামি মোবাইলও উপহার দিয়েছেন।
যে স্কুলে মলয় গল্প শোনাতে গিয়েছিলেন, সেখানের এক শিক্ষক সঞ্জয়শোভন মান্না বলেন, ‘‘ছোটরা বেড়ানোর গল্প ভালবাসে। সেই রোমাঞ্চকর গল্প শোনানোর জন্য মলয় পাত্রকে স্কুলে আনা হয়েছিল।’’ আর মলয়ের অভিজ্ঞতার গল্প শুনে খুশি খুদে পড়ুয়ারা।
মলয় জানিয়েছেন, প্রথম যখন সাইকেলের পেছনে মুড়ি বেঁধে ভারত দর্শনে বেরিয়েছিলেন, তখন তাঁকে শুনতে হয়েছিল কটাক্ষ। কিন্তু ১৮০টি থানা ছুঁয়ে তিনি যখন ঘরে ফেরেন, তখন এলাকায় খুশির বন্যা হয়ে গিয়েছিল। খোদ জেলাশাসক রশ্মি কমল তাঁকে ডেকে উৎসাহ দেওয়ায় অভিভূত মলয়ও। তিনি বলেন, ‘‘দূষণ তাড়িয়ে সবুজ বাঁচাতে হবে, এটাই আমার স্বপ্ন। সেই স্বপ্নপূরণেই নেপাল ও ভুটান গিয়েছিলাম।’’
তবে এখানেই থেমে যেতে চান না মলয়। তিনি বলেন, ‘‘এখন আত্মবিশ্বাস বেড়েছে। তাই এ বছরই সাইকেলে মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া, হংকং, ভিয়েতনাম, মায়ানমার এবং জাপান যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।’’ ইতিমধ্যেই সে জন্য তিনি অর্থ জোগাড়ও করছেন। আর ওই তরুণকে সাহায্যের জন্য এগিয়ে এসেছেন অনেকেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy