ওয়াই-ফাই শহর হিসেবে ইতিমধ্যে আত্মপ্রকাশ করেছে কলকাতা মহানগরী। তবে পার্ক স্ট্রিটে সেই পরিষেবার মান নিয়ে নানা প্রশ্নও উঠেছে। এ বার পুর নির্বাচনের আগে রেলশহরের বাসিন্দাদের ওয়াই-ফাই পরিষেবা দিতে চলেছে খড়্গপুর পুরসভা। পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রথমে পুরসভার ৫০০ মিটার এলাকায় এই পরিষেবা শুরু হবে। ধীরে ধীরে গোটা শহরই আসবে ওয়াই-ফাই পরিষেবার আওতায়। পুরপ্রধান রবিশঙ্কর পাণ্ডের কথায়, “স্মার্ট সিটি হিসেবে পরিচিত খড়গপুরে আগামী মার্চ মাচের মধ্যে ওয়াই-ফাই পরিষেবা চালু করা হবে। এমন পরিষেবার উদ্যোগ রাজ্যের মধ্যে প্রথম এই পুরসভাতেই।”
কী এই ওয়াই-ফাই পরিষেবা? কম্পিউটার নেটওয়ার্কিং-এর পরিভাষায় একসময়ের ‘ওয়্যারলেস এরিয়া নেটওয়ার্ট’ই হল আজকের যুগের ওয়াই-ফাই। এই পরিষেবায় একটি কম্পিউটার অথবা রাউটার ডিভাইস কোনও তার ছাড়াই বেশ কয়েকটি গ্রাহক কম্পিউটার ডিভাইসকে তথ্য (ডেটা) পাঠাতে পারে। আবার সেই গ্রাহক কম্পিউটারগুলি নিজের ইচ্ছে মতো তথ্য ওই রাউটার ডিভাইসের মারফত নিতে পারে। এক্ষেত্রে প্রেরক ডিভাইসটির সঙ্গে ইন্টারনেট সংযোগ থাকলে ইন্টারনেটের তথ্য ব্যবহার করতে পারে কম্পিউটর, ল্যাপটপ, স্মার্টফোন, ট্যাবলেটের মতো গ্রাহক যন্ত্রগুলি।
চলতি বছর কলকাতার পার্ক স্ট্রিটে ওয়াই-ফাই পরিষেবার সূচনা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ধীরে ধীরে সারা শহর জুড়ে পরিষেবা ছড়িয়ে দেওয়ার আশ্বাসও দিয়েছেন তিনি। সেই একই পথে হাঁটল খড়গপুর পুরসভাও। তবে এটা এই শহরে প্রথম নয়। ২০০৪ সাল নাগাদ খড়্গপুর আইআইটির প্রতিষ্ঠান ও কোয়ার্টার এলাকায় ওয়াইফাই চালু হয়েছে। ওই চৌহদ্দিতে ঢুকতে না পারলেও ওয়াই-ফাই পরিষেবা মেলে আইআইটির পাঁচিলের পাশে দাঁড়িয়েও। শহরের অনেক যুবকই সেখানে দাঁড়িয়ে মোবাইলে বন্ধুর সঙ্গে চ্যাট করে নেন, কেউ গান ডাউনলোড করেন-এমনই নানা কিছু। কলেজ পড়ুয়া রবীন্দ্রপল্লির দেবেন্দ্রনাথ সরেন এখানে দাঁড়িয়েই বহু সিনেমা ডাউনলোড করেছেন। তাঁর কথায়, “কলেজে পড়ি। সবসময় ফোনে নেট রিচার্য করার মতো টাকা থাকে না। তাই আইআইটির পাঁচিলের ধারই ভরসা।” পুরসভার এমন উদ্যোগে খুশি সালুয়ার প্রশান্ত রাইরাও। এক গাল হেসে তিনি বলেন, “পুরসভা যদি এখন ওয়াই-ফাই চালু করে দেয়, তাহলে আমাদের তো খুবই সুবিধা হবে।”
তথ্য প্রযুক্তির দিক থেকে রাজ্যের অন্য পুরসভার থেকে খড়্গপুর পুরসভা বরাবর একটু এগিয়ে। ১৯৯৯ সালে পুরসভা ভবনে সিসিটিভি চালু করেছিল পুরসভা। ২০০১ সালে চালু হওয়া বায়োমেট্রিক কার্ড অ্যাটেনডেন্স ব্যবস্থা সেই ইতিহাসের মাটি পোক্ত করেছে। পুরসভার দাবি, এবার সেই সাফল্যরই উত্তরসূরি এই ওয়াই-ফাই পরিষেবা। পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, আপাতত পুরসভার ৫০০ বর্গ মিটার এলাকায় প্রথমে ওয়াইফাই চালু করা হবে। এক্ষেত্রে খড়্গপুরের রেলস্টেশনের আগে বোগদা ও আইআইটির আগে খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতাল পর্যন্ত এই ওয়াইফাই নেটওয়ার্ক পাওয়া যাবে। ধীরে ধীরে পুরো শহরে ছড়িয়ে দেওয়া হবে এই পরিষেবা। বিষয়টি দেখভালের দায়িত্বে থাকা পুরসভার কম্পিউটার বিশেষজ্ঞ উদয় চক্রবর্তী বলেন, “যখন পরিষেবা চালু হবে তখন সকলের কথাই ভাবতে হবে। সেরকম হলে আপাতত এক বছরের জন্য বিনামূল্যে পরিষেবা চালু করা যাবে।”
কিন্তু পুর নির্বাচনের আগে পুরসভার এমন উদ্যোগকে অবশ্য ‘বাজার গরম’ হিসেবেই ধরছেন বিরোধীরা। বিজেপির জেলা সভাপতি তুষার মুখোপাধ্যায় বলেন, “মানছি, আধুনিক যুগে ওয়াই ফাই অপরিহার্য। তবে খড়্গপুরে ন্যূনতম পানীয় জলেরই ব্যবস্থা করতে পারেনি এই পুরবোর্ড। এই পরিষেবাগুলো মিটিয়ে তবেই ওয়াই ফাই চালু করলে ভাল হত। আমার ধারণা, পুর নির্বাচনকে সামনে রেখে চমক দিতেই এমন উদ্যোগ।” তবে এমন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাচ্ছেন প্রাক্তন পুরপ্রধান তৃণমূলের জহরলাল পাল। তাঁর কথায়, “দেশের বিভিন্ন উন্নত শহর তথ্য প্রযুক্তি নির্ভর হয়ে উঠছে। সেই হিসেবে আমাদের শহর যাতে আধুনিক হয়ে উঠতে পারে তার জন্য পুরসভার যে কোনও উন্নয়নের কাজে সমর্থন জানাব।” আর বিরোধীদের প্রশ্নের উত্তরে পুরপ্রধান রবিশঙ্কর পাণ্ডের জবাব, “গত বছর পুজোর আগে থেকে এই পরিষেবা চালুর চিন্তা করছিলাম। উন্নয়নের কাজ আমরা ধারাবিকভাবেই করে থাকি। তাই পুর-নির্বাচনের আগে এই পরিষেবা চালু হচ্ছে ভাবলে ভুল হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy