Advertisement
E-Paper

প্রতিবন্ধকতাকে হারিয়ে ‘রোল মডেল’ অনুভব

পা দু’টি থেকেও নেই। সাড় নেই হাতেও। অনেক কষ্ট করে শুধু কলমটা ধরতে পারে সে। কে বলবে তার গলার স্বর মানুষকে এমন মুগ্ধ করতে পারে। শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে ছ’বছর বয়সেই তাই আকাশবাণীতে শিশু শিল্পী হিসেবে স্থান করে নিয়েছে মেদিনীপুর শহরের মীরবাজার এলাকার অনুভব পাল। আবৃত্তির জাদুতে এই বয়সেই একের পর এক পুরস্কারে ভরে গিয়েছে আলমারি।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৯ নভেম্বর ২০১৪ ০১:১৪
অনুভব পাল। নিজস্ব চিত্র।

অনুভব পাল। নিজস্ব চিত্র।

পা দু’টি থেকেও নেই। সাড় নেই হাতেও। অনেক কষ্ট করে শুধু কলমটা ধরতে পারে সে। কে বলবে তার গলার স্বর মানুষকে এমন মুগ্ধ করতে পারে। শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে ছ’বছর বয়সেই তাই আকাশবাণীতে শিশু শিল্পী হিসেবে স্থান করে নিয়েছে মেদিনীপুর শহরের মীরবাজার এলাকার অনুভব পাল। আবৃত্তির জাদুতে এই বয়সেই একের পর এক পুরস্কারে ভরে গিয়েছে আলমারি। পড়াশোনার পাশাপাশি অঙ্কন, আবৃত্তিতে এই প্রতিভার স্বীকৃতি হিসেবে এ বার তাকে ‘রোল মডেল’ হিসাবে পুরস্কৃত করতে চলেছে রাজ্য সরকার। আগামী ৩ ডিসেম্বর বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবসে রাজ্যপালের থেকে পুরস্কার নেবে সে। ছেলে পুরস্কার পাবে, তাই বেজায় খুশি অনুভবের বাবা-মাও।

অনুভবের জন্ম ২০০৮ সালের মার্চ মাসে। জন্মের সময় কিছুই বোঝা যায়নি। আর পাঁচ জন ফুটফুটে শিশুর মতোই সে ছিল স্বাভাবিক। কিন্তু এক বছর পরেও যখন তার হাঁটার প্রতি কোনও আগ্রহ লক্ষ করা যায়নি তখন বাবা-মায়ের মনে নানা দুশ্চিন্তা দেখা দিতে থাকে। প্রথমে অবশ্য চিকিৎসকেরাও বিষয়টি নিয়ে খুব একটা গুরুত্ব দিতে রাজি হননি। অনেকেই একটু দেরি করে হাঁটতে শেখে বলে তখন চিকিৎসকেরা বাবা-মাকে আশ্বস্ত করেন। পরবর্তীকালে চিকিৎসা করে জানতে পারেন ছেলে স্পাইনাল মাসকুলার অ্যাট্রোপিতে (টাইপ-২) আক্রান্ত। ফলে সে হাঁটা চলা করতে পারবে না। বাবা ধীরেন পালের কথায়, “প্রথমে ভেঙে পড়লেও পরে নিজেরাও তৈরি হয়ে যাই। এক্ষেত্রে তো কারও হাত নেই। ছেলে যাতে কোনও দিন না মনে করতে পারে যে, তাকে অবহেলা করেছি, তাই তার মতো করেই ওকে তৈরি করতে শুরু করি।”

অনুভব ৯০ শতাংশ প্রতিবন্ধী। নিজে স্কুলে যেতে পারে না, খেতে পারে না, এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেতে হলেও বাবা-মায়ের সাহায্য প্রয়োজন। তা সত্বেও ছেলেকে তার মতো করেই গড়ে তুলছেন অনুভবের বাবা-মা। পড়াশোনা, অঙ্কনের পাশাপাশি ছেলেকে সুতলুকা পালের কাছে আবৃত্তি শেখাতে নিয়ে যান তাঁরা। স্কুলে তার জন্যে রয়েছে আলাদা চেয়ার। তাতে বসেই পড়াশোনা করে অনুভব। শিক্ষক-শিক্ষিকা, বন্ধুরা প্রত্যেকেই সহযোগিতা করে। টিফিন বাক্সও তারাই খুলে দেয়। অনুভবের মা প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষিকা ইন্দ্রাণী পালের কথায়, “আবৃত্তির সময়ও উদ্যোক্তাদের সমস্যার কথা জানিয়ে দিই। যেহেতু অনুভব দাঁড়াতে পারে না, তাই তাঁরা চেয়ারের ব্যবস্থা করে দেন।”

মেদিনীপুর শহরের বিভিন্ন সংস্থা, ক্লাব থেকে শুরু করে সরকারি অনুষ্ঠান প্রতিটি জায়গায় প্রতিভার সাক্ষর রেখেছে অনুভব। সম্প্রতি তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের উদ্যোগে শিশু কিশোর অ্যাকাডেমিতেও আবৃত্তিতে দ্বিতীয় স্থান পেয়েছে সে। এ বার দক্ষিণ দিনাজপুরে রাজ্যস্তরের প্রতিযোগিতাটি হবে। সেখানেও ডাক পেয়েছে অনুভব। এই অল্প বয়সে অনুভবের প্রত্যয় দেখলে অবাক হতে হয়। অনুভবের কথায়, “পড়তে, আবৃত্তি করতে আমার খুব ভাল লাগে।” বাবা-মাও অবশ্য সব সময় তাকে নজরে নজরে রাখেন। তারই সঙ্গে ছেলের ইচ্ছের মর্যাদা দিতে তাকে আবৃত্তির জগতে একটি জায়গা করে দিতেও তৎপর তাঁরা। তারই সঙ্গে গান শেখানোরও ইচ্ছে রয়েছে। ধীরেনবাবুর কথায়, “হাতেও তেমন সাড় না থাকায় বেলো টানতে পারে না। তাই ভেবেছি আমরাই হারমোনিয়াম বাজাব। ও গান গাইবে। চলতে না পারায় এখানে সেখানে যেতে না পারুক, মানুষ যেন ভালবেসে ওর আবৃত্তি, গান শুনতে ওর কাছে ছুটে আসে। তাহলে কোনওদিন ও একাকীত্ব বোধ করবে না।” সেই লক্ষ্যেই এগিয়ে চলেছেন। তাতে আরও উৎসাহ জোগাল এই পুরস্কার পাওয়ার ঘোষণা।

anubhab pal handicapped
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy