Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

পশ্চিমে বদলির দাবিতে পথে স্কুল শিক্ষকরা

বদলির দাবিতে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় এবার পথে নামলেন শিক্ষকেরা! চলতি বছরের শুরুতেই এক বিদ্যালয় থেকে অন্য বিদ্যালয়ে বদলির নির্দেশ জারি করেছিল জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদ। সংসদের জারি করা নির্দেশ মানছে না সংসদই। ফলে বাড়ি থেকে কাউকে ৫০ কিলোমিটার, আবার কাউকে ৭৫ কিলোমিটার দূরেই চাকরি করতে যেতে হচ্ছে।

প্রাথমিক সংসদের সামনে শিক্ষকদের বিক্ষোভ।  নিজস্ব চিত্র।

প্রাথমিক সংসদের সামনে শিক্ষকদের বিক্ষোভ। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ১৯ অগস্ট ২০১৪ ০১:৩৪
Share: Save:

বদলির দাবিতে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় এবার পথে নামলেন শিক্ষকেরা!

চলতি বছরের শুরুতেই এক বিদ্যালয় থেকে অন্য বিদ্যালয়ে বদলির নির্দেশ জারি করেছিল জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদ। সংসদের জারি করা নির্দেশ মানছে না সংসদই। ফলে বাড়ি থেকে কাউকে ৫০ কিলোমিটার, আবার কাউকে ৭৫ কিলোমিটার দূরেই চাকরি করতে যেতে হচ্ছে। কেন নিজেদের জারি করা নির্দেশ নিজেরাই অমান্য করছে সংসদ, কেন শিক্ষকদের বদলি আটকে রেখে দেওয়া হল, এসব প্রশ্ন নিয়েই সোমবার পথে নামলেন কয়েকশ শিক্ষক। বদলির নির্দেশিকা হাতে নিয়ে, বদলির দাবিতে সংসদের সামনে বিক্ষোভও দেখালেন তাঁরা। শিক্ষকদের দাবি, সংসদই বদলির নির্দেশ জারি করেছিল। এখন অকারণে শিক্ষকদের হেনস্থা করতে সেই নির্দেশিকা অমান্য করছে। ভবিষ্যতে এর বিরুদ্ধে আরও জোরদার আন্দোলন গড়ে তোলারও হুমকি দিয়েছেন শিক্ষকেরা। সংসদ সভাপতি নারায়ণ সাঁতরা বলেন, “এ ব্যাপারে রাজ্যকে জানিয়েছি। রাজ্য যা সিদ্ধান্ত নেবে তাই কার্যকরী করব।”

একই স্কুলে যাঁরা কয়েক বছর ধরে চাকরি করছেন তাঁরা বদলির জন্য আবেদন জানিয়েছিলেন। চলতি বছরের জানুয়ারি ও জুন মাসে প্রায় ১ হাজার শিক্ষকের বদলির নির্দেশও জারি করে সংসদ। তারপরই নির্বাচনের দামামা বেজে যাওয়ায় বদলির নির্দেশের উপর স্থগিতাদেশ জারি করে সংসদ। নির্বাচন মিটে গিয়েছে আড়াই মাস হতে চলল। এখনও স্থগিতাদেশ তোলা হয়নি। ফলে বদলির নির্দেশ হাতে থাকা সত্ত্বেও কেউ নতুন স্কুলে কাজে যোগ দিতে পারছেন না। যিনি বদলির নির্দেশ জারি করেছিলেন তৎকালীন সংসদ সভাপতি ছিলেন স্বপন মুর্মু যেমন এ ব্যাপারে কোনও ব্যবস্থা নেননি, আবার সম্প্রতি যোগ দেওয়া নতুন সংসদ সভাপতিও কিছু করছেন না। তাই আন্দোলন শুরু করলেন শিক্ষকেরা।

ডেবরার নরহরিপুর গ্রামের তপোব্রত মাইতি চাকরি পেয়েছিলেন দাঁতনের আঙ্গুয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। তাঁর বদলির আবেদন মেনে তাঁকে ডেবরা পূর্ব চক্রের সাঁইতল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলিও করা হয়েছিল। কিন্তু এখনও তা কার্যকরী করা হচ্ছে না। তপোব্রতবাবুর প্রশ্ন, “আমি বাড়ি থেকে প্রায় ৯০ কিলোমিটার দুরে চাকরি করছি। সব দেখেই সংসদ আমাকে বদলিও করেছিল। কিন্তু এখন বলছে, পুরনো স্কুলেই থাকতে হবে। তাহলে কেন বদলি করা হয়েছিল?” একই অভিযোগ বিজয়কুমার মাল, রামকৃষ্ণ দে-রও। সবংয়ের বাসিন্দা বিজয়বাবু বর্তমানে মেদিনীপুরে থাকেন। তিনি চাকরি পেয়েছিলেন ডেবরার পণ্ডৎ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। তাঁর কথায়, “নদী পেরিয়ে প্রায় ৬০ কিলোমিটার দুরে স্কুলে চাকরি করতে যেতে হয়। তাই বদলি। এখন বলছে হবে না।” রামকৃষ্ণবাবু বলেন, “আমি খড়্গপুরে থাকি। বেলদার হাজিপুর প্রাথমিক স্কুলে চাকরি পেয়েছিলাম। খড়্গপুরের হিজলি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি করেছিল সংসদ। কিন্তু এখন নতুন স্কুলে যোগ দিতে দিচ্ছে না।”

এ বিষয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদ বা স্কুল পরিদর্শক-কেউই শিক্ষকদের খোঁজখবর নিচ্ছে না বলে অভিযোগ। শিক্ষকদের কথায়, “বাধ্য হয়েই রাস্তায় নেমে আন্দোলন করছি। এতেও কাজ না হলে এবার বৃহত্তর আন্দোলনে নামব।” এক্ষেত্রে ওই সমস্ত শিক্ষকদের আরও অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগ, টাকা দিয়ে এই বদলির নির্দেশ পেতে হয়েছিল। এর জন্য ন্যুনতম ৪০-৫০ হাজার টাকা লেগেছিল। ওই সমস্ত শিক্ষকদের কথায়, “আমরা কত টাকা মাইনে পাই বলুন তো? এক সংসদ সভাপতির সময় ৪০-৫০ হাজার টাকা দিয়ে বদলির নির্দেশ পেতে হয়েছিল। আবার যদি এত টাকা দিয়ে বদলি হতে হয়, তা কী সম্ভব!” ফলে এই আন্দোলন যে আরও জোরদার হবে, পরবর্তীকালে বদলির নির্দেশ পেয়েও বদলি হতে না পারা ১ হাজার শিক্ষকই আন্দোলনে নামবেন তাও জানিয়ে রেখেছেন আন্দোলনকারী শিক্ষকেরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE