Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

তৃণমূলের মিছিলে হামলার অভিযোগ, ধৃত ৬

সিপিএম-তৃণমূল সংঘর্ষে উত্তপ্ত হল সবং। শনিবার সন্ধ্যায় তৃণমূলের নির্বাচনী মিছিলে হামলার অভিযোগ ওঠে কংগ্রেস ও সিপিএমের বিরুদ্ধে। এ দিন সবংয়ের বলপাই গ্রাম পঞ্চায়েতের শঙ্খটিয়া গ্রামের ওই ঘটনায় জখম ১৪ জন তৃণমূল কর্মীকে প্রথমে সবং গ্রামীণ হাসপাতাল ভর্তি করা হয়। পরে তাঁদের মধ্যে ৩জনকে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। ওই সংঘর্ষে এক সিপিএম কর্মীও আহত হয়েছেন বলে অভিযোগ।

আহত তৃণমূল কর্মীরা মেদিনীপুর মেডিক্যালে। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ।

আহত তৃণমূল কর্মীরা মেদিনীপুর মেডিক্যালে। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
খড়্গপুর শেষ আপডেট: ১২ মে ২০১৪ ০২:০৮
Share: Save:

সিপিএম-তৃণমূল সংঘর্ষে উত্তপ্ত হল সবং।

শনিবার সন্ধ্যায় তৃণমূলের নির্বাচনী মিছিলে হামলার অভিযোগ ওঠে কংগ্রেস ও সিপিএমের বিরুদ্ধে। এ দিন সবংয়ের বলপাই গ্রাম পঞ্চায়েতের শঙ্খটিয়া গ্রামের ওই ঘটনায় জখম ১৪ জন তৃণমূল কর্মীকে প্রথমে সবং গ্রামীণ হাসপাতাল ভর্তি করা হয়। পরে তাঁদের মধ্যে ৩জনকে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। ওই সংঘর্ষে এক সিপিএম কর্মীও আহত হয়েছেন বলে অভিযোগ। এ দিন রাতে তৃণমূলের পক্ষ থেকে সিপিএম ও কংগ্রেসের ৩০জনের নামে সবং থানায় অভিযোগ জানানো হয়। রবিবার সিপিএমও পুলিশে তৃণমূলের বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ দায়ের করেছে। অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ কংগ্রেস ও সিপিএমের ৬ জন নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করেছে। রবিবার ধৃতদের মধ্যে পাঁচজনকে মেদিনীপুর আদালতে হাজির করা হলে বিচারক তাঁদের ২৩ মে পর্যন্ত জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন বিকেলে শেষ বেলার প্রচারে বলপাই অঞ্চলে ঘাটাল লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থী দেবের সমর্থনে সাইকেল মিছিল বের করে তৃণমূল। সেই সময় ওই গ্রাম পঞ্চায়েতের শঙ্খটিয়া গ্রামে সিপিএমও সন্তোষ রাণার সমর্থনে মিছিল বের করে। শঙ্খটিয়া গ্রামে দু’দলের প্রচার মিছিল মুখোমুখি হলে দু’পক্ষের মধ্যে বাদানুবাদ শুরু হয়। পরে তা হাতাহাতির রূপ নেয়। অভিযোগ, সেই সময় আদিবাসী অধ্যুষিত ওই গ্রামের একাধিক বাড়ি থেকে মহিলা-সহ সিপিএম সমর্থকেরা বেরিয়ে এসে তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের ওপর হামলা চালায়। ওই ঘটনায় তৃণমূলের নিবারণ সামন্ত, শম্ভু মান্না, নির্মল সামন্ত, নিতাই সামন্ত-সহ প্রায় ১৪ জন তৃণমূল কর্মী আহত হন বলে অভিযোগ। সুনীল তিরিয়া নামে এক সিপিএম কর্মীও ওই ঘটনায় জখম হন বলে অভিযোগ উঠেছে। আহতদের প্রথমে সবং গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে তৃণমূলের শম্ভু মান্না, নির্মল সামন্ত ও নিতাই সামন্তকে মেদিনীপুর মেডিক্যালে স্থানান্তরিত করা হয়। নির্মল সামন্ত বলেন, “সিপিএম শঙ্খটিয়ায় ২০-২৫ জন নিয়ে মিছিল করছিল। আমাদের মিছিল ওখানে যেতেই ওঁরা হামলা করে। পরে দেখলাম, ক্যানাল পার দিয়ে কংগ্রেস ও সিপিএম নেতারা পালাচ্ছে।”

তৃণমূলের অভিযোগ, এ দিন সন্ধ্যায় সিপিএম কর্মী-সমর্থকেরা তাঁদের সাইকেল মিছিলে টাঙি, লোহার রড, লাঠি নিয়ে হামলা চালায়। তৃণমূলের সবং বিধানসভার নির্বাচনী চেয়ারম্যান অমূল্য মাইতি বলেন, “আমাদের কর্মীরা শান্তিপূণর্র্ভাবে সাইকেল মিছিল করছিল। কিন্তু কংগ্রেসের মদতে সিপিএম আমাদের কর্মীদের ওপরে নির্বিচারে হামলা চালিয়েছে। নির্বাচনে পরাজয়ের ভয় পেয়ে কংগ্রেস ও সিপিএম এসব করছে।” যদিও সিপিএমের জোনাল সম্পাদক অমলেশ বসু বলেন, “আমাদের মিছিলে ওঁরা আগে হামলা করেছিল। তাই গ্রামের মানুষ প্রতিরোধ করতে গেলে সংঘর্ষ বাধে।”

পুলিশ শনিবার রাতে এলাকায় তল্লাশিতে গিয়ে অভিযুক্ত কংগ্রেস নেতা গোপাল মাইতি, সিপিএমের মানস ঘোড়াই, প্রদীপ মাইতি, শক্তিপদ সাউ ও তপন দুয়ারিকে গ্রেফতার করে। গোপালবাবু কংগ্রেস পরিচালিত সবং পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য কাকলি মাইতির স্বামী। খড়্গপুরের এসডিপিও অজিত সিংহ যাদবের নেতৃত্বে রবিবার এক পুলিশ বাহিনী গিয়ে এলাকায় তল্লাশি চালায়। এ দিন দুপুরে ওই ঘটনায় মূল অভিযুক্ত সিপিএমের লোকাল কমিটির সদস্য তরুণ ভট্টাচার্যকে গ্রেফতার করা হয়। কংগ্রেস নেতা ধৃত গোপাল মাইতির বাবা সন্তোষ মাইতিকে খুনের ঘটনায় তরুণ ভট্টাচার্য আগে জেলে ছিলেন।

ব্লক কংগ্রেস সভাপতি অমল পণ্ডা বলেন, “কংগ্রেসের নামে তৃণমূল মিথ্যা অভিযোগ করছে। সিপিএম-তৃণমূলের মধ্যে সংঘর্ষ ঘটল, আর তাতে নাম জড়াল কংগ্রেসের। ঘটনাস্থল শঙ্খটিয়া, আর কংগ্রেস নেতা গোপাল মাইতিকে পানিথর থেকে গ্রেফতার করা হল। এটা কোন খেলা চলছে?” কংগ্রেস প্রার্থী মানস ভুঁইয়া বলেন, “ওই ঘটনার সঙ্গে কংগ্রেসের কোনও যোগ নেই। ওখানে কংগ্রেসের কোনও কর্মসূচিও ছিল না। সিপিএম ও তৃণমূলের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।” ওই ঘটনায় কংগ্রেস নেতা গ্রেফতারেরও প্রতিবাদ করেন মানসবাবু।

খড়্গপুরের এসডিপিও অজিত সিংহ যাদব বলেন, “দু’টি দলের রাজনৈতিক সংঘর্ষে তৃণমূলের লোকেরা বেশি পরিমাণে জখম হয়েছেন। শনিবার তৃণমূলের অভিযোগ পেয়ে অভিযুক্ত ৬জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তল্লাশি চালানোর সময়ে অভিযুক্ত কংগ্রেস নেতাকেও ধরা হয়েছে। রবিবার দুপুরে সিপিএম যে অভিযোগ দায়ের করেছে সেটিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” অন্য দিকে, পিংলার তালগেড়িয়ায় সিপিএমের শাখা অফিসে হামলার অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। অভিযোগ, শনিবার সন্ধ্যায় তৃণমূল কর্মী-সমর্থকেরা ওই অফিসে হানা দিয়ে সিপিএম কর্মী মধু দাসকে মারধর করে। সিপিএমের জোনাল সম্পাদক নয়ন দত্তের অভিযোগ, “পিংলার সর্বত্র ভয় পেয়ে তৃণমূল সন্ত্রাস চালাচ্ছে। আমাদের কর্মীকে মারধরের পরে অভিযোগ জানাতে গেলে পুলিশ অভিযোগ নিতে চায়নি।” নির্বাচনের দিন মানুষ নিজের ভোট নিজে দিতে না পারলে পথ অবরোধ করার হুঁশিয়ারিও দেন তিনি। অজিত সিংহ যাদব বলেন, “পিংলাতেই আমি ক্যাম্প করে রয়েছি। এবিষয়ে কোনও অভিযোগ আসেনি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

kharagpur tmc attack arrested
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE