নিষেধ না মেনে রাতে মাইক বাজিয়ে পুলিশের লাঠির বাড়ি খেয়েছিলেন যে তৃণমূল কাউন্সিলর, তিনিই এ বার দলের জেলা নেতাদের একাংশের সঙ্গে পুলিশের যোগসাজশের অভিযোগে সরব হলেন। মেদিনীপুরের তৃণমূল কাউন্সিলর নির্মাল্য চক্রবর্তী ফেসবুকে অভিযোগ করেছেন, দলের নেতাদের পুলিশের ‘অন্যায়ের’ প্রতিবাদটুকু করার সাহস দেখান না। কারণ, তাঁদের একাংশের সঙ্গে পুলিশের দহরম-মহরম রয়েছে। ফেসবুক-এর ওই পোস্ট-এর সূত্রে ফের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা তৃণমূলের অন্তর্দ্বন্দ্ব সামনে এসেছে।
ঘটনা জানাজানি হতে অস্বস্তিতে পড়েছেন তৃণমূলের জেলা স্তরের নেতারা। দলের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সভাপতি দীনেন রায় এ ব্যাপারে মন্তব্য করেননি। তবে জেলা তৃণমূলের এক নেতা বলেছেন, “ওর (নির্মাল্য) বয়স কম। হয়তো মাথা গরম করে কিছু লিখে ফেলেছে! আমরা দেখছি।” পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষের বক্তব্য, “সে দিন প্রচণ্ড জোরে মাইক বাজছিল। অনেকে ফোন করে জানিয়েছিলেন, অসুস্থ বোধ করছেন। পুলিশ পুলিশের কাজই করেছে।”
গত সোমবার রাতে সরস্বতী পুজো উপলক্ষে মেদিনীপুর সদরের গির্জা এলাকায় জলসার আয়োজন করেন ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নির্মাল্য। রাত ১০টার পরেও সেখানে মাইক বাজায় পুলিশ এলাকায় যায়। তখন পুলিশকে বাধা দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। পুলিশ পাল্টা লাঠি চালায়। তখনই মার খান এই তৃণমূল কাউন্সিলর, তাঁর বাবা এবং আরও কয়েকজন নির্মাল্য-অনুগামী।
ওই ঘটনার সূত্র ধরে মঙ্গলবার নিজের ফেসবুক পেজ-এ নির্মাল্য লিখেছেন, ‘প্রতিবাদ করার ভাষা নেই। জেলা নেতাদের ঠিক করতে হবে তাঁরা দলের কর্মীদের নিয়ে চলবেন, না পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে চলবেন। অবাক লাগে পুলিশ যখন নেতাদের পাত্তা দেয় না। অবাক লাগে নেতা যখন পুলিশের অন্যায়ের প্রতিবাদটুকু জোর গলায় করতে পারে না। কে ভুল, কে ঠিক জানি না। কিন্তু অনেক কষ্ট করে, অনেক কর্মীর প্রাণের বিনিময়ে দল সরকারে এসেছে। পুলিশ কি ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে? এর প্রতিবাদ যদি না হয়, সাধারণ মানুষ আমাদের থেকে দূরে সরে যাবে’।
তৃণমূল সূত্রের খবর, দলের অন্দরে জেলা সভাপতি দীনেন রায়, কার্যকরী সভাপতি প্রদ্যোৎ ঘোষদের বিরোধী শিবিরের বলেই পরিচিত নির্মাল্য। জেলা পুলিশের কর্তাদের একাংশের সঙ্গে শাসক দলের কিছু নেতার ঘনিষ্ঠতাও প্রায় কারও অজানা নয়। সেই সূত্র ধরেই কি তাঁর এই তোপ? সরাসরি জবাব না দিয়ে নির্মাল্যর মন্তব্য, “ফেসবুকে কিছু ভুল লিখেছি বলে মনে করি না!”
তৃণমূলের জেলা নেতৃত্বের অবশ্য বক্তব্য, গোটা বিষয়টিতে দল নির্মাল্যর পাশেই রয়েছে। দলের জেলা কার্যকরী সভাপতি প্রদ্যোৎবাবু বলেন, “ঘটনার পরে দলীয় বৈঠকে একটি কমিটি গড়া হয়েছে। কমিটির সদস্যরা আইসি-র সঙ্গে দেখাও করেছেন। এ বার তাঁরা পুলিশ সুপারের সঙ্গে দেখা করবেন।”
জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, “ওই জলসার আসরে হঠাৎ করে লাঠি চালানো হয়নি। পুলিশ আক্রান্ত হয়েছে ওখানে।”
কিন্তু রাজ্যে একাধিক জায়গায় যেখানে শাসক দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে পুলিশের উপরে হামলা করার অভিযোগ উঠেছে, সর্বত্র কি পুলিশ একই রকম তৎপরতা দেখিয়েছে? ওই পুলিশ-কর্তার বক্তব্য, “কোথায়, কী হয়েছে বলতে পারব না। তবে আক্রান্ত হয়ে এখানে ব্যবস্থা নিয়েছে পুলিশ।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy