মাওবাদী-ঘনিষ্ঠ বলে ইউএপিএ-তে (বেআইনি কার্যকলাপ প্রতিরোধ আইন) অভিযোগ হয়েছিল। সেই মামলায় বেকসুর খালাস পেলেন পাঁচ বছর আগে খেজুরি থেকে ধৃত সাত জন। সরকারি বয়ানে ছাড় পাওয়ার কারণ উপযুক্ত তথ্য প্রমাণের অভাব। কিন্তু কেন উপযুক্ত তথ্যপ্রমাণের অভাব হল তা নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপান-উতোর।
শনিবার কাঁথি আদালতের অতিরিক্ত জেলা দায়রা বিচারক (দ্বিতীয়) শ্যামপ্রকাশ রজক ওই বেকসুর খালাসের নির্দেশ দেন। তবে সাম্প্রতিক অতীতে ইউএপিএতে অভিযুক্তের বেকসুর খালাসের নজির এ রাজ্যে আছে বলে মনে করতে পারেননি আইনজীবীরা। তাঁরা জানিয়েছেন, এ রাজ্যে ইউএপিএ-র মামলায় জামিন পাওয়ার দৃষ্টান্ত আছে। আর গত ডিসেম্বরে দিল্লির এক আদালত ইউএপিএ মামলায় বেকসুর খালাসের নির্দেশ দিয়েছিল ঝাড়খণ্ডের মাওবাদী নেতা সন্দেহে ধৃত যোগেন্দ্র সিংহ ভকতকে।
খেজুরির ঘটনাটি ২০১০ সালের ১৩ মে-র। মামলার সরকারি আইনজীবী গৌতম সামন্ত জানান, ওই দিন পুলিশ খবর পায়, ভাঙাবেড়া সেতুর কাছে মাওবাদীদের বৈঠকের খবর পেয়ে অভিযান চালায়। গ্রেফতার হন পানখাই গ্রামের সৌমেন মণ্ডল, সত্যরূপা দাস ও লুৎফর রহমান। পরে খেজুরির সাতখণ্ড সাহেবনগর গ্রামের রাধেশ্যাম দাস, হেমন্তচকের সিদ্ধার্থ মণ্ডল, নন্দীগ্রামের গাংড়া গ্রামের শুভ ওরফে সঞ্জয় দাস এবং হলদিয়ার দুর্গাচকের নারায়ণ মণ্ডল ওরফে মধুসূদনকে ধরা হয়। সরকারি আইনজীবী বলেন, “পুলিশ ধৃতদের বিরুদ্ধে ইউএপিএ আইনের ২০ ধারা (নিষিদ্ধ সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগ), অস্ত্র ও বিস্ফোরক আইনে মামলা দায়ের করেছিল।”
অভিযুক্তদের পক্ষের দুই আইনজীবী অসিত মাইতি ও ইকবাল হোসেন জানান, শেষমেশ পুলিশ অভিযোগের পক্ষে তথ্য-প্রমাণ আদালতে পেশ করতে পারেনি। মামলায় পুলিশের তরফের সাক্ষীরাও অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কিছু বলেননি। নারায়ণ ও রাধেশ্যাম বাদে বাকি পাঁচ জন আগেই জামিন পেয়ে গিয়েছিলেন। তবে অন্য মামলা থাকায় নারায়ণ ও রাধেশ্যাম এখনই জেল থেকে ছাড়া পাচ্ছেন না।
মাওবাদী-পর্বে ধরপাকড়ের সময়ে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে ইউএপিএ ধারা প্রয়োগের অভিযোগ বারবারই উঠেছে। বাম আমলে বিরোধী দল তূণমূলের অভিযোগ ছিল, পুলিশের সঙ্গে যোগসাজশ করে ক্ষমতাসীন সিপিএম পরিকল্পিত ভাবে দলের বহু কর্মী-সমর্থককে মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার করিয়েছে। ফলে, পরে আর প্রমাণ জোগাড় করতে পারেনি পুলিশ।
খেজুরির ঘটনাও কি তাই? তৃণমূল সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী বলেন, “বাম আমলে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে এমন অনেক মামলাই হয়েছে।” অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে খেজুরির সিপিএম নেতা হিমাংশু দাসের পাল্টা দাবি, “অভিযুক্তেরা এখন তৃণমূলের সঙ্গে সমঝোতা করায় হয়তো পুলিশ তথ্য-প্রমাণ জোগাড়ে সক্রিয় হয়নি।”
খেজুরির তৎকালীন ওসি অতনু সাঁতরারও দাবি, “নির্দিষ্ট প্রমাণ থাকাতেই অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ইউএপিএ ধারা দেওয়া হয়েছিল।” তা হলে পুলিশ আদালতে সে প্রমাণ দিতে পারল না কেন? অতনুবাবুর জবাব, “তিন বার মামলার তদন্তকারী অফিসার বদলেছে। আমিও দীর্ঘদিন মেদিনীপুরে নেই। ফলে, ঠিক কী হয়েছে জানি না।”
এ দিন যাঁরা বেকসুর খালাস পেলেন, তাঁরা অবশ্য দাবি করেছেন, কখনওই কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সক্রিয় ভাবে যুক্ত ছিলেন না। তা হলে পুলিশ তাঁদের মাওবাদী বলে ধরল কেন? বেকসুর খালাস পাওয়া লুৎফরের দাবি, এলাকায় একশো দিনের কাজ নিয়ে গোলমাল হয়েছিল। তারপরই পুলিশ ইউএপিএ মামলা দিয়ে দেয়! তাঁর কথায়, “মিথ্যে সেই অভিযোগ প্রমাণ হয়নি। এ দিন মুক্তি পাওয়ায় বিচার ব্যবস্থার উপরে শ্রদ্ধা আরও বাড়ল।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy