লোকসভার ফল বলছে, দলের জনসমর্থনে ভাটা পড়েছে। সিপিএম নেতৃত্বও মানছেন, এই পরিস্থিতি রাতারাতি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব নয়। এই পরিস্থিতিতে ফলাফলের প্রাথমিক পর্যালোচনা করে ঘুরে দাঁড়ানোর পথ খুঁজতে শুরু করল পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সিপিএম। দলের এক সূত্রে খবর, আপাতত দলের সবস্তরে ১৪ দফা নির্দেশ পাঠানো হয়েছে। সেই মতো কজের কথা বলা হয়েছে।
সিপিএমের জেলা সম্পাদক দীপক সরকার বলেন, “আমরা ফলাফলের প্রাথমিক পর্যালোচনা করেছি। কিছু পদক্ষেপও করা হচ্ছে।” সিপিএম সূত্রে খবর, জেলা ও রাজ্যের নির্বাচনী পর্যালোচনা ও কেন্দ্রীয় কমিটির সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে দলকে রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক ভাবে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে এলাকাগত ভাবে সাধারণ সভা করারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
১৪ দফা নির্দেশে আর কী কী রয়েছে? জেলা নেতৃত্ব মনে করছেন, এই বিপর্যয় কাটিয়ে উঠতে গেলে এ বার স্থানীয় বিষয়কে গুরুত্ব দিতে হবে। নির্দেশে বলা হয়েছে, জনজীবনের জ্বলন্ত সমস্যাগুলো নিয়ে এলাকার পরিস্থিতি অনুযায়ী প্রচার-গণসমাবেশ-গণবিক্ষোভ-ডেপুটেশন সংগঠিত করতে হবে। বলা হয়েছে, পার্টিকর্মী কিংবা সাধারণ মানুষ আক্রান্ত হলে দ্রুত পদক্ষেপ করতে হবে। যথাযথ আইনি সুরক্ষার দাবিতে সম্ভাব্য নানা চেষ্টা চালাতে হবে। এ সব কাজে বামপন্থী আন্দোলনের গণ্ডীর বাইরের সহৃদয় মানুষকে আবেদন করতে হবে বলে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বস্তুত, দিন কয়েক আগেই দলত্যাগ করে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন জেলা পরিষদের প্রাক্তন সভাধিপতি তথা সিপিএম নেত্রী অন্তরা ভট্টাচার্য, সিপিআইয়ের শ্রমিক সংগঠনের জেলা কমিটির সদস্য অশোক সেনাপতিরা। অন্তরাদেবীদের বক্তব্য ছিল, লোকসভার ফল বেরোনোর পর বিভিন্ন এলাকায় দলের কর্মী-সমর্থকেরা আক্রান্ত হচ্ছেন। অথচ, নেতৃত্ব হস্তক্ষেপ করছেন না!
পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে নতুন কর্মীদের তালিকা তৈরিরও নির্দেশ দিয়েছেন নেতৃত্ব। বলা হয়েছে, প্রতিকূলতার মধ্যেও যে সব কর্মী কাজে ছিলেন, তাঁদের তালিকা তালিকা তৈরি করতে হবে। এঁদের নিয়ে পৃথক ভাবে রাজনৈতিক সাংগঠনিক আলোচনা করতে হবে। পার্টির সাংগঠনিক কাঠামোয় যুক্ত করতে হবে। নতুন কর্মীদের সাহসের সঙ্গে দায়িত্ব দিতে হবে এবং রাজনৈতিক চেতনা বাড়াতে হবে। পাশাপাশি, নিক্রিয়দের দ্রুত অব্যাহতি দেওয়ারও নির্দেশ দিয়েছেন নেতৃত্ব। এর পাশাপাশি জোনাল ও লোকাল কমিটির অফিসকে ‘কর্মচঞ্চল’ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। গণফ্রন্টগুলোর কাজ অবিলম্বে শুরু করতে বলা হয়েছে।
বস্তুত, একদা ‘লালদুর্গ’ বলে পরিচিত পশ্চিম মেদিনীপুরে লোকসভার ফল সিপিএম নেতৃত্বের কাছেও উদ্বেগজনক। জনসমর্থনে যে এতটা ভাটা পড়তে পারে, তার আগাম ইঙ্গিত ছিল না তাঁদের কাছে। ২০১১ সালের বিধানসভা ভোটে এ জেলায় বামেদের প্রাপ্ত ভোট ছিল ৪৪ শতাংশ। ২০১৩ সালের পঞ্চায়েতে তা কমে হয় ৩৪ শতাংশ। আর লোকসভায় তা আরও কমে হয়েছে ২৯ শতাংশ। যেখানে তৃণমূলের প্রাপ্ত ভোট ৫১ শতাংশ। নেতৃত্বের অবশ্য দাবি, যে সংখ্যক বুথে অবাধ ভোট হয়েছে, সেখানে বামেরা ৩৫ শতাংশ ভোট পেয়েছে। সিপিএম জেলা নেতৃত্বের মতে, জেলার মোট ৫,৩৩৭টি বুথের মধ্যে ‘সন্ত্রাস কবলিত’ বুথের সংখ্যা ১,৪১৬টি। এই সংখ্যক বুথে বৈধ ভোটের মধ্যে বামেরা পেয়েছে ২১.৫৮ শতাংশ ভোট। তৃণমূল পেয়েছে ৬৩.২৯ শতাংশ ভোট। ‘আধা সন্ত্রাস কবলিত’ বুথের সংখ্যা ৮৬৫টি। এই সংখ্যক বুথে বৈধ ভোটের মধ্যে বামেরা পেয়েছে ৩১.২৮ শতাংশ। তৃণমূল পেয়েছে ৫৪.৪২ শতাংশ। অন্যদিকে, ‘শান্তিপূর্ণ’ বুথের সংখ্যা ২,৬১৪টি। এই বুথে বৈধ ভোটের মধ্যে বামেরা ৩৪.৪০ শতাংশ, তৃণমূল পেয়েছে ৪৬.২৮ শতাংশ।
দলের এক সূত্রে খবর, আপাতত দলের সবস্তরে ১৪ দফা নির্দেশ পাঠিয়ে বুথ ভিত্তিক সংগঠন নাড়াচাড়া করার উপরও বেশি জোর দিচ্ছে জেলা সিপিএম। এই পদক্ষেপ ফলপ্রসূ হয় কি না, সেটাই দেখার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy