চলছে আলু তোলার কাজ। মেদিনীপুরের গোপগড়ে। —নিজস্ব চিত্র।
চলতি বছরে পশ্চিম মেদিনীপুরে রেকর্ড জমিতে আলুর চাষ হয়েছে। তাই এ বার অন্য বছরের থেকে ফলনও ভাল হবে বলে আশা কৃষি দফতরের।
কৃষি দফতর সূত্রে খবর, জেলায় এ বার প্রায় ৮৩ হাজার হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে। গত বছরের তুলনায় চলতি বছরে প্রায় ৭-৮ হাজার হেক্টর জমিতে বেশি আলু চাষ হয়েছে। ইতিমধ্যে চাষিরা আলু তোলার কাজও শুরু করেছেন। তবে চাষিদের একাংশের আশঙ্কা, এখনও পর্যন্ত আলুর চাহিদা কম। ফলে আয় কমায় ক্ষতির আশঙ্কাও করছেন অনেকে। জেলার সহ-কৃষি অধিকর্তা (তথ্য) দুলাল দাস অধিকারী বলেন, “জেলায় এ বার রেকর্ড ৮৩ হাজার হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই ফলনও বেশি হবে বলে আশা করা যায়।”
কৃষি দফতর সূত্রে খবর, আলু বীজ ও সারের দাম বেশি হওয়ায় চলতি বছরে আলু চাষের খরচ বেড়েছে। বিঘা প্রতি আলু চাষে সার, সেচ, শ্রমিক-সহ আনুষঙ্গিক বিভিন্ন খরচ নিয়ে মোট ব্যয় হয়েছে ২৪-২৭ হাজার টাকা। অন্য বছরের তুলনায় এ বার বিঘা প্রতি চাষে ৩-৪ হাজার টাকা বেশি খরচ হয়েছে। চাষিদের বক্তব্য, আলুর ভাল দাম পাওয়া গেলে খরচ পুষিয়ে যাবে। কিন্তু এখনও চাহিদা সে ভাবে না বাড়ায় খরচ ওঠা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
আলু চাষিদের মতে, অন্য বছর ব্যবসায়ীরা মাঠ থেকেই চাষিদের থেকে আলু কিনে নেন। ফি বছর কলকাতা-সহ ভিন্ রাজ্যের ব্যবসায়ীরাও আগাম স্থানীয় আলু ব্যবসায়ীদের কাছে অর্ডার দেন। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা চাষিদের থেকে আলু কিনে কেউ ভিন্ রাজ্যে পাঠান। অনেকে আবার আলু হিমঘরে সঞ্চয়ও করে রাখেন। প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতির অভিযোগ, গত কয়েক বছর ধরে রাজ্য সরকার ভিন্ রাজ্যে আলু পাঠানোয় নিষেধাজ্ঞা জারী করেছে। ফলে অন্য রাজ্যের ব্যবসায়ীরা রাজ্য থেকে আলু কেনার উপর নির্ভর করতে পারছেন না। যদিও চলতি বছরে এখনও এ ধরনের কোনও নিষেধাজ্ঞা জারী করেনি সরকার। তাছাড়াও অসম, ঝাড়খণ্ড, ছত্তীসগঢ়-সহ পড়শি বিভিন্ন রাজ্যেও চলতি বছরে আলুর ফলন হয়েছে। ফলে রাজ্য থেকে আলু রফতানির পরিমাণ কমছে।
সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক বরেন মণ্ডল বলেন, “সরকারের খামখেয়ালিপনায় আলু শিল্পের আজ এই অবস্থা। ভিন্ রাজ্যের ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে কোনও অর্ডারই পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা চাষিদের থেকে আলু কিনে কী করবেন?” বরেনবাবুর দাবি, এই শিল্পের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে কয়েক লক্ষ মানুষ জড়িত। তাই এ বিষয়ে সরকার চিন্তাভাবনা না করলে সকলেই আর্থিক সমস্যার মুখে পড়বেন। তাঁর আরও দাবি, সংগঠনের পক্ষ থেকে কৃষি বিপণন দফতরের মন্ত্রী থেকে নবান্নে স্মারকলিপি দিয়ে আলু শিল্পের করুণ দশার কথা জানানো হয়েছে।
চাষিদের বক্তব্য, চলতি বছরে গড়ে কাঠা প্রতি প্রায় দু’কুইন্ট্যালের বেশি আলুর ফলন হয়েছে। এখন কুইন্ট্যাল প্রতি আলুর দাম ৩৮০-৪০০ টাকা। চাষিদের দাবি, কুইন্ট্যাল প্রতি আলুর দাম ৬০০-৭০০ টাকা উঠলেও ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা যেত। কিন্তু চলতি বছরে ব্যবসায়ীরা এখনও আলু কিনতে শুরু না করায় সিদুঁরে মেঘ দেখছেন চাষিরা। মাঠ থেকে আলু তুলে ফেলায় অনেকে কম দামেই বিক্রি করে দিতে বাধ্য হচ্ছেন। কেননা, আলু হিমঘরে রাখার খরচও অনেক। ফলে হিমঘরের ভাড়া মেটাতে গেলে লোকসানের বহর আরও বাড়বে। চন্দ্রকোনার আলু চাষি উত্তম মণ্ডল, সুফল সরকার, গড়বেতার রসকুণ্ডুর নারায়ণ কোলে, চন্দ্রকোনা রোডের সুজন ঘোষ, হারাধন পাখিরাদের বক্তব্য, “আলু ফলন বেশি হলেও লোকসান হচ্ছে। সরকার সহায়ক মূল্যে আলু না কিনলে আমরা গভীর সঙ্কটের মুখে পড়ব।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy