সিপিএম ও বিজেপি সমর্থকদের বাড়ি ভাঙচুর। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ।
দল বদলে বিজেপিতে যোগ দেওয়া ইস্তক বাড়ি ভাঙচুর, মারধরের মত ঘটনা চলছেই! মঙ্গলবারও পশ্চিম মেদিনীপুরের কেশিয়াড়ি ব্লকের বাঘাস্তি পঞ্চায়েতের কুলবনীতে বিজেপি সমর্থকদের বাড়ি ভাঙচুর ও লুঠপাটের অভিযোগ উঠল। এ ক্ষেত্রেও অভিযুক্ত শাসকদল তৃণমূল।
এ দিন সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ তৃণমূলের প্রায় শ’দেড়েক সমর্থকের হামলায় কুলবনি গ্রামের প্রায় আটটি বাড়ি ভাঙচুরের করা হয়েছে বলে অভিযোগ। ঘটনায় জখম হন এক মহিলা। ভাঙচুরে বাধা দিলে দুই মহিলার শ্লীলতাহানি করা হয় বলেও অভিযোগ। যদিও এ নিয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়নি।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, লোকসভার ফল বের হতে কেশিয়াড়ির কুলবনী এলাকার একটা বড় অংশের সিপিএম কর্মীরা বিজেপিতে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তাতে নাম লেখাননি কেবল প্রাক্তন সিপিএমের পঞ্চায়েত প্রধান বিমল ভুঁইয়া। ওই এলাকায় ক্ষমতায় রয়েছে তৃণমূল। অভিযোগ, বিজেপির শক্তিবৃদ্ধিতে আতঙ্কিত তৃণমূল ওই নেতা-কর্মীদের বাড়িতে ভাঙচুর লুঠপাট চালায়।
এ দিন কুলবনী গ্রামে গিয়ে দেখা গেল এলাকা থমথমে। পাড়ার দাঁড়িসাই মোড়ে রয়েছে পুলিশ। কিছু দূরে নিজেদের মধ্যে কথাবার্তা বলছেন গ্রামবাসীরা। এঁঁদের মধ্যেই লক্ষ্মী ঢুঙ্কি, তুফান কুঁইল্যা, শশাঙ্ক ঘোষরা জানালেন, “আগে গ্রামের অনেকেই সিপিএম করত। কিন্তু নিরাপত্তার অভাব দেখে ঝুঁকি না নিয়ে অনেকেই বিজেপিতে যোগ দিয়েছে।” এর পরেই ক্ষোভ উগরে দেন তাঁরা। সকলে একযোগে অভিযোগ করেন, “তৃণমূলের লোকজন এসে জমায়েত করেতই পুলিশকে জানানো হয়েছিল। কিন্তু, অবাধে ভাঙচুরের প্রায় দু’ঘণ্টা বাদে পুলিশ এল!”
কিছুটা দূরেই বাড়ি এক সময়ের সিপিএম নেতা বিমল ভুঁইয়ার। বাড়ি লাগোয়া বৈদ্যুতিন সরঞ্জামের দোকান রয়েছে তাঁর। বিমলবাবু অভিযোগ, কিছু বুঝে ওঠার আগেই তৃণমূলের নেতা বীরেন মহাপাত্র, রাহুল ঘোষ, সমীর খাঁড়ার নেতৃত্বে কয়েক’শো লোক তেড়ে এসে আমার দোকান, বাড়ির সামনের পার্টি অফিস ভেঙে দেয়। দোকান থেকে ফ্যান, লাইট নিয়েও পালায়। কেশিয়াড়ি ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এ দিন উমাদেবী অভিযোগ করেন, “দোকান ভাঙচুরে বাধা দিলে হাতে টাঙি দিয়ে কোপ মারে তৃণমূলের লোকেরা।” পাশেই বাড়ি আকুল মণ্ডলের। অভিযোগ, এ দিন তাঁর বাড়িতেও চড়াও হয়ে ভাঙচুর করে তৃণমূল। বাধা দিলে তাঁর স্ত্রীর শাড়ি ছিঁড়ে দেওয়া হয় বলে আকুলবাবুর অভিযোগ।
স্থানীয় সূত্রে খবর, কেশিয়াড়িতে ব্লক তৃণমূলের সভাপতি জগদীশ দাস ও জেলা তৃণমূল নেতা বিষ্ণুপদ দে-এর অনুগামীদের দাপট রয়েছে। বিজেপির নেতৃত্বের দাবি, তাতে ভাগ বসাতে শুরু করেছেন তাঁরা। অভিযোগ, এ দিনের ভাঙচুরের ঘটনায় অভিযুক্ত বীরেন মহাপাত্র বিষ্ণুপদ অনুগামী বলেই পরিচিত। এ দিন বিষ্ণুবাবু বলেন, “ওই এলাকায় কিছু সিপিএম কর্মী বিজেপিতে গিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামে কটূক্তি করেছিল। এ নিয়ে বচসা হয়ে বলে শুনেছি। তবে ভাঙচুরের ঘটনা সমর্থন করি না।” অভিযুক্ত নেতা বীরেন মহাপাত্রের দাবি, তিনি ঘটনাস্থলে ছিলেনই না।
বিজেপির পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সভাপতি তুষার মুখোপাধ্যায় বলেন, “নির্বাচনের আগে থেকেই গোটা কুলবনি এলাকা দলকে সমর্থন করেছিল। এলাকায় নিয়ন্ত্রণ হারানোর আতঙ্কেই তৃণমূল এ দিন অত্যাচার চালিয়েছে।” তিনি জানান, গোটা ঘটনা দলের রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহকে জানানো হয়েছে। রাহুলবাব ১৫ জুন জেলায় আসছেন। ধারাবাহিক আক্রমণের প্রতিবাদে নয়াগ্রাম-সহ নানা এলাকায় কর্মসূচি রয়েছে তাঁর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy