শহর তৃণমূলের কার্যালয়ে আগুন লেগেছে। আর সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিধানসভা ভোটের আগে উত্তাপ বাড়ল ঝাড়গ্রাম শহরে।
বুধবার ভোর রাতে শহরের জনবহুল নিমতলা এলাকায় ঝাড়গ্রাম শহর তৃণমূলের কার্যালয়টিতে আগুন লেগে যায়। খড়ের ছাউনি দেওয়া ছিটেবেড়ার কার্যালয়টি নিমেষে পুড়ে যায়। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, দমকল এসে পড়ায় বড় অঘটন এড়ানো সম্ভব হয়েছে। না-হলে আশেপাশের দোকান ও বাড়িতে আগুন ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা ছিল।
কিন্তু এই প্রেক্ষিতে তৃণমূল নেতার বক্তব্যের জেরে বেশি উত্তাপ ছড়িয়ে জেলা রাজনীতিতে। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পিছনে কিছু ‘অজ্ঞাত দুষ্কৃতী’র হাত রয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ঝাড়গ্রাম শহর তৃণমূলের সভাপতি প্রশান্ত রায়। প্রশান্তবাবু বলেন, “পরিকল্পিত ভাবে দুষ্কৃতীরা এই কাজ করেছে। ঝাড়গ্রাম থানায় অভিযোগপত্র পাঠিয়েছি। কারা করেছে পুলিশ তদন্ত করে ব্যবস্থা নিক।”
শাসক দলের শহর সভাপতির এই মন্তব্যে অশনি সংকেত দেখছেন বিরোধীরা। বিজেপি-র ঝাড়গ্রাম জেলা সভাপতি সুখময় শতপথী বলেন, “পুরোটাই বিরোধীদের জব্দ করার জন্য শাসকদলের সাজানো চক্রান্ত।’’ সুখময়বাবু জানান, মাস দু’য়েক আগে ওই এলাকায় একটি বাড়ি ভাড়া নিয়ে তাঁরা বিজেপি-র ঝাড়গ্রাম জেলা কার্যালয় খুলেছেন। সম্প্রতি কিছু লোকজন বাড়ির মালিককে হুমকি দিয়ে বলেছিল বিজেপি-র পার্টি অফিস তুলে দিতে হবে। ভয়ে বাড়ির মালিক পুলিশে অভিযোগ করেননি। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা বিষয়টি মৌখিক ভাবে থানাকে জানিয়েছিলাম। তারপর তৃণমূলের কার্যালয় পোড়ার ঘটনাটি পরিকল্পিত সমাপতন বলেই মনে হচ্ছে।’’
তা ছাড়া, পুলিশ ও সিভিক ভলান্টিয়ারদের কড়া নজরদারির মধ্যে কী ভাবে শাসক দলের দলীয় কার্যালয় পুড়ে গেল সেই প্রশ্নও তুলেছেন বিরোধীরা। বিরোধীদের অভিযোগ, ভোটের আগে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের অভিযুক্ত করার মামলা সাজাতে তৃণমূলের কার্যালয়টি পোড়ানো হয়েছে। কারণ বিরোধীদের অতীত অভিজ্ঞতা বলছে, অভিযোগপত্রে সুনির্দিষ্ট কারও নাম না থাকা সত্ত্বেও তদন্তের ভিত্তিতে পুলিশ বিরোধী দলের একাধিক নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার করেছে, এমন বহু নজির রয়েছে।
একটি পরিত্যক্ত বাড়ির সামনে তৃণমূলের কার্যালয়টি ছিল। আগুনে ওই বাড়িটিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ওই বাড়ির একটি ঘরে আগে তৃণমূলের মহকুমা কার্যালয় ছিল। কিন্তু ছাদের একাংশ ভেঙে পড়ায় বছর তিনেক আগে সামনে খড়ের ছাউনি দেওয়া শহর তৃণমূলের কার্যালয়টি তৈরি করা হয়। শহর সভাপতি প্রশান্ত রায়ের অনুগামীরাই সেখানে বসতেন। দলীয় কার্যালয়টির আর অস্তিত্বই নেই।
এ দিন আগুন লাগার প্রথম খবর পান প্রশান্তবাবুর অনুগামী ঝাড়গ্রাম পুরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রাজেন সরেন। তিনি বলেন, ‘‘ভোর রাতে ঝাড়গ্রাম থানার টহলদার এক পুলিশ কর্মী মোবাইলে ফোন করে আমাদের পার্টি অফিসে আগুন লেগেছে বলে জানান। খবর পেয়ে আমি যখন পৌঁছই, তখন সব শেষ হয়ে গিয়েছে।’’ সিপিএমের ঝাড়গ্রাম শহর জোনাল কমিটির সম্পাদক পার্থ যাদব বলেন, “বিধানসভা ভোটের আগে বিরোধীদের রাজনৈতিক কাজকর্মে রাশ টানার জন্য এটা শাসকদলের পরিকল্পিত চক্রান্ত ছাড়া আর কিছু নয়। পুলিশ তদন্ত করে দেখুক।’’ আবার এই ঘটনায় কমিশনের নজরে থাকা আইপিএস অফিসার ভারতী ঘোষকে নিশানা করে সরব হয়েছে কংগ্রেস। ঝাড়গ্রাম জেলা কংগ্রেস সভাপতি সুব্রত ভট্টাচার্য বলেন, “বিরোধীদের জব্দ করার উদ্দেশ্যেই শাসক দলের কার্যালয়ে আগুন লাগানো হয়েছে। এই ঘটনাটি কার মস্তিষ্ক প্রসূত সেটা আমাদের বুঝতে অসুবিধে হচ্ছে না।’’
পুলিশ জানিয়েছে, অভিযোগের ভিত্তিতে ঘটনাটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। দমকল সূত্রের খবর, শট সার্কিটের কোনও প্রমাণ মেলেনি। আগুন লাগার কারণ এখনও স্পষ্ট নয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy