Advertisement
E-Paper

দুর্দিনে কেশপুরে সিপিএমের মুখ ফের সেই এন্তাজ

একদা ‘লালদুর্গ’ কেশপুরে সঙ্কটে দল। তাই একাধিক মামলায় অভিযুক্ত এন্তাজ আলিকে কেশপুর লোকাল কমিটির সম্পাদক করল সিপিএম। একাধিক মামলায় নাম জড়ানোর পর এন্তাজ সাহেব এখন ‘ফেরার’। মঙ্গলবারই শেষ হয়েছে কেশপুরের লোকাল কমিটির সম্মেলন পর্ব। আগে পশ্চিম মেদিনীপুরের এই এলাকায় সিপিএমের সাতটি লোকাল কমিটি ছিল।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০১৪ ০০:২৮

একদা ‘লালদুর্গ’ কেশপুরে সঙ্কটে দল। তাই একাধিক মামলায় অভিযুক্ত এন্তাজ আলিকে কেশপুর লোকাল কমিটির সম্পাদক করল সিপিএম।

একাধিক মামলায় নাম জড়ানোর পর এন্তাজ সাহেব এখন ‘ফেরার’। মঙ্গলবারই শেষ হয়েছে কেশপুরের লোকাল কমিটির সম্মেলন পর্ব। আগে পশ্চিম মেদিনীপুরের এই এলাকায় সিপিএমের সাতটি লোকাল কমিটি ছিল। এ বার সেখানে লোকাল কমিটির সংখ্যা কমিয়ে পাঁচটি করা হয়েছে। এর মধ্যে চারটি কমিটির সম্পাদক পদেই পরিবর্তন আনা হয়েছে।

একাধিক মামলায় নাম জড়ানো এন্তাজ আলি দলে ফের গুরুত্ব কোনও খারাপ বার্তা যাবে না? সিপিএমের জেলা সম্পাদক দীপক সরকারের জবাব, “তাতে কী? সব মামলাই মিথ্যা। অভিযোগগুলোও সাজানো।”

সিপিএম নেতৃত্বের দাবি, সন্ত্রাস- অত্যাচারের মধ্যে থেকেও যাঁরা মাথা উঁচু করে দলের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে সাহসের সঙ্গে কাজ করে চলেছেন, নতুন কমিটি নির্বাচনের সময় তাঁদেরই গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। দীপকবাবুর কথায়, “আমাদের দলে একটা গণতান্ত্রিক কাঠামো রয়েছে। সর্বসম্মতির ভিত্তিতেই নতুন কমিটি নির্বাচন হয়।” কিন্তু ‘ফেরার’ এন্তাজের পক্ষে কী দল পরিচালনা সম্ভব হবে? সিপিএমের জেলা সম্পাদকের দাবি, “সব দিন পরিস্থিতি একই থাকে না।” অবশ্য এ নিয়ে সিপিএমকে বিঁধতে ছাড়ছে না বিরোধীরা। তৃণমূলের জেলা সভাপতি দীনেন রায়ের কটাক্ষ, “এটা ওদের দলের ব্যাপার। তবে তপন-সুকুর-অনুজ-ডালিম-এন্তাজরাই যে ওদের দলে গুরুত্ব পাবে, এটা আর নতুন কী! ওরাই তো সম্পদ!” বিজেপির জেলা সভাপতি তুষার মুখোপাধ্যায়েরও মন্তব্য, “তপন-সুকুর-এন্তাজদের গুরুত্ব দিয়ে ওরা যতই দলের নীচুতলায় অক্সিজেন পৌঁছনোর চেষ্টা করুক, তা আর হবে না!” তাঁর বক্তব্য, “রাজ্যের মানুষ বিজেপিকে বিকল্প হিসেবে দেখছেন। এখন বিজেপিই এগোবে!”

দল সঙ্কটে থাকায় এ বারও কেশপুরের সমস্ত সম্মেলন সিপিএমকে ‘গোপনে’ করতে হয়েছে। সম্মেলনগুলো হয়েছে মেদিনীপুর শহরে। আগে কেশপুরে সিপিএমের সাতটি লোকাল কমিটি ছিল। খেতুয়া, আনন্দপুর, সাহসপুর, নেড়াদেউল, ছুতারগেড়্যা এবং বিশ্বনাথপুর। সংগঠন পুনর্গঠনের পর তা কমে পাঁচটি হয়েছে। আনন্দপুর এবং সাহসপুর এক হয়ে আনন্দপুর হয়েছে। অন্য দিকে, ছুতারগেড়্যা এবং বিশ্বনাথপুর এক হয়ে ছুতারগেড়্যা হয়েছে। আগে খেতুয়া লোকাল কমিটির সম্পাদক ছিলেন তাপস মিত্র। নতুন সম্পাদক হয়েছেন শুভাশিস পাইন। শুভাশিসবাবু দলের ছাত্র-যুব সংগঠন থেকে উঠে এসেছেন। এক সময়ে জেলায় ছাত্র-যুবর নেতৃত্বও দিয়েছেন। আনন্দপুর লোকাল কমিটির সম্পাদক ছিলেন গোরাচাঁদ গুঁই। নতুন সম্পাদক হয়েছেন নিয়ামৎ হোসেন। কেশপুর লোকাল কমিটির সম্পাদক ছিলেন আব্দুল মালেক। তাঁর বদলে নতুন সম্পাদক হয়েছেন এন্তাজ আলি। নেড়াদেউলের সম্পাদক ছিলেন হেকারত আলি। তাঁর বদলে নতুন সম্পাদক হয়েছেন বদরুল আলম। অন্য দিকে, ছুতারগেড়্যা লোকাল কমিটির সম্পাদক পদে পুনর্নির্বাচিত হয়েছেন তন্ময় ঘোষ। তন্ময়বাবুও দলের ছাত্র-যুব সংগঠন থেকে উঠে এসেছেন। এক সময়ে নাড়াজোল রাজ কলেজের ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।

গত বছর থেকেই কেশপুরে দলের সংগঠন পুনর্গঠনের কাজে উদ্যোগী হয় সিপিএম। অবশ্য এখনও এলাকায় দলের পায়ের তলার মাটি ফেরেনি। সমস্ত লোকাল কমিটির কার্যালয়ই বন্ধ। শাখা কার্যালয়গুলোরই একই পরিস্থিতি। খোলা বলতে শুরু জোনাল কার্যালয়, ‘জামশেদ আলি ভবন’। তাও সেখানে সম্মেলন করার ঝুঁকি নেয়নি সিপিএম। এক সময়ে দাসেরবাঁধ কঙ্কাল মামলায় নাম জড়িয়ে ছিল এন্তাজ, নিয়ামৎ হোসেনদের। সম্প্রতি কেশপুরের তৃণমূল জেলা পরিষদ সদস্যা কাকলি বরদোলুই খুনের মামলাতেও নাম জড়ায় তাঁদের।

সিপিএমের এক জেলা নেতার কথায়, সর্বসম্মতির ভিত্তিতেই নতুন কমিটির প্যানেল বেছে নেওয়া হয়েছে। আশা করছি, আমাদের সংগঠন আগামী দিনে আরও বেশি সক্রিয় ও আন্দোলনমুখী হবে। দলের এক সূত্রে খবর, এ বার জোনাল কমিটির সম্পাদকের পদেও রদবদল হতে পারে। সিপিএমের এক জেলা নেতার কথায়, “আমরা সংগঠনে ঝাঁকুনি দেওয়ার চেষ্টা করছি। দেখা যাক কী হয়! তবে এটা ঠিক সময় বদলানোর সঙ্গে সঙ্গে মানুষের মধ্যে সাহসও আসছে। প্রতিবাদে গলা মেলাচ্ছেন।” তৃণমূল একের পর এক মামলায় যাঁদের নাম জড়াচ্ছে, সেই এন্তাজ আলিদের দলে পদোন্নতি দিয়ে তৃণমূলকেই কী কোনও বার্তা দিয়ে রাখছে সিপিএম, জল্পনা চলছে জেলার রাজনৈতিক মহলে।

keshpur local committee entaj ali cpm tmc
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy