Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

উচ্ছ্বাস থাকুক, তবে আত্মতুষ্টি নয়: মুকুল

কর্মিসভায় ছিলেন আরও দু’জন। কিন্তু, যাবতীয় উন্মাদনা শুষে নিলেন তিনিই! শহরের অরবিন্দ স্টেডিয়ামে পশ্চিম মেদিনীপুরে তৃণমূলের ৩ প্রার্থীকে নিয়ে নির্বাচনী কর্মিসভার আয়োজন করা হয়েছিল। ছিলেন দেব, সন্ধ্যা রায় এবং উমা সরেন। সেখানেই প্রকট হল এই বিভাজন।

সভার নানা মুহূর্ত। এক ফ্রেমে জেলার তিন তৃণমূল প্রার্থী। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল।

সভার নানা মুহূর্ত। এক ফ্রেমে জেলার তিন তৃণমূল প্রার্থী। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ১৯ মার্চ ২০১৪ ০০:৩৩
Share: Save:

কর্মিসভায় ছিলেন আরও দু’জন। কিন্তু, যাবতীয় উন্মাদনা শুষে নিলেন তিনিই!

শহরের অরবিন্দ স্টেডিয়ামে পশ্চিম মেদিনীপুরে তৃণমূলের ৩ প্রার্থীকে নিয়ে নির্বাচনী কর্মিসভার আয়োজন করা হয়েছিল। ছিলেন দেব, সন্ধ্যা রায় এবং উমা সরেন। সেখানেই প্রকট হল এই বিভাজন। কর্মী-সমর্থকদের সিংহভাগ উন্মাদনা শুষে নিয়ে বাকি দু’জনকে তুলনায় নিস্প্রভ করে দিলেন আর কেউ নয়, অভিনেতা দেব।

প্রার্থী হিসেবে নাম ঘোষণা হওয়ার পর মঙ্গলবারই প্রথম জেলায় আসেন সন্ধ্যা রায়। কর্মিসভায় তিনি বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নে আপনারা সামিল হচ্ছেন। আমিও সামিল হতে চাই। সব ধর্মের মানুষের কাছে আবেদন, আসুন একসঙ্গে কাজ করি।” তাঁর কথায়, “রাজনীতিতে আমি নতুন। অভিনয় করি। আপনাদের সেবার জন্য আমি এখানে এসেছি। মনে হয়, আপনাদের মন ভরাতে পারব। আমার নিজের উপর এ বিশ্বাস আছে।” তৃণমূলের এই তারকা-প্রার্থী বলেন, “আমি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্বপ্নকে এগিয়ে নিয়ে যাব। আমি প্রাণের কথা বলি। আপনাদের ভালবাসা পেতে চাই।” পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটালে তৃণমূলের প্রার্থী হয়েছেন টলিউডের সুপারস্টার দেব। মেদিনীপুরে প্রার্থী হয়েছেন অভিনেত্রী সন্ধ্যা রায়।

ছন্দের প্রার্থীকে ক্যামেরাবন্দি করছেন এক অনুরাগিনী। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল।

ঝাড়গ্রামে প্রার্থী হয়েছেন পেশায় চিকিত্‌সক উমা সরেণ। ৩ জনের সব্বাই রাজনীতিতে আনকোরা। প্রার্থী তালিকা ঘোষণার হওয়ার পর কালীঘাটে এক বৈঠক করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রার্থীদের পাশাপাশি সেখানে দলের জেলা সভাপতিরাও উপস্থিত ছিলেন। জেলা সভাপতিদের সঙ্গে প্রার্থীদের পরিচয় করিয়ে দেন মমতাই। পরবর্তী সময় তারকা প্রার্থীরা একে একে জেলামুখো হন। ঝাড়গ্রামের উমা সরেন যেমন আগেই মেদিনীপুরে এসেছেন। নিজের নির্বাচনী এলাকায় গিয়ে ইতিমধ্যে বেশ কিছু রাজনৈতিক কর্মসূচিও করেছেন। কর্মিসভায় উমাদেবী বলেন, “দিদি জঙ্গলমহলের জন্য যে স্বপ্ন দেখেন, সেই স্বপ্নকে পূরণ করাই আমার একমাত্র লক্ষ্য। আসুন, আমরা সকলে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করি।”

সভায় উপস্থিত ছিলেন দুই মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র এবং সুকুমার হাঁসদা। ছিলেন জেলা পরিষদের সভাধিপতি উত্তরা সিংহ-সহ দলের বিধায়করা। তৃণমূলের দুই জেলা কার্যকরী সভাপতি প্রদ্যোত্‌ ঘোষ এবং নির্মল ঘোষও। দেবকে ঘিরে আবেগ-উচ্ছ্বাসের মধ্যেও নির্বাচনী প্রস্তুতি সভা থেকে কর্মীদের উদ্দেশে কিছু সাংগঠনিক বার্তা দেন দলের সর্ব ভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা সাংসদ মুকুল রায়। বুঝিয়ে দেন, বুথে বুথে জনসংযোগে আরও জোর দিতে হবে। তিনি বলেন, “আজ এ জেলায় এসে অত্যন্ত সহজ যে জিনিসটা মনে হচ্ছে, ’৯৮ থেকে ২০০৯ সালে কিন্তু তা ছিল না। আমি সেই সময় জেলায় এসে মৃত্যুর মিছিল দেখেছি। সিপিএমের অত্যাচার দেখেছি। মনে রাখবেন, কোনও যুদ্ধ শৃঙ্খলা ছাড়া হয় না। উচ্ছ্বাস- থাকবে। কর্মিসভা দেখে মনে হচ্ছে, জেলার তিনটি কেন্দ্রেই দলের প্রার্থীরা বিপুল ভোটে জিতবেন। তবু বলছি, আত্মবিশ্বাস ভাল। আত্মতুষ্টি ভাল নয়। আমরা জিতব। আমরা লড়াই করব। কিন্তু ওরা (বামেরা) নেই মনে করবেন না।”

কর্মীদের উদ্দেশে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সম্পাদক বলেন, “যিনি যে বুথের কর্মী, সেই বুথের দায়িত্ব তাঁকে নিতে হবে। সেই বুথ থেকে দলীয় প্রার্থীকে জেতাতে হবে। মনে রাখবেন, আপনারা অনেক কষ্টে গণতন্ত্র ফেরত পেয়েছেন। এ লড়াই আপনাদের লড়াই। এ লড়াই জিততেই হবে।” মুকুলবাবু বলেন, “২০০৯ এর ভোটের কথা নিশ্চয়ই মনে আছে। উপরে হেলিকপ্টার ঘুরেছে। ভোটগ্রহণের সময়সীমা ৩টে করতে হয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন রাজ্যের ক্ষমতা নিলেন, তখন পাহাড় জ্বলছে। জঙ্গলমহল রক্তাক্ত। আর এখন সব শান্ত। মানুষ হাসছে।” তাঁর কথায়, “আপনারা জেতার আগেই জেতাটা উপভোগ করতে চাইছেন। তাই বলছেন, দেবের সঙ্গে থাকব। সন্ধ্যা রায়ের সঙ্গে থাকব। উমা সরেনের সঙ্গে থাকব। মেদিনীপুরের মানুষ অনেক সংগ্রামী। এ লড়াই আমরাই জিতব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE