সামনের দোকানঘরের আড়ালে বেলদা মার্কেট কমপ্লেক্স।
ছাদ থেকে খসে পড়ছে পলেস্তারা। বিদ্যুতের তারে বেঁধে গিয়েছে জট। নেই গাড়ি রাখার খোলা পরিসরও। দু’দিকে আসা-যাওয়ার যেটুকু ফাঁকা পথ ছিল তা-ও জবরদখলে রুদ্ধ। বছর কুড়ি আগে আশার আলো জ্বালানো জেলা পরিষদের বেলদা সুপার মার্কেট কমপ্লেক্সের দশা এখন এমনই। দীর্ঘ নেইয়ের এই তালিকা নিয়ে ক্ষোভের অন্ত নেই মার্কেট কমপ্লেক্সের ব্যবসায়ীদের। তাঁদের অভিযোগ, জেলা পরিষদে বিস্তর অভিযোগ জানিয়েও সুফল মেলেনি। জেলা পরিষদের ক্ষমতার হাতবদলের পর বছর ঘুরতে চললেও অবস্থা তথৈবচ।
সোনালি চতুর্ভুজ প্রকল্পের খড়্গপুর-ভুবনেশ্বর ৬০ নম্বর জাতীয় সড়ক ছুঁয়ে গিয়েছে বেলদা শহরকে। এই শহরের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ৪ নম্বর রাজ্য সড়ক। রয়েছে রেলপথের সুবিধাও। বেলদা শহরকে ‘ওড়িশার প্রবেশদ্বার’ বলেও অনেকে চেনেন। যোগাযোগে সমৃদ্ধ এই শহর একসময় পুঁজিপতিদের নয়া ঠিকানা হয়ে উঠেছিল। বাঙালিদের পাশাপাশি এখানে ভিড় জমিয়েছিলেন ওড়িয়া, গুজরাতি ভাষাভাষি ব্যবসায়ীরাও। প্রথম দিকে মূল রাস্তার দু’ধারে একের পর এক ব্যক্তিগত দোকানের সারি পরিচিত হয়ে গিয়েছিল বেলদা বাজার নামে। ক্রমশ গঙ্গাধর আকাদেমির পিছনে তৈরি হয় নন্দ মার্কেট, দাঁতন বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন এলাকা পরিচিত হয় ‘দেশবন্ধু রুরাল মার্কেট’ নামে।
দোকান ঘরের ভিতরে ঝুলছে বৈদ্যুতিক তার।
১৯৮৮ সাল নাগাদ ঠিক হয় কেশিয়াড়ি যাওয়ার রাস্তার কাছে একটি মার্কেট কমপ্লেক্স তৈরি করা হবে। এতে যেমন ব্যবসায়ীদের জন্য বিকল্প ঠিকানা তৈরি হবে, তেমনই এলাকার কাছে গড়ে উঠবে একটা স্বতন্ত্র বাজার। আস্তে আস্তে গড়ে ওঠে একতলা ৩০টি স্টলের মার্কেট কমপ্লেক্স। ১৯৯৪ সাল নাগাদ কয়েকজন দোকানদার বিভিন্ন বর্গফুটের আয়তনের ঘরের ভিত্তিতে আবেদন জমা দিতেই মিলে যায় স্টল। সেই সময় ঠিক হয়, ওই মার্কেট কমপ্লেক্সের রক্ষণাবেক্ষণ থেকে নিরাপত্তাকর্মী, জলের ব্যবস্থা, বিদ্যুতের ব্যবস্থা সবই দেখভাল করবে জেলা পরিষদ। কিন্তু দোকানদারদের অভিযোগ, সব স্টল বিলি হতেই শুরু হয় অবহেলা। কমপ্লেক্সের দোকানিদের থেকে ভাড়ার টাকা আদায়কারীর আসাও বন্ধ হয়ে যায়। ক্রমশ সমস্যা হতে থাকে শৌচাগার পরিষ্কার, বিদ্যুতের কাজ, এমনকী কমপ্লেক্স মেরামতির কাজ নিয়ে।
স্থানীয় দোকানদারদের অভিযোগ, শুরু থেকেই এই কমপ্লেক্সের নির্মাণে ত্রুটি রয়েছে। কমপ্লেক্সের দক্ষিণ দিক বন্ধ থাকায় গরমে দোকান সামলানোই দায়। দিন পনেরো আগে দোকান করতে গিয়ে গরমে অসুস্থ হয়ে হৃদরোগে আক্রান্ত হন অর্ধেন্দু মাইতি। তিনি বলেন, “এত গরমে একতলা এই ঘিঞ্জি কমপ্লেক্সে বাতাস চলাচলের পথ নেই। দুপুরে কাজ করতে গিয়ে শ্বাসকষ্ট হতে শুরু করে।” মার্কেট কমপ্লেক্সটির সীমানা নির্ধারণ না থাকায় সামনে-পিছনে বাড়ছে জবরদখলও। নতুন দোকানের পিছনে ঢাকা পড়ে গিয়েছে পুরনো এই কমপ্লেক্স। ফলে কমেছে ক্রেতার আনাগোনা। মুনাফা না হওয়ায় ইতিমধ্যে বন্ধ হয়ে গিয়েছে দু’টো দোকানও। ব্যবসায়ীরা জানান, বছর দশেক আগে মার্কেট কমপ্লেক্সের কেয়ার-টেকার পূর্ণচন্দ্র নায়েক অবসর নেওয়ার পর থেকে দেখভালের কেউ নেই। তাঁদের দাবি, চাঁদা তুলে রাখা হয়েছে একজন নিরাপত্তাকর্মী। টিউবওয়েল খারাপ হলে তা-ও মেরামত করতে হয় দোকানিদেরই।
সমস্যার কথা জানিয়ে দোকানদাররা ২০১০ সালের ২২ ডিসেম্বর অভিযোগ জানিয়েছিলেন জেলা পরিষদে। তারপর ২০১১ সালের ৩ মার্চ ও পরে ১৮ মার্চ ফের করা হয় আবেদন। তবুও পরিস্থিতি বদলায়নি। অনেক সময়ে ভাড়ার টাকা বকেয়ার অভিযোগ তুলেছে জেলা পরিষদ। ব্যবসায়ীদের দাবি, সেই টাকা নিতে জেলা পরিষদের কোনও প্রতিনিধি আসেননি। মার্কেট কমপ্লেক্সের ব্যবসায়ী কমিটির সম্পাদক প্রদীপ দে, সভাপতি বিশ্বনাথ দে বলেন, “২০ বছর ধরে এ ভাবেই চলছে। জেলা পরিষদের অবহেলায় ব্যবসায় অনীহা বাড়ছে আমাদের। কেউ বকেয়া টাকা নিতে আসে না। একসঙ্গে এত মাসের বকেয়া মেটাতে গিয়ে সমস্যা বাড়ছে।”
তদানীন্তন বাম পরিচালিত জেলা পরিষদের কাছেই এই অভিযোগের সিংহভাগ জমা পড়লেও কিছুই হয়নি বলে অভিযোগ দোকানিদের। যদিও প্রাক্তন সভাধিপতি অন্তরা ভট্টাচার্য বলেন, “ব্যবসায়ীদের থেকে ভাড়ার টাকা নিয়ে আসা হত। কিন্তু সমস্যার কথা ওঁরা কখনও সরাসরি আমাকে জানাননি। তবে যেহেতুু দোকানিরা ভাড়া দিচ্ছেন, তাই তাঁদের স্বার্থ দেখা উচিত।” দিন কয়েক আগে তৃণমূল পরিচালিত জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ শৈবাল গিরি, ইঞ্জিনিয়র আবিরলাল বসু-সহ আধিকারিকরা ওই মার্কেট কমপ্লেক্স পরিদর্শনে গিয়েছিলেন। শৈবাল গিরির আশ্বাস, “সমস্যা ধীরে ধীরে সমাধান করবো। টাকা আদায়ের জন্য লোক পাঠানোর পাশাপাশি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে করা যায় কি না দেখবো।”
ছবি: রামপ্রসাদ সাউ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy