Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

নলকূপ নেই, জলের জন্য দৌড়টাই দস্তুর

ঘুম থেকে উঠেই বালতি হাতে দৌড়। না, এটা কোনও প্রতিযোগিতার দৌড় নয়। পানীয় জল আনতে দিনের শুরুতে কাঁথি মহকুমার মারিশদা থানা এলাকার বাসিন্দাদের প্রতিদিন দেড়-দু’কিলোমিটার দৌড়নোটাই দস্তুর।

পঞ্চায়েত সমিতির গাড়ি থেকে পানীয় জল নিতে লাইন। ছবি: সোহম গুহ।

পঞ্চায়েত সমিতির গাড়ি থেকে পানীয় জল নিতে লাইন। ছবি: সোহম গুহ।

সুব্রত গুহ
মারিশদা শেষ আপডেট: ২৯ মে ২০১৪ ০০:৪০
Share: Save:

ঘুম থেকে উঠেই বালতি হাতে দৌড়।

না, এটা কোনও প্রতিযোগিতার দৌড় নয়। পানীয় জল আনতে দিনের শুরুতে কাঁথি মহকুমার মারিশদা থানা এলাকার বাসিন্দাদের প্রতিদিন দেড়-দু’কিলোমিটার দৌড়নোটাই দস্তুর।

ভ্যান রিকশায় জল ভর্তি জারিকেন আনতে খরচ পড়বে জারিকেন পিছু তিন-পাঁচ টাকা। খরচ বাঁচাতে তাই সাইকেলে করে বা বালতি হাতেই স্থানীয় বাসিন্দাদের জল আনার জন্য ছুটতে হয়। কাঁথি ৩ ব্লকে জলসঙ্কটের এই ছবিটা সকলেরই চেনা।

গত ১৪ বছর ধরে এলাকায় কোন নলকূপ নেই। ফলে মারিশদা থানার পুলিশ কর্মীদের এভাবেই দূর থেকে পানীয় জল বয়ে আনতে হয়। এই সমস্যার সমাধানের কোনও উপায় জানা নেই উর্দ্ধতন পুলিশ কর্তৃপক্ষেরও। মারিশদা থানা সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০১ সালে তৎকালীন কাঁথি থানা ভেঙে মারিশদা থানা চালু হয়। থানায় সরকারি জল প্রকল্পের সংযোগ রয়েছে। তবে জলের কল থেকে জল পড়তে দেখা যায় না। মাঝে-মধ্যে জল এলেও সেই জল খাওয়া তো দূরের কথা, স্নানেরও অযোগ্য। থানার পুলিশ কর্মীদের বক্তব্য, শুধু মারিশদা থানা নয়, কাঁথি ৩ ব্লকের মারিশদা, দুরমুঠ ও কুসুমপুর অঞ্চল জুড়ে জল সঙ্কটের ছবিটা একই। এই সকল অঞ্চলে মাইলের পর মাইল কোনও টিউবওয়েল নেই। ফলে পানীয় জলের সমস্যায় আক্রান্ত সাধারণ মানুষ।

জলের সমস্যার কথা স্বীকার করে কাঁথি ৩ পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ শ্যামল দাস বলেন, “মারিশদা, দুরমুঠ ও কুসুমপুরের মধ্যে কুসুমপুর ও দুরমুঠ এই দুটি অঞ্চলের প্রায় প্রতিটি গ্রামেই জলকষ্টের সমস্যা বেশি।” তিনি জানান, এইসব এলাকার সকলকেই বছরভর জল কিনে খেতে হয়। তা না হলে চার কিলোমিটার দূরের দইসাই গ্রাম অথবা ছ’কিলোমিটার দূরের কাঁথি শহর থেকে জল বয়ে আনতে হয়। যাদের পক্ষে অত দূর থেকে জল বয়ে আনা সম্ভব নয়, তারা পুকুরের জল ফটকিরি মিশিয়ে বা ফুটিয়ে খান। প্রাথমিক স্কুলের মিড-ডে মিলের রান্নাও চলে পুকুরের জলেই। একসময় এই সকল গ্রামগুলির কয়েক হাজার মানুষের পানীয় জলের একমাত্র ভরসা ছিল জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের (পিএইচই) জল সরবরাহ প্রকল্প। কয়েক দশক আগের সেই জল সরবরাহ ব্যবস্থা অনেক দিন আগে থেকেই অকেজো হয়ে রয়েছে। সংস্কার না হওয়ায় জলের সমস্যা মেটেনি। কয়েকটি গ্রামে পিএইচই প্রকল্পের কয়েকটি জলের কল থাকলেও তা থেকে সেভাবে জল পড়ে না।

কাঁথি ৩ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি বিকাশ বেজ জানান, দুরমুঠ ও কুসুমপুর অঞ্চলে বতর্মানে পানীয় জলের তীব্র সঙ্কট দেখা দেওয়ায় পঞ্চায়েত সমিতির পক্ষ থেকে গাড়ি করে বিভিন্ন গ্রামে পানীয় জল পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। বিকাশবাবু বলেন, “জাতীয় গ্রামীণ পানীয় জল প্রকল্প-এর অধীনে ২০১০-১১ আর্থিক বছরে কাঁথি মহকুমায় পরিশ্রুত পানীয় জল সরবরাহের প্রকল্প ঘোষিত হয়। একটি জলসরবরাহ প্রকল্পে ১২-১৫টি মৌজাকে অন্তর্ভূক্ত করা হয়। ওই প্রকল্পের টাকায় কাঁথি ৩ ব্লকের দুরমুঠ অঞ্চলে একটি পাম্প হাউসও তৈরি হয়েছে। তবে এখনও পর্যন্ত নানা কারণে তা চালু করা যায়নি। তাই পানীয় জলের সঙ্কটের ছবিটাও পাল্টায়নি। পঞ্চায়েত সমিতির পক্ষ থেকে লাউদা অঞ্চল থেকে গাড়িতে করে পানীয় জল এনে দুরমুঠ ও কুসুমপুর অঞ্চলের বিভিন্ন জায়গায় সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।

বিকাশবাবু জানান, ইতিমধ্যেই ‘নন-টিউবওয়েল জোন’ হিসেবে চিহ্নিত এলাকাগুলিতে একশো দিনের কাজের মাধ্যমে পুকুর খনন করা হবে। সেই পুকুরের জল পরিশ্রুত করে পানীয় জল এলাকার মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য কাঁথি ৩ ব্লক ও পঞ্চায়েত সমিতি উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। ইতিমধ্যেই কুসুমপুরে একটি পরিশ্রুত জলের ট্যাঙ্ক তৈরি করা হয়েছে। সেই ট্যাঙ্কের জল স্থানীয় বাসিন্দাদের সরবরাহ করা হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

subrata guha marishda tubewell water crisis
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE