Advertisement
E-Paper

কারা অন্তর্ঘাত করেছেন, চিহ্নিতকরণ শুরু সিপিএমে

ক্রমে ভোট কমছে। নেতা-কর্মীদের অনেকেই অন্য দলে নাম লেখাচ্ছেন। বিজেপিতে চলে গিয়েছে প্রাক্তন জেলা সভাধিপতি অন্তরা ভট্টাচার্যের মতো নেত্রী। সঙ্কটজনক এই পরিস্থিতিতেও শৃঙ্খলার প্রশ্নে আপস করতে নারাজ পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সিপিএম নেতৃত্ব। লোকসভা ভোটে ভরাডুবির কারণ পর্যালোচনা করতে গিয়ে নেতৃত্ব বুঝছেন, দলেরই একাংশ বিপক্ষের কাছে আত্মসমর্পণ করেছিল।

বরুণ দে

শেষ আপডেট: ১৭ জুন ২০১৪ ০০:৪৩

ক্রমে ভোট কমছে। নেতা-কর্মীদের অনেকেই অন্য দলে নাম লেখাচ্ছেন। বিজেপিতে চলে গিয়েছে প্রাক্তন জেলা সভাধিপতি অন্তরা ভট্টাচার্যের মতো নেত্রী। সঙ্কটজনক এই পরিস্থিতিতেও শৃঙ্খলার প্রশ্নে আপস করতে নারাজ পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সিপিএম নেতৃত্ব। লোকসভা ভোটে ভরাডুবির কারণ পর্যালোচনা করতে গিয়ে নেতৃত্ব বুঝছেন, দলেরই একাংশ বিপক্ষের কাছে আত্মসমর্পণ করেছিল। একাংশ দলের মধ্যে থেকেই অন্তর্ঘাতের চেষ্টা করেছিল। এ বার এঁদের চিহ্নিত করার কাজ শুরু করল জেলা সিপিএম। দলীয় সূত্রে খবর, ইতিমধ্যে এমন ৮৬ জন পার্টি সদস্যকে চিহ্নিত করা হয়েছে, যাঁরা পার্টির অভ্যন্তরেই অন্তর্ঘাতের চেষ্টা করেছেন। এঁদের ‘শো-কজ’ করা হচ্ছে। সদুত্তর না মিললে এঁদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপই করা হবে। জেলা কমিটির ১২ জন সদস্যের ভূমিকাও প্রশ্নের উর্ধ্বে নয়। দলের এক সূত্রে খবর, এই সংখ্যক সদস্য নির্বাচনে নিজেদের দায়িত্ব ঠিকমতো পালন করেননি। এঁদের কাছেও চিঠি পাঠিয়ে কারণ জানতে চাওয়া হচ্ছে।

যদিও এ ব্যাপারে নেতৃত্ব মুখে কুলুপ এঁটেছেন। সিপিএমের জেলা সম্পাদক দীপক সরকার বলেন, “সাংগঠনিক ব্যাপারে কিছু বলব না।” লোকসভা ভোটে দলের মধ্যে থেকেই অন্তর্ঘাত করেছেন, এমন পার্টি সদস্যদের চিহ্নিত করার কাজ শুরু হয়েছে, এটা কি ঠিক? দীপকবাবুর জবাব, “পার্টির নীতি-শৃঙ্খলাভঙ্গের প্রবণতাকে কখনও প্রশ্রয় দেওয়া হয় না। অভিযোগের প্রেক্ষিতে পদক্ষেপ করা হয়।”

সিপিএম সূত্রে খবর, এ বার দলীয় সদস্যপদ পুনর্নবীকরণের সময় থেকেই শুদ্ধিকরণে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে অনেককে দল থেকে ছেঁটে ফেলা হয়েছে। পুনর্নবীকরণের সময় নিষ্ক্রিয়তার কারণে ৪৪১৩ জনের সদস্যপদ খারিজ করা হয়েছে। যা দলের মোট সদস্য সংখ্যার ১৫.৪০ শতাংশ। ১৪টি জোনাল কমিটির ১৯ জন জোন সদস্যের অবনমন ঘটানো হয়েছে, ২৯ জনকে সতর্ক করা হয়েছে। ৪৮ জন এলসিএমেরও অবনমন ঘটানো হয়েছে, সতর্ক করা হয়েছে ১৬ জনকে। সিপিএমের জেলা কমিটির এক সদস্যের কথায়, “মোট সদস্য সংখ্যার ১৫.৪০ শতাংশের সদস্যপদ খারিজ করা হয়েছে। এটা অন্য উল্লেখযোগ্য ভাবে বেশি। তবে সাংগঠনিক ক্ষেত্রে আরও কিছু পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।” দলীয় সূত্রে খবর, ২৫ জন জোনাল কমিটির সদস্য, ১৮২ জন লোকাল কমিটির সদস্য লোকসভার নির্বাচনী কর্মকাণ্ডে একেবারে নিষ্ক্রিয় থেকেছেন। পার্টি সদস্যদের মধ্যে ৫,৩৮৩ জন একেবারে নির্বাচনী কাজে যুক্ত হননি।

এ বারের লোকসভা ভোটে পশ্চিম মেদিনীপুরে বামেদের জনসমর্থন ব্যাপক হারে কমেছে। ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনেও যেখানে ৪৪ শতাংশ ভোট পেয়েছিল বামেরা, সেখানে লোকসভায় তা কমে হয়েছে ২৯ শতাংশ। অন্য দিকে, তৃণমূলের প্রাপ্ত ভোট ৫১ শতাংশ, বিজেপির ১০ শতাংশ। সিপিএমের দলীয় পর্যালোচনায় অবশ্য উঠে এসেছে, যে সংখ্যক বুথে অবাধ ভোট হয়েছে, সেখানে বামেরা ৩৫ শতাংশ ভোট পেয়েছে। নেতৃত্বের মতে, জেলার মোট ৫,৩৩৭টি বুথের মধ্যে ‘সন্ত্রাস কবলিত’ বুথের সংখ্যা ১,৪১৬টি। এই সংখ্যক বুথে বামেরা পেয়েছে ২১.৫৮ শতাংশ ভোট। তৃণমূল ৬৩.২৯ শতাংশ, বিজেপি ৭.৪৪ শতাংশ, কংগ্রেস পেয়েছে ৪.৩৬ শতাংশ ভোট পেয়েছে। ‘আধা সন্ত্রাস কবলিত’ ৮৬৫টি বুথে বামেদের প্রাপ্তি ৩১.২৮% ভোট। তৃণমূল পেয়েছে ৫৪.৪২%, বিজেপি ১০.০৬%, কংগ্রেস ৩.১৮% ভোট। আর শান্তিপূর্ণ ২,৬১৪টি বুথে বামেরা পেয়েছে ৩৪.৪০% ভোট। সেখানে তৃণমূলের প্রাপ্তি ৪৬.২৮%, বিজেপির ১২.৪১%, কংগ্রেসের ৬.৯৪% ভোট।

এই পরিস্থিতিতে দলীয় সংগঠনকে পুনর্গঠন করে পরিস্থিতি মোকাবিলার উপযোগী করে গড়ার নির্দেশ দিয়েছেন নেতৃত্ব। সিপিএমের জেলা কমিটির এক সদস্যের কথায়, “সংগঠনকে আগের অবস্থায় ফেরাতে উপর তলাতেও শুদ্ধিকরণ করতে হবে!”

barun dey sabotage medinipur
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy