প্রাপ্য পারিশ্রমিকের একাংশ টাকা স্থানীয় কয়েকজন আত্মসাৎ করেছেন। এই অভিযোগ তুলে সোমবার সকালে ভাদুতলা-লালগড় রাস্তার সাতপাটিতে পথ অবরোধ করেন শতাধিক মহিলা। এঁরা স্থানীয় স্বনির্ভর দলের সঙ্গে যুক্ত। কেউ স্কুলে মিড ডে মিলের রাঁধুনির কাজ করেন। কেউ একশো দিনের প্রকল্পে কাজ করেন। প্রায় দু’ঘণ্টা ধরে অবরোধ চলে। ফলে, লালগড়গামী রাস্তায় যান চলাচলও ব্যাহত হয়। বেশ কয়েকটি বাস আটকে পড়ে। দুর্ভোগে পড়েন যাত্রীরা। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসে পুলিশ। আসেন সাতপাটি গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান পরিমল ধল। উপপ্রধানের আশ্বাসে শেষমেশ অবরোধ ওঠে।
যাঁদের বিরুদ্ধে টাকা আত্মসাতের অভিযোগ তুলে এদিন অবরোধ হয়, তাঁরা তৃণমূলেরই কর্মী। ঘটনার জেরে শাসক দলও বিড়ম্বনায় পড়েছে। অবশ্য ওই অভিযোগ মানতে নারাজ তৃণমূল নেতৃত্ব। সাতপাটি গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল উপপ্রধান পরিমলবাবু বলেন, “প্রাপ্য টাকা আত্মসাতের অভিযোগ ঠিক নয়। হয়তো কোথাও ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে! তাও অভিযোগ যখন উঠেছে, আমরা খতিয়ে দেখছি। স্থানীয়দের সঙ্গে আলোচনাতেও বসছি। এ ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপই করা হবে।” একই দাবি শালবনি পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তথা তৃণমূলের শালবনি ব্লক সভাপতি নেপাল সিংহের। নেপালবাবু বলেন, “পথ অবরোধের খবর পেয়ে স্থানীয় উপপ্রধানকে ঘটনাস্থলে যাওয়ার কথা বলেছিলাম। উনি ঘটনাস্থলে গিয়ে অবরোধকারীদের সঙ্গে কথাও বলেন। প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করার আশ্বাস দেন। আমরা স্থানীয়দের সঙ্গে আলোচনায় বসছি। ঠিক কী হয়েছে দেখছি।” পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির কথায়, “মিড ডে মিল হোক কিংবা একশো দিনের প্রকল্প, এখন তো পারিশ্রমিকের টাকা ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্টে জমা পড়ে। এটা ঠিক, একশো দিনের প্রকল্পের বেশ কিছু টাকা বকেয়া রয়েছে। কেন্দ্র বরাদ্দ করেনি। ফলে, টাকা জেলাতেও আসেনি।”
স্বসহায়ক দলের সঙ্গে যুক্ত একাংশ মহিলার অবশ্য দাবি, গত তিন বছর ধরেই এই পরিস্থিতি চলছে। তাঁদের যা প্রাপ্য তার একাংশ কেটে নেওয়া হয়। সকলের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টও নেই। অবরোধকারী মহিলারা স্থানীয় সাতপাটি হাইস্কুলে মিড ডে মিলের রাঁধুনির কাজ করেন। এই স্কুলে মিড ডে মিলের কাজের সঙ্গে যুক্ত সবমিলিয়ে ৮টি স্বসহায়ক দল। স্কুলের প্রধান শিক্ষক চণ্ডীদাস দে বলেন, “এ ক্ষেত্রে স্কুলের কোনও দোষ নেই। কখনও সরাসরি স্বসহায়ক দলের সদস্যাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টেই টাকা জমা পড়ে। কখনও স্কুলের অ্যাকাউন্টে টাকা আসে। স্কুলের অ্যাকাউন্টে টাকা এলে তা স্বসহায়ক দলের প্রধানের অ্যাকাউন্টে জমা দিয়ে দেওয়া হয়। পরে দলের প্রধান ওই টাকা বাকি সদস্যাদের মধ্যে ভাগ করে দেন। মিড ডে মিলের রান্নার কাজের যুক্ত স্বসহায়ক দলগুলোর কোনও টাকাই এখন স্কুলের অ্যাকাউন্টে জমা নেই।” দিন কয়েক আগে বেশ কয়েকজন মহিলা তৃণমূলের স্থানীয় পার্টি অফিসে চাবিও লাগিয়ে দিয়েছিলেন। সোমবার শতাধিক মহিলা পথ অবরোধ করেন। অবরোধের জেরে বাস পরিষেবা ব্যাহত হওয়ার কথা মানছেন বাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের জেলা সম্পাদক মৃগাঙ্ক মাইতি। তিনি বলেন, “সাতপাটিতে পথ অবরোধ হয়েছিল। সেই জন্য কিছু বাসের যাতায়াতে সমস্যা হয়েছে বলে শুনেছি।” জেলা তৃণমূলের এক নেতার আশ্বাস, “আমরা কোনও অন্যায়কেই প্রশ্রয় দেবো না। যদি অভিযোগের এতটুকুও সত্যতা থেকে থাকে, তাহলে দল প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। ।”