তমলুকের মানিকতলায় হলদিয়া-মেচেদা রাজ্য সড়কে তৃণমূলের মিছিল।
সপ্তাহের কর্মব্যস্ত দিনে দুই মেদিনীপুরে, তৃণমূল-বিজেপি দু’টি রাজনৈতিক দলের মিছিল থাকায় তৈরি হল যানজট। দুর্ভোগে পড়লেন এলাকাবাসী।
মেদিনীপুরের সভাস্থল প্রসঙ্গে পুলিশের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ আগেই তুলেছিল বিজেপি। এ বার পুলিশের অনুমতি না মেলায় বিজেপির রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহের প্রস্তাবিত জনসভা হলই না মেদিনীপুরে। এর বদলে শহরে দলের পক্ষ থেকে ‘মহামিছিল’ হয়। মিছিলের জেরে যানজটে বহু পথচলতি মানুষ আটকে পড়েন। বিজেপির এই কর্মসূচির পাল্টা হিসেবে আজ, বৃহস্পতিবার মেদিনীপুরে মহামিছিলের ডাক দিয়েছে জেলা তৃণমূলও। ফলে ফের ভোগান্তির আশঙ্কায় শহরবাসী।
পথ আটকে মিছিলে মানুষের দুর্ভোগের কথা মানছেন বিজেপির রাজ্য সাধারণ সম্পাদক অসীম সরকার। তিনি অবশ্য বলেন, “মেদিনীপুরবাসীর কাছে ক্ষমা চাইছি। এ ভাবে শহর অচল করতে চাইনি। বহু সাধারণ মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবেই মিছিলে এসেছেন।”
সভার অনুমতির প্রশ্নে পুলিশের ভূমিকায় সরব হয়েছে বিজেপি। দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক অসীম সরকার বলেন, “পুলিশ সুপারের নামে হাইকোর্টে মামলা দায়ের করছি। আমরা জানতে চাই, পুলিশ সুপার কী কী অধিকারে সভা বানচাল করতে পারেন!” তবে যাঁর বিরুদ্ধে বিজেপির এই অভিযোগ, পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ অবশ্য অভিযোগের প্রেক্ষিতে মন্তব্য করতে চাননি। মামলা দায়ের প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য, “প্রশাসনিক পদে থেকে কোনও মন্তব্য করব না। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি দেখা পুলিশের কাজ। পুলিশ সেটাই করছে।”
মেদিনীপুরে বিজেপির মিছিলে যানজট।—নিজস্ব চিত্র।
অন্য দিকে, পূর্ব মেদিনীপুর জেলার জন্য পূর্ব ঘোষিত একাধিক রেলপ্রকল্প রূপায়ণ, একশো দিনের কাজের প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দের দাবি তুলে কেন্দ্র বিরোধী আন্দোলনে নেমেছে তৃণমূলও। বুধবার বিকেলে তমলুক শহরের মানিকতলায় শহিদ মাতঙ্গিনী হাজরার মূর্তির পাদদেশ থেকে হলদিয়া-মেচেদা রাজ্য সড়ক ধরে তিন কিলোমিটার দূরে জেল শাসকের অফিস প্রাঙ্গণ পর্যন্ত কয়েক হাজার দলীয় সমর্থকদের নিয়ে মিছিল করে জেলা তৃণমূল। বিকেল তিনটে থেকে ওই তিন কিলোমিটার রাস্তায় বাস চলাচল বন্ধ থাকায় ভোগান্তিতে পড়েন নিত্যযাত্রীরা। ওই রাস্তায় অন্য যান চললেও যানজট ছিলই।
মানিকতলা থেকে বিকেল পৌনে চারটে নাগাদ রণপা-সহ তৃণমূল সমর্থকদের নিয়ে মিছিল শুরু করেন শিশির অধিকারী, ছিলেন বিধায়ক অর্ধেন্দু মাইতি, দিবেন্দ্যু অধিকারী, রণজিৎ মণ্ডল প্রমুখ। পদুমবসানের কাছে মিছিলে যোগ দেন সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী। পুলিশের হিসেবে, প্রায় ২৫ হাজার সমর্থকদের মিছিল রাজ্য সড়ক ধরে শঙ্করআড়া, হাসপাতাল মোড় হয়ে সোওয়া চারটে নাগাদ ডিএম অফিসের সামনে আসে। জমায়েতে শুভেন্দু বলেন, “প্রধানমন্ত্রী স্লোগান তুলেছিলেন, সু’দিন আসছে। কিন্তু কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই পেট্রোল-ডিজেলের দাম, রেলভাড়া-সহ জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে।” শুভেন্দুর তোপ, “রেল বাজেটে রাজ্যের জন্য নতুন কোনও প্রকল্প নেওয়া তো দূর, পূর্ব ঘোষিত রেলপ্রকল্পগুলিও অর্থ বরাদ্দ থেকে বঞ্চিত হয়েছে।”
বাজকুল-নন্দীগ্রাম, পাঁশকুড়া-হলদিয়া দ্বিতীয় লাইন ও এগরা-বেলদা লাইন-সহ জেলায় ঘোষিত রেলপ্রকল্প রূপায়ণের দাবিতে প্রয়োজনে দলনেত্রীর অনুমতি নিয়ে কলকাতার গার্ডেনরিচে দক্ষিণ-পূর্ব রেলের সদর দফতরে ও দিল্লিতে রেলভবনের সামনে জেলাবাসীকে নিয়ে আন্দোলনের হুঁশিয়ারিও দেন তিনি। একশো দিনের প্রকল্প প্রসঙ্গে শুভেন্দু বলেন, “সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকার একশো দিনের কাজের প্রকল্পে নিয়ম বদল করেছে। ফলে রাজ্যের অধিকাংশ জেলা এই প্রকল্পের কাজ থেকে বঞ্চিত হবে।” সার্বিকভাবে জনবিরোধী পদক্ষেপ নিয়ে চলেছে বিজেপি সরকার চলছে বলেও তৃণমূল সাংসদের অভিযোগ।
এ দিকে, চলতি মাসের গোড়াতেই তৃণমূলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস এবং পুলিশের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ এনে থানায়-থানায় বিক্ষোভ কর্মসূচি করেছিল বিজেপি। ঠিক হয়েছিল, রাহুল সিংহের উপস্থিতিতে জনসভা হবে। প্রথমে শহরের গাঁধীমূর্তির পাদদেশে সভাস্থল ঠিক করা হয়। কিন্তু পুলিশের অনুমতি মেলেনি। তা পাল্টে অরবিন্দনগরের মাঠে করার সিদ্ধান্ত হলে, তাতেও অনুমতি দেয়নি পুলিশ। পরে শেখপুরার মাঠে তোড়জোড় শুরু হয়। কিন্তু, সেখানেও পুলিশের আপত্তি থাকায় বুধবারের নির্ধারিত সভা ভেস্তে যায়। পুলিশের বক্তব্য, গাঁধীমূর্তির পাদদেশে বড় সভায় শহরে যানজট হলে পথচলতি মানুষ সমস্যায় পড়তেন। অরবিন্দনগরের মাঠ নিয়ে হাইকোর্টে মামলা হয়েছে। তাই সভার অনুমতি দেওয়া সম্ভব নয়। শেখপুরার মাঠ? পুলিশের বক্তব্য, মাঠটির দেখভাল করে যে বোর্ড, তারা অনুমতি না-দিলে, পুলিশ অনুমতি দিতে পারে না।
পুলিশের যুক্তি উড়িয়ে বিজেপি নেতৃত্বের তোপ, “আসল কথা হল, এ জেলায় পুলিশ বিজেপিকে কোনও আন্দোলন করতে দেবে না।” বিজেপির আরও অভিযোগ, এ দিন সভার পথে দলের কয়েকজন কর্মী-সমর্থককে মারধরও করেছে তৃণমূল। বুধবারের বিজেপির মিছিল থেকে জেলা পুলিশ সুপারের বিরুদ্ধে স্লোগান ওঠে। পুলিশ সুপারের কুশপুতুল পোড়ানো হয়।
তবে, মিছিলের জেরে যানজটে পথচলতি বহু মানুষ আটকে পড়েন। বিজেপির দাবি, প্রায় ৪০ হাজার মানুষের জমায়েত হয়েছিল। পুলিশি হিসেব বলছে সংখ্যাটা দশ হাজারেরও কম। বিজেপি সূত্রে খবর, মিছিলের মাথাটা যখন জেলা পরিষদ মোড়ে, তখন শেষটা ছিল শহরের এলআইসি মোড়ে। দু’টি স্থানের মধ্যে ব্যবধান প্রায় তিনশো মিটার। স্থানীয় ভাবে কিছু ছোট ছোট মিছিল এসে মূল মিছিলে যোগ দেয়। এ দিন বিভিন্ন দল ছেড়ে বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মী বিজেপিতে যোগ দেন। সেই তালিকায় রয়েছেন জেলা পরিষদের প্রাক্তন কর্মাধ্যক্ষ সিপিএমের অসিত সিংহ।
বিজেপির এই কর্মসূচির পাল্টা হিসেবে আজ, বৃহস্পতিবার মেদিনীপুরে মহামিছিলের ডাক দিয়েছে জেলা তৃণমূল। তৃণমূলের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সভাপতি দীনেন রায় বলেন, “বিজেপি সরকারের জনবিরোধী নীতির প্রতিবাদে আজ, বৃহস্পতিবার মেদিনীপুরে মহামিছিল করব।” বিজেপি সমর্থকদের মারধরের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy