Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
ইন্দিরা আবাস যোজনা

টাকা পড়ে, কাজের গতি নিয়ে অসন্তোষ

ব্লকে টাকা এসে পড়ে রয়েছে। অথচ, তা উপভোক্তাদের মধ্যে বিলি করা হচ্ছে না। ইন্দিরা আবাস যোজনা প্রকল্পের কাজে ঢিলেমির অভিযোগও উঠছে। একাধিকবার বৈঠক করে দ্রুত কাজ শেষের উপর জোর দেওয়া হলেও অগ্রগতি হয়েছে নামমাত্রই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ১৪ নভেম্বর ২০১৪ ০০:৫৭
Share: Save:

ব্লকে টাকা এসে পড়ে রয়েছে। অথচ, তা উপভোক্তাদের মধ্যে বিলি করা হচ্ছে না। ইন্দিরা আবাস যোজনা প্রকল্পের কাজে ঢিলেমির অভিযোগও উঠছে। একাধিকবার বৈঠক করে দ্রুত কাজ শেষের উপর জোর দেওয়া হলেও অগ্রগতি হয়েছে নামমাত্রই। এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে প্রকল্পের পরবর্তী বরাদ্দ পাওয়া নিয়েও সমস্যা হতে পারে। কেন এই পরিস্থিতি? জেলা পরিষদের সহ-সভাধিপতি সমায় মাণ্ডি বলেন, “যত দ্রুত সম্ভব প্রথম কিস্তির টাকা উপভোক্তাদের কাছে পৌঁছনোর চেষ্টা চলছে। শিবির করেও উপভোক্তাদের প্রাপ্য অর্থ দেওয়া হচ্ছে।” ব্লকে টাকা এসে পড়ে থাকার জন্য বিরোধীরা অবশ্য প্রশাসনের অন্দরের সমন্বয়ের অভাবকেই দুষছে। জেলা পরিষদের প্রাক্তন সভাধিপতি তথা বিজেপি নেত্রী অন্তরা ভট্টাচার্য বলেন, “সমন্বয়ের অভাবের জন্যই এই পরিস্থিতি। প্রশাসনের সর্বস্তরের মধ্যে সমন্বয় না থাকলে সমস্যা হবেই। তবে নজরদারিরও অভাব রয়েছে।”

গত আর্থিক বছর, অর্থাত্‌ ২০১৩- ’১৪ সালে জেলায় ইন্দিরা আবাস প্রকল্পে ১৫ হাজার ৮০৫টি বাড়ি তৈরির লক্ষ্যমাত্রা ছিল। সময়ে কাজ শেষ না- হওয়ায় অনেকেই অবশ্য দ্বিতীয় কিস্তির টাকা পাননি। ওই অর্থবর্ষে জেলার জন্য বরাদ্দ হয়েছিল মোট ৬১ কোটি ৪ লক্ষ ৬৭ হাজার টাকা। এরমধ্যে কেন্দ্রীয় সরকারের বরাদ্দ ছিল ৪৬ কোটি ২২ লক্ষ ৯৬ হাজার টাকা। রাজ্য সরকারের বরাদ্দ ছিল ১৪ কোটি ৮১ লক্ষ ৭১ হাজার টাকা। এখনও বেশ কিছু টাকা জেলা পরিষদেই পড়ে রয়েছে। ২০১৩- ’১৪ সালে যেখানে ১৫ হাজার ৮০৫টি বাড়ি তৈরির লক্ষ্যমাত্রা ছিল, সেখানে ২০১৪- ’১৫ সালে ৩৬ হাজার ৯৮৯টি বাড়ি তৈরির লক্ষ্যমাত্রা ধার্য্য হয়েছে।

জেলা প্রশাসনেরই এক সূত্রে খবর, লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পেরেছে শুধুমাত্র মেদিনীপুর সদর ব্লক। এখানে ১ হাজার ৪১৪টি বাড়ি তৈরি হওয়ার কথা ছিল। ইতিমধ্যে এই সংখ্যক উপভোক্তার কাছেই প্রথম কিস্তির টাকা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। অন্য ব্লকগুলোয় ৯ হাজারেরও বেশি বাড়ি তৈরির প্রথম কিস্তির অর্থ পড়ে রয়েছে। দরিদ্র মানুষের বাড়ি তৈরির জন্য ইন্দিরা আবাস প্রকল্প। এমন প্রকল্পের কাজেও নজরদারির অভাব থাকায় প্রশ্ন উঠছে নানা মহলে। অসন্তোষ দেখা দিয়েছে তৃণমূলের একাংশের মধ্যেও। এই গড়িমসি চলতেই থাকলে পরবর্তী বরাদ্দ পেতেও সমস্যার আশঙ্কা রয়েছে। আগে বাড়ি পিছু ৪৮ হাজার ৫০০ টাকা বরাদ্দ হত। এখন বাড়ি পিছু ৭৫ হাজার টাকা বরাদ্দ হয়। আগে দুই কিস্তিতে টাকা দেওয়া হত। এখন তিন কিস্তিতে টাকা দেওয়া হয়। সরকারি এই প্রকল্পের সুবিধে কারা পেতে পারেন, এ জন্য প্রতি ব্লকে তালিকাও রয়েছে। সেই তালিকা ধরেই উপভোক্তাদের চিহ্নিত করা হয়।

জেলা পরিষদের এক সূত্রের দাবি, পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেই এ বার শিবির করে টাকা দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে কিছু ব্লকে শিবির হয়েছে। শিবিরে উপভোক্তার হাতে বাড়ি তৈরির মঞ্জুরী সংক্রান্ত নথি তুলে দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি, উপভোক্তার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে প্রথম কিস্তির টাকা জমা দেওয়া হচ্ছে। এই প্রকল্প নিয়ে বিভিন্ন সময় নানা অভিযোগ ওঠে। তালিকায় নাম নেই, এমন কাউকে বাড়ি পাইয়ে দেওয়ার নাম করে অর্থ আদায় করা, প্রথম কিস্তির টাকা আত্মসাত্‌ করার মতো অভিযোগও নতুন নয়। জেলা প্রশাসনের এক সূত্রের দাবি, দুর্নীতি রোধে পদক্ষেপও করা হচ্ছে। এখন প্রতিটি বাড়ি তৈরির সময় ছবি তোলা হয়। একবার-দু’বার নয়, কাজের বিভিন্ন পর্যায়েরই ছবি তোলা হয়।

জেলা পরিষদের এক কর্তা মানছেন, “প্রকল্পের কাজের গতি বাড়ানো প্রয়োজন। এ ভাবে কাজ চললে পরবর্তী সময় সমস্যা হতে পারে।” তাঁর কথায়, “ইতিমধ্যে ব্লকগুলোয় প্রয়োজনীয় নির্দেশ পাঠানো হয়েছে। বেশ কিছু ব্লক ভাল কাজ করছে। কিছু ব্লকের ক্ষেত্রে সমস্যাও রয়েছে। সমস্যা হলে তা জেলায় জানাতে বলা হয়েছে। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে জেলা থেকে তখন নিশ্চয়ই পদক্ষেপ করা হবে।” একটা সময় গিয়েছে, যখন এই প্রকল্পে কোনও অর্থই পেত না জেলা। আগের বরাদ্দ সময়ের মধ্যে খরচ করে ইউসি (ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট) জমা না দেওয়ার ফলেই নতুন করে অর্থ বরাদ্দ হত না। পরে অবশ্য জট কাটে। সাধারণত, ২০১৫ সালের মার্চের মধ্যেই পশ্চিম মেদিনীপুরে ৩৬ হাজার ৯৮৯টি বাড়ি তৈরির কাজ শেষ হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু, তা হওয়া নিয়েও সংশয় রয়েছে। জেলা প্রশাসনের এক কর্তার কথায়, “প্রকল্পের ক্ষেত্রে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। সব ব্লককেই সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে বলা হয়েছে। বিষয়টি গুরুত্ব দিয়েই দেখা হচ্ছে। প্রথম কিস্তির অর্থ খরচ হলে সমস্ত দিক খতিয়ে দেখেই দ্বিতীয় কিস্তির অর্থ বরাদ্দ করা হবে।” প্রশাসনের অন্দরের সমন্বয়ের অভাবের জন্যই কী ব্লকে টাকা পড়ে থাকছে? সদুত্তর এড়িয়ে ওই কর্তা বলেন, “সমন্বয় রেখেই কাজ করা হয়। কয়েকটি ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা রয়েছে। সমস্যার সমাধানে প্রয়োজনীয় নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE