Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

কারখানায় দুর্ঘটনা, ভেলোরে মৃত রাজ্যের ৯ শ্রমিক

ঘুমের মধ্যেই কারখানার দেওয়াল ভেঙে বিষাক্ত জলে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মারা গেলেন ১১ জন শ্রমিক। তামিলনাডুর ভেলোর জেলার শিনগার্দ এলাকার একটি চামড়ার কারখানায় দুর্ঘটনাটি ঘটে শুক্রবার রাতে। মৃতদের মধ্যে ৯ জনই পশ্চিম মেদিনীপুরের বাসিন্দা। ছ’জনের বাড়ি চন্দ্রকোনায়। তিন জন গড়বেতার বাসিন্দা। বাকিরা তামিলনাডুর লোক বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে।

কান্নায় ভেঙে পড়েছেন মৃত সুকুর আলি মল্লিকের মা (সবুজ শাড়ি)। গরবেতার বলরামপুরে। —নিজস্ব চিত্র

কান্নায় ভেঙে পড়েছেন মৃত সুকুর আলি মল্লিকের মা (সবুজ শাড়ি)। গরবেতার বলরামপুরে। —নিজস্ব চিত্র

অভিজিৎ চক্রবর্তী
চন্দ্রকোনা শেষ আপডেট: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০১:৫১
Share: Save:

ঘুমের মধ্যেই কারখানার দেওয়াল ভেঙে বিষাক্ত জলে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মারা গেলেন ১১ জন শ্রমিক। তামিলনাডুর ভেলোর জেলার শিনগার্দ এলাকার একটি চামড়ার কারখানায় দুর্ঘটনাটি ঘটে শুক্রবার রাতে। মৃতদের মধ্যে ৯ জনই পশ্চিম মেদিনীপুরের বাসিন্দা। ছ’জনের বাড়ি চন্দ্রকোনায়। তিন জন গড়বেতার বাসিন্দা। বাকিরা তামিলনাডুর লোক বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে।

পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলাশাসক জগদীশ প্রসাদ মিনা বলেন, “সরকারি উদ্যোগেই দেহগুলি আনার চেষ্টা চলছে।” পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ জানান, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মৃতদের পরিবারকে ২ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন। তা ছাড়া, জেলা পুলিশের তরফে প্রতিটি পরিবারকে ১০ হাজার টাকা করে দেওয়া হচ্ছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, ‘আর কে লেদার্স’ নামে শিনগার্দের ওই চামড়ার কারখানায় দুর্ঘটনাটি ঘটে শুক্রবার রাত ১২টা নাগাদ। ওই এলাকায় একাধিক চামড়ার কারখানা রয়েছে। তার যাবতীয় বর্জ্য একটি নির্দিষ্ট এলাকায় ফেলা হয়। সেখানে বিভিন্ন রাসায়নিক ও চামড়ার টুকরো-সহ বিষাক্ত জল দীর্ঘদিন জমে ছিল। সেখানকার দেওয়াল ভেঙেই বিষাক্ত জল তোড়ে বেরোতে শুরু করে। ভেঙে যায় ‘আর কে লেদার্স’ কারখানার দেওয়ালও। যেখানে ওই ১১ জন শ্রমিক ঘুমিয়েছিলেন, সেখানে বিষাক্ত জল ঢুকে যায়।

শিনগার্দের চামড়ার কারখানাতেই কাজ করেন গড়বেতার বলরামপুরের বাসিন্দা আমিরুল মল্লিক। ফোনে তিনি বলেন, “আমার নাইট ডিউটি ছিল। ছাদে চামড়ায় রং করছিলাম। হঠাৎ একটা বিকট শব্দ। দেখি, কারখানার দেওয়াল ভেঙে হু হু করে জল ঢুকছে। দ্রুত নামতে গিয়ে পড়ে জ্ঞান হারাই। সকালে দেখি আমি হাসপাতালে।”

চন্দ্রকোনার চালতাবাঁদি গ্রামের প্রায় ৯০ জন পুরুষ কর্মসূত্রে বাইরে থাকেন। কেউ সোনার কাজ করেন, কেউ জরির, কেউ আবার চামড়ার কারখানার শ্রমিক। শনিবার ভোরে ছ’জনের মৃত্যুসংবাদ পৌঁছনোর পরে গ্রামের ছবিটাই পাল্টে যায়। ভেলোরের দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছেন গ্রামের বাসিন্দা হাবিব খান (৪৬) এবং তাঁর দুই ছেলে আলি আকবর খান (২১) ও আলি আসগর খান (১৮)। স্বামী-পুত্র হারিয়ে হাবিবের স্ত্রী জেনেখা বিবির হাহাকার, “সব শেষ হয়ে গেল!” চালতাবাঁদির বাসিন্দা সম্পর্কে দুই ভাই এশিয়ান খান (২০) ও আক্রম খান (১৮)-ও মারা গিয়েছেন এই দুর্ঘটনায়। দুই ছেলের মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ সুকুর আলি খান বলেন, “বৃহস্পতিবারই বাড়ি থেকে ভেলোর রওনা হয়েছিল এশিয়ান। বলেছিল, বোনের বিয়েতে যে টাকা ধার যা হয়েছে, পাঠিয়ে দেবে। সব শেষ হয়ে গেল!” মৃত পিয়ার আলি খান (১৮)-এর বাবা নেই। তার দাদা সখের খান বলেন, “ভাইয়ের পাঠানো টাকাতেই সংসার চলত। কী যে হবে!”

চন্দ্রকোনার এই গ্রামের ১৮ জন তামিলনাডুর বিভিন্ন চামড়ার কারখানায় কাজ করতেন। তাঁদের সেখানে নিয়ে যান গ্রামেরই বাসিন্দা সানোয়ার মল্লিক। তিনি বলেন, “এমন যে ঘটবে দুঃস্বপ্নেও ভাবিনি!”

শোকের আবহ গড়বেতার বলরামপুরেও। দুর্ঘটনার বলি একই পরিবারের তিন জন। তার মধ্যে শাহজাহান মল্লিক (২১) ও কুতুবউদ্দিন মল্লিক (১৮) সহোদর ভাই। আর সুকুর আলি মল্লিক (১৯) তাঁদের খুড়তুতো ভাই। শাহাজাহানের বাবা নেশিন মল্লিক আর সুকুর আলির বাবা নৈশাদ মল্লিক জানান, ছেলেরা মেলা উপলক্ষে বাড়িতে এসেছিলেন। বৃহস্পতিবার তাঁরা ভেলোর রওনা দেন। তাঁদেরও আক্ষেপ, “কী করে জানব, আর দেখা হবে না!”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE