Advertisement
০৪ মে ২০২৪

পূর্বে পরীক্ষার্থী সংখ্যায় টেক্কা ছাত্রীদের

মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ল পূর্ব মেদিনীপুরে। ২০১৪ সালে জেলায় মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ৫৮,২৪৯ জন। সেখানে এ বার পরীক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৫৮, ৮১৯ জন। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে এ বার জেলায় মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী ছাত্রীর সংখ্যা বেড়েছে তিন হাজারেরও বেশি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কাঁথি শেষ আপডেট: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০১:২৪
Share: Save:

মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ল পূর্ব মেদিনীপুরে। ২০১৪ সালে জেলায় মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ৫৮,২৪৯ জন। সেখানে এ বার পরীক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৫৮, ৮১৯ জন। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে এ বার জেলায় মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী ছাত্রীর সংখ্যা বেড়েছে তিন হাজারেরও বেশি। জেলায় মাধ্যমিক পরীক্ষা গ্রহণ কেন্দ্রের সংখ্যাও বেড়ে হয়েছে ৯৭টি। গত বছর জেলায় ৯৪টি পরীক্ষা গ্রহণ কেন্দ্র ছিল। পরীক্ষা গ্রহণ কেন্দ্রের সংখ্যা বাড়ায় পরীক্ষার্থীদেরই সুবিধা হবে বলে আশা মধ্যশিক্ষা পর্ষদের।

আগামী ২৩ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হচ্ছে মাধ্যমিক পরীক্ষা। চলবে ৪ মার্চ পর্যন্ত। জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষা মাধ্যমিক। তাই মাধ্যমিকের আগে অল্পবিস্তর ভয় থাকেই। তাই সুষ্ঠু ভাবে মাধ্যমিক পরীক্ষা সম্পন্ন করতে তৎপর মধ্যশিক্ষা পর্ষদ। চলতি বছরে পূর্বে মোট মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর মধ্যে ছাত্রের সংখ্যা ২৭,৬৮৪ জন। ছাত্রীর সংখ্যা ৩১,১৩৫ জন। অর্থাৎ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী ছাত্রীর সংখ্যা ছাত্রের থেকে ৩৪৫১ জন বেশি। ২০১৪ সালে জেলায় মাধ্যমিকে ছাত্রের সংখ্যা ছিল ২৭, ৮৭১ জন। ছাত্রীর সংখ্যা ছিল ৩০, ৩৭৮। গত বারের তুলনায় এ বার ছাত্রীর সংখ্যা বেড়েছে এক হাজারেরও বেশি। সেখানে ছাত্রের সংখ্যা বেড়েছে দু‘শো জনেরও কম। গত কয়েক বছরে রাজ্যের মধ্যে মাধ্যমিকে পাশের হারে শীর্ষে ছিল জেলা। তবে ছাত্রীর তুলনায় মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী ছাত্রের সংখ্যা সে ভাবে না বাড়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন একাংশ শিক্ষাবিদ।

মাধ্যমিকে ছাত্রের সংখ্যা সে ভাবে না বাড়ার কথা স্বীকার করছেন দেপাল বানেশ্বর চারুবালা হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক ননীগোপাল বেরা। তাঁর মতে, “জেলার প্রত্যন্ত এলাকার স্কুলগুলিতে অষ্টম শ্রেণির পর থেকে ছাত্রদের একটা বড় অংশ পড়াশোনা ছেড়ে দিচ্ছে। বাড়ছে ছাত্রদের স্কুলছুটের হারও।” ননীগোপালবাবুর মতে, “অত্যন্ত সাধারণ বাড়ির এইসব ছেলেরা পড়াশোনায় ভাল হলেও সংসারের আর্থিক বোঝা সামলানোর জন্য রোজগারের পথ বেছে নিতে বাধ্য হচ্ছে।”

জেলার একাংশ শিক্ষাবিদের মতে, মাধ্যমিকে ছাত্র সংখ্যা কম থাকার মূল কারণ দারিদ্র। অভাবে মাঝপথেই পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে ছেলেরা বিভিন্ন হোটেল, ঠিকাদার ও ব্যাবসায়িক সংস্থার কাজে যোগ দিচ্ছে। অনেকে আবার কাজের সন্ধানে ভিন্ রাজ্যেও পাড়ি দিচ্ছে। মূলত সোনা ও জরির কারিগরের কাজ করতেই ছেলেরা অন্য রাজ্যে যাচ্ছে। ফলে অষ্টম শ্রেণির পর থেকেই বিভিন্ন স্কুলে ছাত্রের সংখ্যা কমছে। স্বাভাবিক ভাবেই মাধ্যমিকে ছাত্রের সংখ্যা কম থাকছে। সেই তুলনায় পড়াশোনায় জেলার মেয়েদের অংশগ্রহণ বেড়েছে।

কাঁথির চন্দ্রামণি ব্রাহ্ম বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা মনীষা সরকারের কথায়, “এখনকার মেয়েরা আগের মতো আর শুধু পড়তে হয় বলে পড়াশোনা করছে না। জীবনে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার উদ্দেশ্য নিয়েই তারা পড়াশোনা করছে। তাই শুধু মাধ্যমিকে নয়, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়েও ছাত্রীর সংখ্যা বাড়ছে।” জেলা পরিষদের শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ মামুদ হোসেনেরও বক্তব্য, “আর্থিক কারণেই অনেকক্ষেত্রে অভিভাবকেরা ছেলেদের পড়াশোনার বদলে রোজগারের পথে নামাতে বাধ্য হচ্ছেন। অন্য দিকে, মেয়েদের অন্তত মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়াতে পারলে বিয়ের ক্ষেত্রে কিছুটা সুবিধা হয়, অনেকের এমন ধারণাও হয়েছে।” তাঁর দাবি, ‘কন্যাশ্রী’-সহ সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পের জন্যও মেয়েদের পড়াশোনার হার বাড়ছে।

প্রশ্ন উঠছে, ছাত্রদের স্কুলছুট কমাতে সরকার কী পদক্ষেপ করছে? মামুদ হোসেনের বক্তব্য, “মাঝপথে কেউ পড়াশোনা ছেড়ে দিলে তাদের স্কুলমুখী করতে প্রশাসন নানা ভাবে সাহায্য করে। কিন্তু অভাবের দরুন স্কুলছুট ঠেকাতে রাজ্য সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করব।” মামুদ হোসেন জানান, শুধু মাধ্যমিকে নয়, এ বার হাই মাদ্রাসা পরীক্ষায় জেলায় মোট ৯৩০ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ২৪৭ জন ছাত্র। ছাত্রীর সংখ্যা ৬৮৩ জন। জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (মাধ্যমিক) অসীমা অধিকারীরও বক্তব্য, “পড়াশোনা নিয়ে আগের থেকে মেয়েদের সচেতনতা অনেক বেড়েছে। একইসঙ্গে কুসংস্কারের প্রভাব কমায় অভিভাবকেরাও মেয়েদের শিক্ষা সম্পর্কে এখন অনেক বেশি সচেতন। তবে মূলত আর্থিক কারণে ছেলেদের মধ্যে স্কুলছুটের হার বাড়ছে।”

মাধ্যমিক পরীক্ষা সুষ্ঠু ভাবে সম্পন্ন করতে ইতিমধ্যেই প্রস্তুতি বৈঠকও করা হয়েছে বলে জানান মাধ্যমিক পরীক্ষার জেলা মনিটরিং কমিটির আহ্বায়ক জয়ন্ত দাস। জয়ন্তবাবু জানান, মাধ্যমিক পরীক্ষা চলাকালীন পরীক্ষাগ্রহণ কেন্দ্রের আশেপাশে বিশেষ নজরদারির ব্যবস্থা করা হয়েছে। পরীক্ষা কেন্দ্রের আশেপাশে সমস্ত ব্যাবসায়িক জেরক্স দোকান বন্ধ থাকবে। যাঁদের ব্যক্তিগত জেরক্স মেশিন রয়েছে, সেগুলিও বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। একইসঙ্গে, পরীক্ষাকেন্দ্রের ১০০ মিটারের মধ্যে ১৪৪ ধারা জারি থাকবে।

জেলা পরিষদের শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ মামুদ হোসেন জানান, মধ্যশিক্ষা পর্ষদের নির্দেশ মতো পরীক্ষাকেন্দ্রে এ বার পার্শ্বশিক্ষকদের নজরদারির দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে না। কোনও কেন্দ্রে শিক্ষক কম থাকলে, কাছের যে সব স্কুলে মাধ্যমিকের কেন্দ্র পড়েনি, সেখান থেকে শিক্ষকদের নিয়ে এসে নজরদারি চালানো হবে। জেলার ৯৭টি কেন্দ্রের প্রতিটিতেই নজরদারি করতে ভিডিওগ্রাফি করা হবে। শুধুমাত্র পরীক্ষার প্রথম দিন পরীক্ষার্থীর এক জন অভিভাবককে কেন্দ্রে ঢুকতে দেওয়া হবে। তবে পরীক্ষা শুরুর আধ ঘণ্টা আগে অভিভাবকদের কেন্দ্রের বাইরে বেরিয়ে আসতে হবে। মাধ্যমিক পরীক্ষার দিনগুলিতে জেলার বিভিন্ন রুটে পরিবহণ ব্যবস্থা সচল রাখতেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানান জেলা বাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের কার্যকরী সভাপতি স্বপন মাইতি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

kanthi madhyamik exam
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE