বছর ঘুরলেই ভোট। সংগঠনকে মজবুত করে পুরভোটেও গেরুয়া ঝড় অব্যাহত রাখতে তাই এখন থেকেই মাঠে নামছে বিজেপি। সামনের বছর পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ছ’টি পুরসভায় ভোটগ্রহণ। তার মধে ঘাটাল মহকুমার পাঁচটি পুরসভাতেই ভোটগ্রহণ করা হবে। পুরসভা পরিচালনায় অস্বচ্ছতার অভিযোগ তুলে বিজেপি পাখির চোখ করছে চন্দ্রকোনা ও রামজীবনপুর পুরসভাকে। বিজেপির পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সভাপতি তুষার মুখোপাধ্যায় বলেন, “আমরা এতদিন জেলা জুড়ে দলীয় অফিস, সংগঠন তৈরিতে জোর দিয়েছিলাম। প্রায় প্রতি এলাকাতেই দলীয় অফিস তৈরি হয়ে গিয়েছে। এবার সংগঠনকে আরও মজবুত করার পাশাপাশি স্কুল, সমবায় থেকে আগামী বছর পুরসভা নিবার্চনের জন্যও দল প্রস্তুত হচ্ছে। আপাতত চন্দ্রকোনা ও রামজীবনপুর পুরসভায় এককভাবে বোর্ড দখল করার লক্ষ্য নিয়ে প্রস্তুতি চলছে।” তুষারবাবুর দাবি, ওই দুই পুরসভা থেকেই তৃণমূলের অনেক নেতা-কর্মী আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। দ্রুত তাঁদের দলে নিয়োগ করা হবে। পাশাপাশি, ওই দুই পুরসভার দুর্নীতি নিয়ে বাড়ি বাড়ি প্রচার করা হবে।
ঘাটাল মহকুমার পাঁচটি পুরসভার মধ্যে এতদিন একমাত্র ক্ষীরপাই পুরসভা বামেদের দখলে ছিল। সম্প্রতি, ওই পুরসভার চেয়ারম্যান-সহ চার জন কাউন্সিলর তৃণমূলে যোগ দেওয়ায় ক্ষীরপাই পুরসভাও তৃণমূলের দখলে চলে যায়। ফলে বর্তমানে মহকুমার পাঁচটি পুরসভাই তৃণমূলের দখলে রয়েছে। বিজেপির অভিযোগ, চন্দ্রকোনা ও রামজীবনপুরে পুরবোর্ডের দুর্নীতি প্রকাশ্যে চলে এসেছে। ফলে পুরসভার একাধিক কাউন্সিলরও ক্ষুব্ধ। রামজীবনপুরে বিজেপির এক কাউন্সিলর গোবিন্দ মুখোপাধ্যায়ের দাবি, পুরসভার দুর্নীতি সম্পর্কিত নানা তথ্য আমাদের কাছে রয়েছে। ওই সমস্ত তথ্য জেলাশাসক-সহ সংশ্লিষ্ট সব মহলেই জানানো হবে।
বছর আড়াই আগে সিপিএমের থেকে চন্দ্রকোনা পুরসভা ছিনিয়ে নেয় তৃণমূল। স্থানীয় দুই অরাজনৈতিক সংগঠন বেকার সমিতি ও নাগরিক সমিতির কাউন্সিলরদের নিয়ে বোর্ড দখল করে তৃণমূল। ওই দুই সমিতির কাউন্সিলরদের নিয়ে তৃণমূলে একটি কমিটিও তৈরি হয়েছে। কিন্তু বর্তমানে ওই কমিটির অস্তিত্ব প্রায় নেই বললেই চলে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বোর্ডেরই এক কাউন্সিলর বলেন, “পুরসভায় জল প্রকল্পের জন্য এক কোটিরও বেশি টাকা পেয়েছিল পুরসভা। ওই প্রকল্পে নানা দুর্নীতির কথা এখন সবারই জানা। এছাড়াও পুর এলাকায় এখন রাস্তা, কমিউনিটি হল, বিদ্যুৎ-সহ নানা উন্নয়নমূলক কাজ হচ্ছে। কিন্তু সে ক্ষেত্রেও দল বেকার সমিতি ও নাগরিক সমিতির মতামতকে গুরুত্ব দিচ্ছে না।” তাঁর অভিযোগ, “চেয়ারম্যান, উপ-পুরপ্রধান ও তাঁদের সমর্থকরা নিজেদের ইচ্ছামতো পুরসভা পরিচলানা করছে। ফলে সাধারণ মানুষ উন্নয়নের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।” কয়েক মাস আগে এই একই অভিযোগে বেকার সমিতির এক কাউন্সিলর জল ও বিদ্যুতের দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করেছেন। ওই কাউন্সিলর তথা বেকার সমিতির নেতা গোবিন্দ দাসের দাবি, আমাকে দায়িত্ব দেওয়া হলেও আমার মতামতকে কোনও গুরুত্ব দেওয়া হত না। তাই আমি পদত্যাগ করেছি। চন্দ্রকোনার বিজেপি নেতা মধু কোলে বলেন, “কয়েকদিন আগে বেকার সমিতির নেতা ওসমান গেনি-সব শতাধিক লোকেরা বিজেপিতে যোগ দিয়েছে। চন্দ্রকোনায় দলের সংগঠন মজবুত। তাই আমরা এবার পুরসভায় দুর্নীতির বিষয়টিকে হাতিয়ার করেই পুরভোটে লড়াইয়ের প্রস্তুতি শুরু করেছি।”
চন্দ্রকোনা পুরসভার কাজে অসন্তুষ্ট চন্দ্রকোনা ২ ব্লকের তৃণমূলের ব্লক সভাপতি অমিতাভ কুশারীও। তাঁর কথায়, “আমিও নানা ঘটনা শুনেছি। দলের জেলা নেতাদের সব জানানো হয়েছে।” রামজীবনপুর পুরসভা নিয়ে পাওয়া অভিযোগও দলের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে বলে চন্দ্রকোনা-১ ব্লক সভাপতি সুকুমার চক্রবর্তী জানান। যদিও সব উড়িয়ে দিয়ে চন্দ্রকোনার চেয়ারম্যান রাম কামিল্যা ও রামজীবনপুর পুরসভার চেয়ারম্যান শিবরাম দাস দু’জনেই বলেন, “সবই অপপ্রচার। পুরসভা সঠিক ভাবেই চলছে।” তাঁদের দাবি, দুর্নীতির প্রশ্ন নেই। উন্নয়নে শহরের বাসিন্দাদের মতামত গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy