রাত পোহালেই দেব কারিগর বিশ্বকর্মার আরাধনায় মাতবে হলদিয়া। আর শিল্প শহর হলদিয়ায় বিশ্বকর্মা পুজো মানেই হাজার হাজার মানুষের ঢল। টানা তিন দিন ধরে চলে অবিরাম উৎসবের আমেজ।
প্রতিবারের মতন চমক থাকছে এক্সাইড ব্যাটারি কারখানার পুজোয়। এ বার এদের বাজেট ৪ লক্ষ টাকা। প্লাই এর মণ্ডপে থাকছে পরিবেশ বাঁচানোর আর্তি। নকল মুক্তোর সাবেক প্রতিমা সকলের নজর টানবে বলেই আশা কর্তৃপক্ষের। ইন্ডিয়ান অয়েল-এর পুজো প্রতিবারই দর্শকদের নজর কাড়ে। ইন্ডিয়ান অয়েল পুজো কমিটির কর্মকর্তা বি এন ঘোষ জানান, ৬ লক্ষ টাকা ব্যয়ে এ বার থিম যামিনী রায়-এর চিত্রকলা। ইন্ডিয়ান অয়েল কারখানার ২০০ মিটারের মধ্যেই ঠিকাদারদের পুজো। এ বার তাঁদের মণ্ডপ মন্দিরের আদলে।
তবে শহরের মধ্যে সবথেকে বড় বাজেটের পুজো হয় দুর্গাচকে। এখানে ট্যাঙ্কার ওনার্সদের পুজোর বাজেট ১০ লক্ষ টাকা বলে জানান সংস্থার পুজো কর্মকর্তা তপন প্রধান। তিনি জানান, “বাঁশ এবং প্লাই দিয়ে মণ্ডপ তৈরি হয়েছে। মণ্ডপের ভিতরে ঝাড়বাতি সকলের নজর টানবে।” হলদিয়া পুর এলাকার ঝিকুরখালি এলাকায় রোহিত ফেরোটেক এবং মডার্ন কনকাস্ট-এর পুজোতে থাকছে চমক। প্লাই এবং হোগলা পাতা দিয়ে হয়েছে মণ্ডপ।
জাপানি শিল্পসংস্থা মিৎসুবিশির পুজোয় প্রতিবারই সকলের থেকে একটু আলাদা রকমের হয়। এখানে জাপানিরা যোগদান করেন। পুজোর উদ্বোধক সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী। হলদিয়ার সিটি সেন্টারে গোকুল ভোজ্য তেল, ট্রাক ওনার্সদের পুজোও হয় জাঁকজমকের সঙ্গে। হুগলি মেট কোক এবং টাটা পাওয়ার-এর পুজোর বাজেট ৩ লক্ষ টাকা বলে জানান পুজো কমিটির কর্মকর্তা বনমালী বেরা। তাঁর কথায়, “প্রতিমা আমেরিকান ডায়মন্ড দিয়ে তৈরি। স্থানীয় পাতিখালি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের স্কুল ইউনিফর্ম দেওয়ার কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।” হলদিয়া প্রোগ্রেসসিভ লরি ওনার্স ওয়েল ফেয়ার সংস্থা এ বার কান্সার আক্রান্ত মেধাবী ছাত্র তরুণ করকে ৫০ হাজার টাকা প্রদান করবে। কমিটির সভাপতি প্রভাস সাঁতরা বলেন, “স্থানীয় চকদ্বীপা স্কুলের একাদশ শ্রেণির এই ছাত্রের পাশে থাকতে পেরে আমরা খুশি।”
এ বারই প্রথম হলদি নদীর মেরিন ড্রাইভে জাহাজের আদলে বিশ্বকর্মা পুজোর মণ্ডপ হয়েছে। বিশ্বকর্মা পুজার দিন খুলে দেওয়া হয় হলদিয়া বন্দর। হলদি নদীর ধারে জেলে নৌকায় আলো জ্বলে ওঠে। হাজার হাজার মানুষ ঘুরে দেখেন জাহাজ এবং বন্দর ঘাট। ভিড় নিয়ন্ত্রণে ইতিমধ্যেই মাঠে নেমেছে পুলিশ ও গ্রিন পুলিশ। পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পুলিশ সুপার সুকেশ জৈন জানিয়েছেন, পুজো উপলক্ষে ফেরিঘাটে বাড়ানো হবে নজরদারি।
এত আনন্দের মধ্যেও বিষাদের সুর হলদিয়া পেট্রোকেমিক্যালসের শ্রমিকদের। দু’মাস এই শিল্প সংস্থা বন্ধ থাকায় কর্মী ও ঠিকাদারদের মনে সুখ নেই। পুজো কমিটির সম্পাদক মানস দণ্ডপাট বলেন, “আন্তরিকতার সাথে পুজো করছি। আশা করি সুদিন ফিরবে পেট্রোকেমে।” আবার শহরের রাস্তা আটকে বিশ্বকর্মা পুজোর অভিযোগও উঠেছে। হলদিয়ার সেন্ট জেভিয়ার্স প্রাথমিক বিদ্যালয়ের যাতায়াতের পথ আগলে হয়েছে একটি মণ্ডপ। ফলে স্কুলে যাতায়াতে সমস্যায় পড়ছেন শিক্ষকদের পাশাপাশি পড়ুয়ারাও। স্কুল কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, পুলিশে অভিযোগ জানানো সত্ত্বেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
বিশ্বকর্মা পুজোর দিনগুলোয় শিল্পনগরী হলদিয়া এক প্রাণচঞ্চল শহরে পরিণত হয়। ঘরে ঘরে অতিথি নিয়ে এই কদিন মেতে থাকবে হলদিয়া। আরও নতুন শিল্পের আশায় বিশ্বকর্মার বন্দনায় কোন খামতি রাখতে চাইছে না হলদিয়া।