Advertisement
E-Paper

জলে কমছে অক্সিজেন, মাছ চাষে ক্ষতির আশঙ্কা

বৃষ্টি নেই। টানা তাপপ্রবাহের জেরে নামছে পুকুরের জলস্তর। বাড়ছে জলের তাপমাত্রাও। মৎস্য দফতরের আশঙ্কা, কয়েকদিনের মধ্যে বৃষ্টি না হলে মাছের ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। পশ্চিম মেদিনীপুরে টানা বেশ কয়েকদিন ধরে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রির উপরে রয়েছে। অন্য বছর মাঝে-মধ্যে কালবৈশাখী হওয়ায় তীব্র গরম থেকে খানিকটা হলেও রেহাই মেলে। এবার মরসুমের শুরু থেকেই বৃষ্টি কম হওয়ায় এমনিতেই বিভিন্ন জলাশয়ে জলের সঞ্চয় তলানিতে।

অভিজিৎ চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ২১ মে ২০১৪ ০০:১১
গরমে নেমে গিয়েছে পুকুরের জলস্তর। দাসপুরে তোলা নিজস্ব চিত্র।

গরমে নেমে গিয়েছে পুকুরের জলস্তর। দাসপুরে তোলা নিজস্ব চিত্র।

বৃষ্টি নেই। টানা তাপপ্রবাহের জেরে নামছে পুকুরের জলস্তর। বাড়ছে জলের তাপমাত্রাও। মৎস্য দফতরের আশঙ্কা, কয়েকদিনের মধ্যে বৃষ্টি না হলে মাছের ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে।

পশ্চিম মেদিনীপুরে টানা বেশ কয়েকদিন ধরে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রির উপরে রয়েছে। অন্য বছর মাঝে-মধ্যে কালবৈশাখী হওয়ায় তীব্র গরম থেকে খানিকটা হলেও রেহাই মেলে। এবার মরসুমের শুরু থেকেই বৃষ্টি কম হওয়ায় এমনিতেই বিভিন্ন জলাশয়ে জলের সঞ্চয় তলানিতে। সঙ্গে প্রচণ্ড উত্তাপে জলের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের থেকে অনেকটা বেড়ে যাওয়ায় মাছের বিভিন্ন রোগের প্রকোপ দেখা দিচ্ছে।

মৎস্য দফতর সূত্রে খবর, জেলায় এখন পোনা জাতের নানা মাছ ছাড়াও ছোট বিভিন্ন প্রজাতির মাছ চাষ হয়। এছাড়াও শোল, বোয়াল মাছও চাষ হচ্ছে। এই সকল মাছ জলের সর্বোচ্চ ৪৫ ডিগ্রি পর্যন্ত উষ্ণতা সহ্য করতে পারে। সাধারণত পুকুরের জলস্তর পাঁচ ফুটের উপরে থাকলে মাছের ক্ষতির আশঙ্কা কম থাকে। কিন্তু বৃষ্টি না হওয়ায় পুকুরের জলস্তর হু হু করে নামছে। ফলে মাছের ক্ষতির আশঙ্কাও বাড়ছে।

মৎস্য দফতরের উপ-অধিকর্তা (পশ্চিমাঞ্চল) উৎপল সর বলেন, “জেলায় বেশ কয়েকটি এলাকায় গরমের জন্য মাছের ফুলকা, লেজ ও পাখনায় নানা রোগ ছড়াচ্ছে। তাপমাত্রা না কমলে এই রোগের প্রকোপ বাড়ার সম্ভবনা রয়েছে।” পশ্চিম মেদিনীপুরে চলতি মরসুমে ২২ হাজার হেক্টর জলাভূমিতে ৫২ হাজার মেট্রিক টন মাছ চাষ হয়েছে। ইতিমধ্যে কিছু মাছ তুলে বাজারে বিক্রিও করা হচ্ছে। মৎস্য দফতর সূত্রে খবর, বর্তমানে যে তাপমাত্রা রয়েছে, মাছ তা সহ্য করতে সক্ষম। তবে বেশিরভাগ পুকুর, খাল, দিঘিতে জলস্তরের উচ্চতা পাঁচ ফুটেরও নীচে নেমে গিয়েছে। জেলার প্রায় হাজার তিনেক পুকুরে এবার মাছ চাষ হচ্ছে। এখনও পর্যন্ত পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ায় প্রায় তিরিশ ভাগ পুকুরের জলের উচ্চতাই স্বাভাবিকের থেকে নেমে গিয়েছে। ফলে মাছের ক্ষতির আশঙ্কাও বাড়ছে। দাসপুরের বেলেঘাটার মাছ চাষি সুবীর মণ্ডল, ঘাটালের মাছ চাষি প্রদীপ দুলে, জলধর শাসমলেরা বলেন, “প্রচণ্ড গরমে মাছের পাখনায় রোগ দেখা দিচ্ছে। আমরা চুন-সহ স্যালো চালিয়ে পুকুরে জলের উচ্চতা বাড়াচ্ছি। সময় না হলেও কিছু মাছ তুলে বিক্রিও করে দিয়েছি। প্রকৃতির উপর তো কিছু করার নেই।”

মৎস্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রচণ্ড দাবদাহে জলের উত্তাপ মাত্রাতিরিক্ত বাড়ছে। অনেকক্ষেত্রে রাত ১০টার সময়ও জলের উত্তাপ কমছে না। তাই মৎস্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, জলকে ঠান্ডা রাখতে পুকুরের ধার ঘিরে একাধিক জায়াগায় তাল পাতার বা কচুরিপানা দিয়ে ছাউনি তৈরি করতে হবে। সেক্ষেত্রে ওই ছাউনি সংলগ্ন পুকুরের জলের তাপমাত্রা কম থাকবে। মাছেরাও পুকুরের ওই অংশে গিয়ে উত্তাপ থেকে কিছুটা হলেও রেহাই পাবে। অন্য দিকে, অধিক তাপমাত্রার জেরে জলের অক্সিজেনের সরবরাহ কমছে। তাই জলে অক্সিজেনের জোগান বাড়াতে বিঘা প্রতি পুকুরের জলে ১৫-২০ কিলোগ্রাম করে চুন দিতে হবে। জলে চুন দিলে গরমে মাছের ক্ষতির আশঙ্কাও কমবে। কোনও ক্ষেত্রে পুকুরের জলস্তরের উচ্চতা পাঁচ ফুটের নীচে নেমে গেলে সেই পুকুরের জলের মাছ তুলে গভীর জলের পুকুরে ছেড়ে দিতে হবে। তা হলে মাছ চাষে ক্ষতির পরিমাণ কমানো যাবে। উৎপল সর বলেন, “প্রচণ্ড উত্তাপের হাত থেকে মাছ বাঁচাতে পুকুরের ধারে তাল পাতার ছাউনি তৈরি এবং বিঘা প্রতি ১৫-২০ কিলো চুন জলে মিশিয়ে দেওয়ার জন্য চাষিদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। তাহলে জলে অক্সিজেনের জোগান বাড়বে। আরও অক্সিজেন বাড়লে মাছও স্বস্তি পাবে।”

abhijit chakraborty ghatal water temperature increase
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy